পৃথিবীতে অনিদ্য সুন্দর যে জিনিসগুলো রয়েছে তার মধ্যে ফুল হচ্ছে অন্যতম। বৈচিত্র্যে ভরা এই ফুলের রয়েছে আবার নানা প্রজাতি। চেরি ফুলকে আবার সাকুরা নামেও ডাকা হয়। সারা বিশ্বেও এই ফুলের অনেক কদর কারণ, এটা দেখতে এতটাই সুন্দর যে কেউ বিমোহিত না হয়ে পারে না।

জাপানি চেরি ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Prunus serrulata । জাপানিরা আদর করে ডাকেন ‘সাকুরা’ বলে। চেরি ফুল ফুটলে জাপানে ‘হানামি’ উৎসব পালন করা হয়। টোকিওতে চেরি ফুলের বাহার দেখার সবচেয়ে জনপ্রিয় জায়গা হলো ইউনো পার্ক। প্রতি বসন্তে হাজার হাজার মানুষ চেরি ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে এখানে আসেন।

গাছ প্রজাতিভেদে গুল্ম থেকে শুরু করে আট মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। কোনো কোনো জাতের গাছ পাতা ও ডালপালায় বেশ ঝোপালো ধরনের। পাতা ৮ থেকে ১২ সেন্টিমিটার লম্বা, আগা আয়তাকার বা তীক্ষ। ফল দুই সেন্টিমিটার, সাধারণত লালচে বা কালো।

টক ও মিষ্টি চেরির গাছ প্রায় একই রকম। পার্থক্য শুধু স্বাদে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ৫০টির বেশি জাতের টক চেরির চাষ হতো। এপ্রিকট, চেরি ও নাশপাতির ফুল দেখতে প্রায় একই রকম। কিন্তু ফুল দেখে ফলের জাত আলাদা করা কঠিন। সারা পৃথিবীতে চেরি ফুল ও ফলের এতই রকমফের যে একটির সঙ্গে অন্যটির পার্থক্য অতি সূক্ষ্ম।

শরীরতত্ত্ববিদ ডা. গ্লায়ন হোওয়াটসন বলেন, ‘আগে আমরা কষ্টকর ব্যায়ামের পর টক চেরির জুস পান করতাম,যাতে শক্তি ফিরে পাই, তবে বর্তমানের পরীক্ষা দ্বারা দেখা যাচ্ছে, এর আরেকটি গুণও রয়েছে, তাহলো, চেরি জুস ঘুম সহজ করে দেয়, বিশেষ করে যাদের অনিদ্রা রয়েছে বা কাজের চাপে ঠিকমতো ঘুম হয় না।

গুচ্ছবদ্ধ ফুলগুলো সাধারণত গোলাপি, সাদা ও লাল রঙের হয়। পাপড়ি ও ফুলের গড়ন বিচিত্র। ফুল-ফল মিলিয়ে সারা পৃথিবীতে ৪৫০ জাতের চেরি পাওয়া যায়। পরাগরেণুতে মধু থাকায় ফুল ফুটলেই মৌমাছিরা ভিড় জমায়। ফোটা ফুল অনেকদিন পর্যন্ত টিকে থাকে। ফুল ঝরে পড়ার পর নতুন পাতায় সবুজ রূপ ধারণ করে।

মার্চ মাসের শেষ থেকে এপ্রিলের শুরু জাপানে চেরি ফুল ফোটার মৌসুম। এর মধ্যে দিয়ে জাপানে নতুন বছরের শুভসূচনা ঘটে। অল্প কয়েকদিন স্থায়ী হলেও বেশিরভাগ জাপানিজের কাছে বছরের সবচেয়ে সুন্দর সময় হলো চেরি ফুল ফোটার মৌসুম।

বর্তমানে চেরি ফুল সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে, যেমন- ইউরোপ, পশ্চিম সাইবেরিয়া, ইন্ডিয়া, চীন, কোরিয়া, জাপান, কানাডা এবং আমেরিকাতে। চেরি উৎসব এখন জাপান ছাড়াও বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে পালিত হয়। চীন, তাইওয়ান, কোরিয়া, ফিলিপাইন, ম্যাকাও, জর্জিয়া, ফিনল্যান্ড ও আমেরিকা।

About Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat