জৈন্তাপুর ও জাফলং হতে পারে আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র

0
Array

সিলেটের গোয়াইন ঘাট উপজেলার একটি ইউনিয়ন জাফলং। দেশের উওর-পূর্বাঞ্চল খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। যেখানে রয়েছে দুর্গম পাহাড়, ছোট-বড় পাহাড় টিলা, পিয়াইন নদী, খালবিল, সমতল ভূমি পরিবেষ্টিত অফুরান্ত খনিজসম্পদে ভরপুর। অথচ এখানকার খনিজসম্পদ সারা দেশেই ব্যবহার করা হয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি অপরূপ প্রকৃতিকন্যা জাফলং।

৩৬০ আউলিয়ার দেশ পূণ্যভূমি সিলেট। হজরত শাহ জালাল (র.) ও হজরত শাহ পরাণের (র.) স্মৃতিবিজড়িত সিলেটের জাফলং উওর-পূর্বে অবস্থিত। জাফলংয়ে রয়েছে চা বাগান, দুর্গম পাহাড়, রাস্তার দু’পাশে অসংখ্য লোকালয় সারি-সারি আম, জাম, কাঁঠাল, পান সুপারির বাগান। উঁচু-নিচু টিলা মেটে রঙের পাহাড় আর পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ পানি। এখানে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের যেন মিতালীর হাতছানি দিয়ে ডাকছে। পিয়াইন নদীই যেনো ছুটে আসা পর্যটকদের বন্ধু। তাই বন্ধুত্বের হাতছানি দিতেই  অনেকের মন কেড়ে নেয়।

এখানে দর্শনীয় স্থানের মধ্যে চা বাগান, জাফলংয়ের খাসিয়া রাণী নিরলা তেংসংয়ের জমিদার বাড়ি, বল্লাঘাট পিকনিক সেন্টার, প্রাকৃতিকভাবে গড়েওঠা পাহাড়, ভারত থেকে নেমে আসা পিয়াইন নদী, বন বিভাগের গ্রিন পার্ক, সামাজিক বনায়ণ, পাথর কোয়ারি, বনবিট উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া চা’বাগানে কাজ করে জীবিকানির্বাহ করছে সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর হাজারও শ্রমিক। চা’শ্রমিকদের পদচারণায় মুখারিত হয়ে ওঠে জাফলংয়ের চা বাগানগুলো।

ভারতের বিহার থেকে আসা সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর লোকজন বস্তিস্থাপন করে জাফলংয়ের চা’বাগানে। সাঁওতালরা চা’শ্রমিকের কাজ করে। যারা প্রতিদিন আপনমনে কচি চা পাতা তুলে এবং আপন সুরে গান গেয়ে দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের আর্কষণ করে এছাড়াও জাফলংয়ে রয়েছে নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের অপূর্ব দৃশ্য। পিয়াইন নদীসংলগ্ন ভারতের ঝুলন্ত সেতু। সবুজ রঙের স্বচ্ছ পানি নদীর দু’তীরে পর্যটকদের অবাধ বিচরণ। পিয়াইন নদীতে সাঁতার কাটা।

জৈন্তাপুরে রয়েছে পর্যটকদের জন্য দর্শনীয় স্থান। মোঘল রাজারাণীদের ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি, জৈন্তাপুরে জৈন্তাস্বরী রাজবাড়িতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যের মোঘলদের অনেক পুরার্কীর্তি রয়েছে। এই জৈন্তাশ্বরী রাজবাড়িতে বিচার কাজ করতেন মোঘলরা। জৈন্তার অদূরে রয়েছে শ্রীপুর পাথর কোয়ারি। এখানে লক্ষাধিক শ্রমিক পাথর তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করে। এই পাথর কোয়ারির আহরিত পাথর সারা দেশে সরবরাহ করা হয়। তাছাড়াও রয়েছে খাসিয়াদের ঘনবসতি লোকালয়, পান সুপারির বাগান। রয়েছে শ্রীপুর পিকনিক সেন্টার, চা-বাগান। এক কথায় এখানে অনেক আকর্ষণীয় দৃশ্য উপভোগ করা যায়।

জৈন্তার অদূরে রয়েছে লালাখাল। লালাখাল যাওয়ার পথে দেখা যায় সারি সারি বনবিট, অসংখ্য টিলা আর মেটে রঙের পাহাড়, রাস্তার দু’পাশ দিয়ে হাঁটতে খুব ভালো লাগবে। বনবিটের সামাজিক বনায়ন রয়েছে। এই বনবিটকে কেন্দ্র করে এখানে একটি পার্ক তৈরি  করা হলে এটি একটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হবে বলে পর্যটকদের ধারণা। জৈন্তার অদূরে সারিঘাট, রাস্তার মধ্যে একটি ঘর রয়েছে। ঘরটি ব্রিটিশ আমলের তৈরি। এটিকে পাস্থশালা বলা হয়। মোঘল রাজারাণীরা দূর-দূরান্তে যাওয়ার পথে এই পাস্থশালায় বিশ্রাম নিতেন বলে অনেকের ধারণা। এই পান্থশালা সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের দু’পাশ দিয়ে গাড়ি চলাচলের দৃশ্য পর্যটকদের আরও আর্কষণ করে।

লালাখাল যাওয়ার পথে পড়ে নাজিমগড় বোটস্টেশন, সারিঘাট নদীর তীরবর্তী এই বোটস্টেশন, এখান থেকে বোট নিয়ে সরাসরি লালাখাল  চলে যাওয়া যায়। আবার ডৌডিক সড়ক দিয়ে লালাখাল পৌঁছানো যায়। শ্রীপুর জৈন্তা থেকে একটু সামনে জাফলং যাওয়ার পথে, শ্রীপুর পিকনিক সেন্টারে দর্শণীয় অনেক কিছু। প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক লোকজনের সমাগম ঘটে। শ্রীপুর থেকে জাফলং যাওয়ার পথে পড়ে জৈন্তা হিল রিসোর্ট, মণিপুরী হস্তশিল্প হোটেল, রেস্তোরাঁ, মণিপুরীদের হাতে গড়া কারুকাজমণ্ডিত তৈজসপত্র, প্রসাধনীসামগ্রী।

দূর-দূরান্তের পর্যটকরা এখানে এসে কেনাকাটা করে। জৈন্তাহিল রিসোর্টে পর্যটকদের থাকা খাওয়ার সুব্যবস্থাও রয়েছে। জৈন্তা নদীতে সহস্রাধিক শ্রমিকরা কাজ করে শ্রমিকদের কাজের দৃশ্য দেখে পর্যটকরা আনন্দ পায়। এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার পাশাপাশি দর্শনীয় স্থানগুলোর যথাযথ তত্ত্বাবধায়ন করা হলে এটিকে দেশের আর্কষণীয় পর্যটনকেন্দ্র করা সম্ভব। এই পর্যটনকেন্দ্র থেকে সরকারের মোটা অংকের রাজস্ব আয় করা সম্ভব হবে বলে স্থানীয়দের ধারণা।

About Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat