সংগীতের অনুষঙ্গ (৪) ‘মুরলী বা আঁড় বাঁশি’
বাদ্যযন্ত্র হচ্ছে সংগীতকে আরও সমৃদ্ধ ও মাধুর্যময় করে তোলার অনুষঙ্গ। গঠন ও উপাদানগত দিক থেকে বাদ্যযন্ত্র চার শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। ‘তত’, ‘শুষির’, ‘ঘন’ ও ‘আনদ্ধ’। ততযন্ত্র তারসংযুক্ত। ‘শুষির’ হচ্ছে ফুঁ দিয়ে বাজানো হয় যেসব যন্ত্র। ‘ঘন’ হচ্ছে ধাতু দিয়ে বানানো যন্ত্র এবং চামড়া দিয়ে বানানো যন্ত্র হচ্ছে ‘আনদ্ধ’।
তত ও শুষির স্বয়ংসিদ্ধ যন্ত্র। ‘তত’ ও ‘শুষি’র এককভাবেও বাজানো যায় আবার অন্য যন্ত্রের সঙ্গেও বাজানো যায়। সেতার, সরোদ হচ্ছে স্বয়ংসিদ্ধ যন্ত্র। তানপুরা, মৃদঙ্গ হচ্ছে ‘ঘন’ ও ‘আনদ্ধ’ অনুগতসিদ্ধ যন্ত্র। এগুলো আলাদাভাবে বাজানো যায় না। কেবল গান বা অন্য যন্ত্রের সঙ্গেই বাজানো হয়। বিদগ্ধজনের মতে ‘আনদ্ধ’ বাদ্যযন্ত্র প্রথম আবিষ্কৃত হয়। পরে মানুষ ‘তত’ জাতীয় বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার শুরু করে। ‘শুষির’ ও ‘ঘন’জাতীয় যন্ত্রের উদ্ভব হয়েছে আরও পরে।
সময়ের সাথে সাথে ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রগুলোর অনেকগুলোই হারিয়ে গেছে বা যাচ্ছে। আবার বর্তমানে অনেক নতুন যন্ত্রের আবির্ভাবও ঘটেছে। অতীত ও বর্তমানের সেসব যন্ত্রকে আবার সাধারণভাবে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- লোক, উপজাতীয়, উচ্চাঙ্গ ও আধুনিক। আমরা ধারাবাহিকভাবে কিছু বাদ্যযন্ত্র পরিচিতি পর্বে আজ জানবো ‘মুরলী’ বিষয়ে।
‘মুরলী বা আঁড় বাঁশি’
যে বাঁশির ওপর গাঁট বন্ধ থাকে। মুখরন্ধ্র যা আঁড়ভাবে ধরে ঠোঁট খানিকটা বাঁকিয়ে ফুঁ দিয়ে বাজাতে হয়, তার নাম আঁড়বাঁশি। একে অনেক জায়গায় মুরলীও বলা হয়। আঁড়বাঁশিতে ফুঁ দেয়ার ছিদ্রটি বাঁশির শেষ প্রান্তে না করে প্রায় দুই ইঞ্চি ভেতরে বাঁশির গায়ে করা হয়। বাজানোর সময় এই ছিদ্রটি দুই ঠোঁটের কাছে নিয়ে ফুঁ দিতে হয়। এই বাঁশিতে স্বরস্থানে ছয়টি ছিদ্র থাকে। এটা খাড়া করে ধরা হয় না। অনেকটা মাটির সঙ্গে সমান্তরাল করে মুখ ও দেহের ডানদিকে প্রসারিত করে পাশাপাশি ধরে বাজানো হয়।