মানুষের রাজনৈতিক, সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে এই সরকার : আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক, সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিয়ে একটি অবৈধ সরকার অবৈধভাবে দেশ পরিচালনা করছে। কিন্তু আজকের এই প্রেক্ষাপটে, ভোট চুরির প্রকল্প এই যে রেজিম, এটার মধ্যে কারা আছে? এর মধ্যে আছে দুর্নীতিবাজ দুর্বৃত্ত রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা, লুটেরা ব্যবসায়ী, আছে বাংলাদেশ আওয়ামী জাতীয় বিচারক লীগ। এটা নতুন এডিশন। ভোট চুরির প্রকল্পে নতুন সংযোজন আওয়ামী বিচারক লীগ।
বুধবার বিকেলে ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্টের আইনজীবী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিএনপির এক দফা দাবির সমর্থনে ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্ট চট্টগ্রামের উদ্যোগে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির অডিটোরিয়ামে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
ল’ইয়ার্স ফ্রন্টের আহ্বায়ক সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তারের সভাপতিত্বে ও প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট জহুরুল আলমের পরিচালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ইউনাইটেড লইয়ার্স ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য অ্যাডভোকেট এ এস এম বদরুল আনোয়ার, বাংলাদেশ ইসলামিক লইয়ার্স কাউন্সিলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট জসীম উদ্দীন সরকার, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দীন চৌধুরী।
এ সময় আমীর খসরু বলেন, যাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষ আন্দোলন-সংগ্রাম চালাচ্ছে, এর মধ্যে বিচারক লীগ নতুন সংযোজন। আমাদের একটি বিষয় বুঝতে হবে। সেটা হচ্ছে এই বিচারক লীগের ভূমিকা কী? এই যে প্রেক্ষাপটটা সৃষ্টি হয়েছে বিচারবিভাগের যে নতুন অ্যাক্টর, যারা নিজেদের আধা প্রকাশ করতে পারে। আগে প্রকাশ না করে কাজ করেছেন, এখন নিজেদেরকে প্রকাশ করছেন। প্রকাশ করার পেছনে যে বার্তা জাতি পেয়েছে, সেটা হচ্ছে সবচেয়ে বিবেচ্য বিষয়। বাংলাদেশের এই গোষ্ঠী যারা একটি ভোট চুরির প্রকল্পের মধ্যে বাংলাদেশের জনগণের সাংবাধিক, গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে এই প্রকল্পের মাধ্যমে টিকে আছে, তার মধ্যে এই বিচারক লীগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
তিনি বলেন, কোর্টগুলোতে এখন প্রতিদিন বাংলাদেশের নাগরিকদের বিচার মাধ্যমে নাগরিক সুরক্ষা পাওয়ার বদলে নাগরিকরা সুরক্ষা তো পাচ্ছেই না; বরং অন্যায় ও অবিচারের শিকার হচ্ছে। ভোট চুরি প্রকল্পের অংশ হিসেবে বিরোধী দলের লাখ লাখ নেতাকর্মীর প্রতিদিন কোর্টে উপস্থিত থাকতে হচ্ছে। বিচারকের মূল ভূমিকা ও তাদের শপথ হচ্ছে বাংলাদেশের সংবিধান এবং বিচারের সুরক্ষা করবে। তারা স্বাধীন ও নিরপেক্ষ থাকবে। তারা কোনো রাজনীতিতে অংশ নেবে না। এটা কোর্ট ইব কন্ডাক্ট। এটা বিশ্বজুড়ে। রাজনীতিতে তারা ভাবাবেগে প্রভাবিত হয়ে কিংবা নিজের মতামতে প্রভাবিত হয়ে তারা বিচার করতে পারবে না। এটা তো বাংলাদেশে নেই।
তিনি বলেন, সংবিধান বিচারককে দায়িত্ব দিয়েছে সংবিধান রক্ষা করার জন্য। দেশের মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে ভোটাধিকার হচ্ছে অন্যতম অধিকার। ভোট হচ্ছে গণতন্ত্রের বাহক। ভোট ছাড়া কোনো গণতন্ত্র হতে পারে না। ভোটের মাধ্যমে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে, সাংবিধানিক অধিকার সে ভোটের মধ্যে প্রকাশ করে।
তিনি বলেন, এক বিচারক বলছে বিচারকরা শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ। অথচ তার দায়িত্ব বাংলাদেশের আইন রক্ষা করা। কোন দল ক্ষমতায় আসবে এটা কি তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে? তাদের কথাবার্তায় কি প্রকাশ পায় না যে তারা কি চাচ্ছে বাংলাদেশে। বিচারকরা এমন কি উপদেশও দিতে পারে না। এমন উপদেশ দিতে পারে না, যেটা তার নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন ঘটতে পারে। যেটা তার রাজনৈতিক ভাবনার প্রতিফলন ঘটতে পারে। এটা হচ্ছে বায়াস্টনেস। এটা সে দিতে পারে না।
তিনি বলেন, বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে আপনার ভোট কেড়ে নিচ্ছে। নেতা শূন্য, কর্মী শূন্য, একটা নির্বাচন তাদের মাধ্যমে করাতে চাচ্ছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়ে দিচ্ছে। ৪০ লাখ নামের সাথে আরো কয়েক লাখ যুক্ত হচ্ছে। প্রতিদিন এখন হেয়ারিং হচ্ছে। আবার সেই নির্দেশ আসছে পুলিশ ডিপার্টমেন্ট থেকে। পুলিশ ডিপার্টমেন্ট থেকে চিঠিগুলো সহজে গণমাধ্যেমগুলোতে দেখা যাচ্ছে। তারা বিচারবিভাগকে নির্দেশ দিচ্ছে প্রতিদিন যেতে হবে সাক্ষী দিতে। যে পুলিশ অফিসার সাক্ষী দেবে না তার বিরুদ্ধে রিপোর্ট হবে।
আমীর খসরু বলেন, বিচারকদের বলা হয়েছে- দ্রুত বিচার শেষ করে দলকে নেতাশূন্য করে এমন নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করতে, যাতে তারা আবার ক্ষমতা দখল করতে পারে। এই সমস্ত বিচারক, আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর লোকজন, রাজনৈতিক দর্বৃত্ত ও লুটেরা ব্যবসায়ী এদের সবার কাজ কিন্তু একটাই। সেই দায়িত্ব হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণকে বাইরে রেখে আবার ক্ষমতা দখলে আওয়ামী লীগকে সহায়তা করা। এই সমস্ত বিচারক যারা এসব কাজ করছে তারাও কিন্তু ভোট চুরি প্রকল্পের একটা অংশ। যে সমস্ত বিচারক ভোট চুরির প্রকল্পের রাজনীতির সাথে জড়িত একটি দলকে ক্ষমতায় নেয়ার জন্য, আপনারা আপনাদের চেয়ার থেকে অব্যাহতি নিয়ে শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ হয়ে যান। কারো কোনো আপত্তি থাকবে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, শেখ হাসিনা ১৮ সালের নির্বাচনে সারাদেশে ভোট চুরি করেছিল, কিছুদিন আগে সুপ্রিম কোর্টের নির্বাচনেও ভোট চুরি করে নিয়ে গেছে। তারা এখন শপথবদ্ধ রাজনীতি শুরু করেছে সমস্ত বিচার বিভাগকে ধ্বংস করার জন্য। কিন্তু বিচারকের আসনে বসে রাজনীতি করার কোনো সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগ দেশের সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। সর্বশেষ কাঁচা মরিচকেও সিন্ডিকেট করে খেয়ে ফেলেছে। শেখ হাসিনা পারে না এমন কোনো কাজ নেই। দেশের সব টাকা বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। ওবায়দুল কাদেরকে রেখেছে এর পক্ষে সাফাই গাওয়ার জন্য। তিনি আগে বলতেন, খেলা হবে, এখন কিন্তু আর বলে না। এখন আবার নতুন করে বলা শুরু করেছে, তত্ত্বাবধায়কের কথা তো বিদেশীরা বলে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ প্রতিদিন জিয়া পরিবারকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। আমি শেখ হাসিনাকে বলতে চাই, জিয়াউর রহমানের ছবি আপনার বাসায় রেখে সকাল-বিকাল সালাম করবেন। কারণ বাকশাল থেকে আওয়ামী লীগ হয়েছিল এই জিয়াউর রহমানের হাত ধরে। শেখ হাসিনা বিদেশে ছিলেন, জিয়াউর রহমানের দয়ায় দেশে আসতে পেরেছিলেন। শেখ হাসিনা আসলে অকৃতজ্ঞ। জিয়াউর রহমান সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করেছিলেন। তাই সরকার সেটাকে ধ্বংস করতে চায়। দেশের আজকের পরিস্থিতির জন্য বিচারপতি খাইরুল হক দায়ী। তখন সবাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে বলেছে কিন্তু শেখ হাসিনা এই বিধান বাতিল করে দিয়েছে। উচ্চ আদালতকে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক মঞ্চ বানিয়েছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, দেশ এখন সংকটকাল পার করছে। সরকারের পদত্যাগের দাবিতে সমগ্র জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সরকার বিচার বিভাগকে শেষ করে দিয়েছে। বিচারপতি এসকে সিনহাকে জোর করে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। সরকার যা চায় বর্তমান বিচারকরা তাই রায় দিচ্ছেন। তারেক রহমান ও ডা: জোবাইদা রহমানের রায়ও এ ধরনের বিচারপতিদের কাছ থেকে এসেছে। আগামীতে এদেরকে বর্জন করা হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট জসীম উদ্দীন সরকার বলেন, দেশে আইনের শাসন আজ ভূলুণ্ঠিত। বর্তমান অবৈধ সরকার জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। সারা বাংলাদেশকে কারাগারে পরিণত করা হয়েছে। তারা ১৮ সালের নির্বাচনে ভোট ডাকাতি করেছে। তারা এখন মৃত ব্যক্তির জানাজাও পড়তে দেয় না। তাদেরকে আর বিশ্বাস করা যায় না। শেখ হাসিনার অধীনে আমরা কোনো নির্বাচনে যাব না। সংসদ ভেঙে দিতে হবে। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এডহক কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ খান, লইয়ার্স ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিক, সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহমুদ, ফ্রন্টের যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট মো: আলী, অ্যাডভোকেট শামসুল হক, অ্যাডভোকেট মো: শাহাদাত, লইয়ার্স কাউন্সিলের যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট একেএম রেজাউল করিম, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এনামুল হক, লইয়ার্স ফ্রন্টের সদস্য অ্যাডভোকেট রফিক আহমেদ, অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার সারোয়ার, অ্যাডভোকেট মুফিজুল হক ভূঁইয়া, অ্যাডভোকেট হাসান আলী চৌধুরী, সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট এইচ এম জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট নেজাম উদ্দিন, অ্যাডভোকেট ইফতেখার হোসেন চৌধুরী মহসিন, অ্যাডভোকেট হায়দার মো: সোলায়মান প্রমুখ।