পর্নো তারকা থেকে যুদ্ধ, কিছুই বাদ গেল না মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে

0
116134_debate
Array

পর্নো তারকা থেকে যুদ্ধ, অর্থনীতি থেকে পররাষ্ট্রনীতি, দেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যু, নিজেদের বয়স সহ ইত্যকার ইস্যুতে ধুন্ধমার এক বিতর্কে অংশ নিলেন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ৫ই নভেম্বর অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান দলের এই দুই প্রার্থীর মধ্যে বাংলাদেশ স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল ৭টায় মুখোমুখি এই বিতর্ক হয়।

জর্জিয়ার আটলান্টায় সিএনএনের স্টুডিওতে প্রবেশ করে তারা করমর্দন করেননি। পোডিয়ামে উঠার পর তাদের এই আচরণ নিয়ে ব্যাপক বিশ্লেষণ হচ্ছে। বলা হচ্ছে, এর মধ্য দিয়ে তাদের ভিতর যে বিরোধ কি পর্যায়ে আছে তা ফুটে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র ৪ মাসের সামান্য বেশি সময় হাতে আছে। এ সময়ে তাদের এই বিতর্কের দিকে দৃষ্টি ছিল পুরো যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্ববাসীর। ৯০ মিনিট বা দেড় ঘন্টার বিতর্কে ট্রাম্প দাবি করেন, ২০২০ সালে মিনিয়াপোলিসে যখন কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যার ঘটনায় অসন্তোষ দেখা দেয়, তখন তিনি ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছিলেন। ট্রাম্প বলেন, এ ঘটনায় যখন পোর্টল্যান্ডকে তছনছ করা হলো, অনেক শহরকে তছনছ করা হলো, তখন আপনি গিয়েছিলেন মিনেসোটা, মিনিয়াপোলিসে। শহরজুড়ে তারা আগুন নিয়ে খেলা করছিল।

যদি আমি ন্যাশনাল গার্ডদের মোতায়েন না করতাম,তাহলে শহরটি ধ্বংস হয়ে যেতো। তবে এনডিটিভি বলছে, ট্রাম্পের এই দাবি মিথ্যা। ট্রাম্প নন, ২০২০ সালের অসন্তোষের সময় মিনেসোটায় ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছিলেন মিনেসোটার ডেমোক্রেটিক গভর্নর টিম ওয়ালজ। ট্রাম্প প্রকাশ্যে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের হুমকি দেয়ার কমপক্ষে ৭ ঘন্টা আগে এই গার্ডদের প্রথম সক্রিয় করা হয়েছিল। ওই সময় ওয়ালজের অফিস সিএনএনকে বলেছিল, মিনিয়াপোলিস ও সেইন্ট পলের কর্মকর্তাদের অনুরোধে গভর্নর সক্রিয় করেছিলেন গার্ডদের।

ওদিকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, মিলিয়নিয়ারদেরকে ট্যাক্সের ‘ফেয়ার শেয়ার’ নিশ্চিত করাবেন। বর্তমানে যারা এক লাখ ৭০ হাজার ডলারের নিচে আয় করেন, তারা সবাই আয়ের শতকরা ৬ ভাগ ট্যাক্স দেন। মিলিয়নিয়াররা দেন শতকরা এক ভাগ। ফলে যাদের আয় চার লাখ ডলারের নিচে তাদের কারো সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে না। তাই ধনশালীরা যাতে শতকরা এক ভাগের চেয়ে বেশি দিয়ে জীবনমানের উন্নতি ঘটান। সেই অনুরোধ করবো। এক পর্যায়ে বয়সের প্রসঙ্গ তোলেন ট্রাম্প। যদি তিনি নির্বাচিত হন তাহলে দ্বিতীয় মেয়াদের শেষে তার বয়স হবে ৮২ বছর। এ প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, আমি এ বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছি। বাইডেনের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, তিনিও এমন বয়সের পরীক্ষা দিন- তা চাই। তবে প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার বয়স নিয়ে কটাক্ষের জবাবে বলেন, আমার ক্যারিয়ারের অর্ধেক সময় সবচেয়ে ‘ইয়াঙ্গেস্ট’ থাকার জন্য সমালোচিত হয়েছি। এখন সমালোচিত হচ্ছি সবচেয়ে বেশি বুড়িয়ে যাওয়ার জন্য। এ সময় তিনি ট্রাম্পের উদ্দেশে বলেন, তিনি আমার চেয়ে ৩ বছরের ছোট। কিন্তু তিনি খুব কমই যোগ্য। তিনি আমাকে হোয়াইট হাউসে ছেড়ে যাওয়ার পর কি অর্জন করেছি, তার সবটার দিকে তাকান। অন্যদিকে বাইডেনের বিরুদ্ধে কড়া আক্রমণ হাঁকান ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘বাইডেন ইন পেইড বাই চায়না’। তিনি একজন মাঞ্চুরিয়ান প্রার্থী। ওদিকে ট্রাম্পকে আক্রমণ করে বাইডেন বলেন, মধ্যবিত্তদের ট্যাক্স কখনো বাড়াইনি আমি। তাদের কাছ থেকে সহায়তা নেয়ার কথা বলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে যেকোনো প্রেসিডেন্টের তুলনায় আপনার সময়ে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি রয়েছে। তিনি ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ প্রেসিডেন্ট। বিশ্বে আমরা সবচেয়ে সম্মানীত দেশ। আমাদেরকে দুর্বল করার কথা কেউ ভাবে না। আমাকে সবচেয়ে খারাপ প্রেসিডেন্ট বানানোর ধারণায় প্রেসিডেন্সিয়াল ইতিহাসবেত্তা ১৫৯ জন ভোট দিয়েছেন। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তিনিই (ট্রাম্প) ছিলেন সবচেয়ে খারাপ প্রেসিডেন্ট। বাইডেনকে আক্রমণ করে ট্রাম্প বলেন, আমার সারাজীবনে রাজনীতিকদের সঙ্গে কাজ করেছি। এই ব্যক্তির (বাইডেন) মতো কাউকে কখনো দেখিনি। তিনি আপনার চোখের দিকে তাকিয়ে মিথ্যা কথা বলতে পারে। বাইডেন বলেন, তার (ট্রাম্প) পরিবেশ সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই। তিনি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে এনেছেন। জবাবে ট্রাম্প বলেন, প্যারিস চুক্তির ফলে আমাদের ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার মূল্য দিতে হয়েছে। তবে এর জন্য চীন, রাশিয়া ও ভারতকে কোনো মূল্য দিতে হয়নি। এই চুক্তির কারণে আমাদেরকে চরম মূল্য দিতে হচ্ছিল বলে তা থেকে বেরিয়ে এসেছি। তবে গাজায় হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধ শেষে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সমর্থন করবেন কিনা? সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর দেননি ট্রাম্প। পক্ষান্তরে তিনি বলেন, আমাকে এটা দেখতে হবে। চার্লটসভিলে হামলা সম্পর্কে ট্রাম্পকে আক্রমণ করে বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কোন প্রেসিডেন্ট বলবেন স্বস্তিকা চিহ্ন ধারণকারী নাৎসীরা ভাল মানুষ! এই ব্যক্তির যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্পর্কে ধারণাই নেই। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তার প্রেসিডেন্সি সবচেয়ে খারাপ ছিল। তিনি চার্লটসভিলে কাহিনী বানিয়েছেন। তবে এ সময়ের সবচেয়ে আলোচিত যে মামলা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সে সম্পর্কে ট্রাম্প বলেন, কোনো পর্নো তারকার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করিনি আমি। এ মামলার রায় ও বিচারকের বিষয়ে আপিল করবো। একজন ভয়ানক বিচারক পেয়েছি আমরা। প্রসিকিউটররা সবাই ডেমোক্রেট। আমার সুনাম নষ্ট করার জন্য তিনি (বাইডেন) এসব করেছেন। কিন্তু জনগণ সত্যটা দেখেছে। জরিফে আমার পক্ষে জনমত বাড়ছেই। মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার দান করছেন তারা। এক পর্যায়ে তিনি জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেনের প্রসঙ্গ তোলেন। বলেন, আপনার ছেলে তো অভিযুক্ত। দায়িত্ব থাকা অবস্থায় যা যা করেছেন তার সবটার জন্য তিনি অভিযুক্ত হবেন। তিনি একজন ক্রিমিনাল। কিন্তু আমি অন্যায় করিনি। আমাদের জালিয়াতির একটি সিস্টেম আছে। এ সময় তাকে পাল্টা প্রশ্ন করেন বাইডেন। বলেন, যারা ক্যাপিটল হিলে হামলা করেছিল তাদের বিষয়ে কি নিন্দা জানাবেন আপনি! বাইডেন বলেন, এই ব্যক্তি (ট্রাম্প) অভিযুক্ত। ক্যাপিটল হিলের ঘটনা বন্ধে তিনি কিছুই করেননি। ট্রাম্প বলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট থাকলে ইউক্রেন যুদ্ধ কখনোই হতো না। বাইডেন বলেন, কংগ্রেসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় একটি সীমান্ত চুক্তি করতে কঠোর পরিশ্রম করেছে তার প্রশাসন। তিনি বলেন, ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখন তিনি মায়েদের কাছ থেকে বাচ্চাদের আলাদা করেছেন। তাদেরকে খাঁচায় ভরেছেন। তাদের পরিবারগুলোকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছেন। সেই অবস্থার একটি সমাধান বের করেছি আমরা।

About Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat