‘স্টেভিয়া’ চিনির চেয়েও ৩০০ গুণ মিষ্টি

0
stevia
Array

চিকন পাতার হালকা কচি ডালের গাছ। নাম ‘স্টেভিয়া’। ‘স্টেভিয়া’ এমন একটি গাছ, যাতে রয়েছে স্টেভিডিন নামক এক ধরনের অ্যালকোহল, যা থেকে স্টেভিয়া সুগার বা চিনি তৈরি করা যায়। এটি আখ থেকে তৈরি চিনি অপেক্ষা ৩০০ গুণ বেশি মিষ্টি। ফলে চিনি থেকে তৈরি যেকোন খাদ্যদ্রব্য স্টেভিয়া সুগার থেকেও তৈরি করা যেতে পারে। এতে চিনির চেয়ে অনেক গুণ খরচ কমিয়ে আনা সম্ভব। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো- চিনির চেয়ে ৩০০ গুণ বেশি মিষ্টি হলেও এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। ফলে ডায়াবেটিস রোগীও নিশ্চিন্তে এটা দিয়ে তৈরি খাবার গ্রহণ করতে পারবেন।

স্টেভিয়া দেখতে অনেকটা আমাদের দেশের আলুগাছের মতো। আলুগাছের মতোই এগুলো ১২ থেকে ১৬ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। গাছগুলোর কাণ্ড, পাতা, শেকড় থেকে শুরু করে সবকিছুই প্রায় একই আকৃতির এবং আলুগাছের মতই জড়সড় হয়ে একসঙ্গে বেড়ে ওঠে। আলুগাছের মতো হলেও এ গাছের শেকড়ে আলুজাতীয় কিছুই ধরে না। তবে গাছগুলোতে ফুল এবং ফল ধরে। ফলের বীজ থেকে চারাও উৎপাদন করা যায়।

বহুল আলোচিত এ উদ্ভিদের জন্ম দক্ষিণ আমেরিকায়। দক্ষিণ আমেরিকার প্রায় সব জায়গায় স্টেভিয়া পাওয়া যায়। তবে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, চিলি, ভেনেজুয়েলায় এর ব্যাপক চাষ করা হয়। এশিয়া মহাদেশের মধ্যে জাপানে এর বাণিজ্যিক চাষাবাদ হয়। জাপান থেকে এ গাছ আমদানি করে চীন প্রচুর পরিমাণে স্টেভিয়া সুগার তৈরি করছে।

১৯৯৬ সালে ব্রাজিল থেকে স্টেভিয়া বাংলাদেশে আনা হয়। নিয়ে আসেন তৎকালীন ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মফিজুর রহমান। তিনি এগুলোকে বাণিজ্যিকভাবে চাষের চেষ্টা করেন।আর গবেষণার জন্য স্টেভিয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আনা হয় ১৯৯৮ সালে। নিয়ে আসেন উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের বর্তমান সভাপতি প্রফেসর একেএম রফিউল ইসলাম। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনে এগুলোর পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করা হয়।

শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েই নয়, ব্র্যাকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও অসাধারণ এ উদ্ভিদ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করছে। ইতোমধ্যেই ব্র্যাক এ গাছ থেকে চিনি তৈরি করে তা বাজারজাত করছে বলে জানা গেছে।অনেকেই আবার শখ করে টবের মধ্যে বাড়িতে এর চাষ করছেন।

বীজ এবং ডাল উভয় থেকেই স্টেভিয়ার চারা তৈরি করা যায়। স্টেভিয়ার চারা স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে ওঠে।তবে আমাদের দেশের আবহাওয়ায় এটি বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না। তাই যে জায়গাগুলোতে অধিক পরিমাণ রোদ, বৃষ্টি ও শীত পরে না, সে জায়গাগুলোতে এর চাষ করতে হয়। এছাড়াও দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখার জন্য কাঁচের তৈরি ঘর অর্থাৎ গ্র্রিনহাউজে এর চাষ করতে হয় বলে জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর মনজুর হোসেন। তবে উচ্চতর গবেষণার মাধ্যমে আমাদের দেশের আবহাওয়ায় সম্পূর্ণ উপযোগী করে স্টেভিয়া চাষ করা সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন এবং গুণগতমান ভালো হওয়ায় আমাদের দেশসহ বিশ্ববাজারে এ চিনির রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এ গাছের চারা কেনার আগ্রহ দেখিয়েছে।বিদেশেও এ গাছ থেকে তৈরি চিনির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চায়না এ চিনির রফতানিমূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে প্রতি কেজি ১৫০ ডলার।

স্টেভিয়াকে যদি বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করা হয়, তাহলে শুধু আমাদের চিনির চাহিদাই মেটাবে না, প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। যা দেশের অর্থনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।এছাড়াও এর মাধ্যমে দেশের দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং বেকারত্ব লাঘব করা সম্ভব। তাই এ গাছ নিয়ে উচ্চতর পর্যায়ে আরও বেশি গবেষণা হওয়া দরকার বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

About Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat