সংগীতের অনুষঙ্গ (২) ‘বাঁশি’

বাদ্যযন্ত্র হচ্ছে সংগীতকে আরও সমৃদ্ধ ও মাধুর্যময় করে তোলার অনুষঙ্গ। গঠন ও উপাদানগত দিক থেকে বাদ্যযন্ত্র চার শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। ‘তত’, ‘শুষির’, ‘ঘন’ ও ‘আনদ্ধ’। ততযন্ত্র তারসংযুক্ত। ‘শুষির’ হচ্ছে ফুঁ দিয়ে বাজানো হয় যেসব যন্ত্র। ‘ঘন’ হচ্ছে ধাতু দিয়ে বানানো যন্ত্র এবং চামড়া দিয়ে বানানো যন্ত্র হচ্ছে ‘আনদ্ধ’।
তত ও শুষির স্বয়ংসিদ্ধ যন্ত্র। ‘তত’ ও ‘শুষি’র এককভাবেও বাজানো যায় আবার অন্য যন্ত্রের সঙ্গেও বাজানো যায়। সেতার, সরোদ হচ্ছে স্বয়ংসিদ্ধ যন্ত্র। তানপুরা, মৃদঙ্গ হচ্ছে ‘ঘন’ ও ‘আনদ্ধ’ অনুগতসিদ্ধ যন্ত্র। এগুলো আলাদাভাবে বাজানো যায় না। কেবল গান বা অন্য যন্ত্রের সঙ্গেই বাজানো হয়। বিদগ্ধজনের মতে ‘আনদ্ধ’ বাদ্যযন্ত্র প্রথম আবিষ্কৃত হয়। পরে মানুষ ‘তত’ জাতীয় বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার শুরু করে। ‘শুষির’ ও ‘ঘন’জাতীয় যন্ত্রের উদ্ভব হয়েছে আরও পরে।
সময়ের সাথে সাথে ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রগুলোর অনেকগুলোই হারিয়ে গেছে বা যাচ্ছে। আবার বর্তমানে অনেক নতুন যন্ত্রের আবির্ভাবও ঘটেছে। অতীত ও বর্তমানের সেসব যন্ত্রকে আবার সাধারণভাবে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- লোক, উপজাতীয়, উচ্চাঙ্গ ও আধুনিক। আমরা ধারাবাহিকভাবে কিছু বাদ্যযন্ত্র পরিচিতি পর্বে আজ জানবো ‘বাঁশি’ বিষয়ে।
‘বাঁশি’
বাঁশি এক ধরনের সুষির অর্থাৎ ফুৎকার (ফুঁ) দিয়ে বাজানো যায় এমন বাদ্যযন্ত্র। বাঁশ দিয়ে তৈরি হতো সেই কারণে এর নাম বাঁশি। বাংলায় বাঁশিকে মুরালি, মোহন বাঁশি, বংশী অথবা বাঁশরিও বলা হয়। বাঁশির পাশ্চাত্য সংস্করণের নাম ফ্লুট (flute)।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাঁশি তৈরিতে তরলা বাঁশ ব্যবহার করা হয়। কেউ কেউ শখের বশে স্টিলের, তামার, পিতলের, রূপার এমনকি সোনার পাইপ দিয়েও বাঁশি তৈরি করিয়ে থাকেন। এই প্রাচীন এবং মনহরা বাদ্যযন্ত্রের গায়ে সাতটি (মাঝে মাঝে আটটিও করতে দেখা যায়) ছিদ্র থাকে। যে নল বা পাইপটি দিয়ে বাঁশি তৈরি করা হয়, তার একপাশ সম্পূর্ণ আটকে বায়ুরোধী করে দেয়া হয়।
বাঁশের তৈরি বাঁশিতে গিট বা গিরা একপাশকে বায়ুরোধী করার কাজে ব্যবহার করা হয়। বন্ধ এবং খোলা প্রান্তের মাঝামাঝিতে ছিদ্রগুলো করা হয়। যে ছিদ্রটি বন্ধ প্রান্তের ঠিক কাছাকাছি থাকে, সেটা দিয়ে নিয়মানুযায়ী ফুঁ দিতে হয় এবং বাকি ছ’টি ছিদ্র ডান হাতের মধ্যবর্তী তিনটি এবং বাম হাতের মধ্যবর্তী তিনটি আঙ্গুল দিয়ে কখনো আটকে কখনো ছেড়ে দিয়ে সুর তুলতে হয়। বাঁশি বাজানোর কৌশল রপ্ত করতে হলে গুরুদীক্ষার বিকল্প হয় না।
লেখক : কেয়া আনজুম
কবি, কলামিস্ট ও সাংবাদিক