সংগীতের অনুষঙ্গ (১) ‘সুরবাহার’

বাদ্যযন্ত্র হচ্ছে সংগীতকে আরও সমৃদ্ধ ও মাধুর্যময় করে তোলার অনুষঙ্গ। গঠন ও উপাদানগত দিক থেকে বাদ্যযন্ত্র চার শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। ‘তত’, ‘শুষির’, ‘ঘন’ ও ‘আনদ্ধ’। ততযন্ত্র তারসংযুক্ত। ‘শুষির’ হচ্ছে ফুঁ দিয়ে বাজানো হয় যেসব যন্ত্র। ‘ঘন’ হচ্ছে ধাতু দিয়ে বানানো যন্ত্র এবং চামড়া দিয়ে বানানো যন্ত্র হচ্ছে ‘আনদ্ধ’।
তত ও শুষির স্বয়ংসিদ্ধ যন্ত্র। ‘তত’ ও ‘শুষি’র এককভাবেও বাজানো যায় আবার অন্য যন্ত্রের সঙ্গেও বাজানো যায়। সেতার, সরোদ হচ্ছে স্বয়ংসিদ্ধ যন্ত্র। তানপুরা, মৃদঙ্গ হচ্ছে ‘ঘন’ ও ‘আনদ্ধ’ অনুগতসিদ্ধ যন্ত্র। এগুলো আলাদাভাবে বাজানো যায় না। কেবল গান বা অন্য যন্ত্রের সঙ্গেই বাজানো হয়। বিদগ্ধজনের মতে ‘আনদ্ধ’ বাদ্যযন্ত্র প্রথম আবিষ্কৃত হয়। পরে মানুষ ‘তত’ জাতীয় বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার শুরু করে। ‘শুষির’ ও ‘ঘন’জাতীয় যন্ত্রের উদ্ভব হয়েছে আরও পরে।
সময়ের সাথে সাথে ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রগুলোর অনেকগুলোই হারিয়ে গেছে বা যাচ্ছে। আবার বর্তমানে অনেক নতুন যন্ত্রের আবির্ভাবও ঘটেছে। অতীত ও বর্তমানের সেসব যন্ত্রকে আবার সাধারণভাবে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- লোক, উপজাতীয়, উচ্চাঙ্গ ও আধুনিক। আমরা ধারাবাহিকভাবে কিছু বাদ্যযন্ত্র পরিচিতি পর্বে আজ জানবো ‘সুরবাহার’ বিষয়ে।
‘সুরবাহার’
‘সুরবাহার’ হচ্ছে সেতারের মতো দেখতে একটি তারযন্ত্র। এটি বেইজ সেতার হিসেবেও পরিচিত। উত্তর ভারতের শাস্ত্রীয় সংগীতে এর ব্যবহার হয়। সেতারের মতো দেখতে হলেও এর স্বর বেশ নিম্ন। সুরবাহার লম্বায় ৫১ ইঞ্চি। শুকনো লাউয়ের তুম্বাটি সুর কম্পনের জন্য ব্যবহৃত হয়। লম্বা ডান্ডিটি সাধারণত সেগুন কাঠের হয়ে থাকে।
সুরবাহার তৈরি হয়েছিল ১৮২৫ সালে। মনে করা হয় যে, ওস্তাদ সাহেবদাদ খানই এ যন্ত্রটি তৈরি করেন। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা যায় যে লক্ষ্মৌর সেতার বাদক ওস্তাদ গোলাম মোহাম্মদ সুরবাহার সৃষ্টি করেন।
লেখক : কেয়া আনজুম
কবি, কলামিস্ট ও সাংবাদিক