‘খুব একটা অংশগ্রহণমূলক’ হয়নি সংসদ নির্বাচন : সিইসি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘খুব একটা অংশগ্রহণমূলক’ হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, একটা বড় রাজনৈতিক অংশ শুধু নির্বাচন বর্জনই নয়, তারা এটিকে প্রতিরোধ করারও ঘোষণা দিয়েছিল। নির্বাচন আয়োজনে আমাদের পথটি কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। সেখানে কণ্টক ছিল, শঙ্কা ছিল। তারপরও সবার সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমে নির্বাচন উঠিয়ে আনা হয়েছে। সাময়িকভাবে হলেও জাতি স্বস্তিবোধ করছে, আমরাও স্বস্তিবোধ করছি।
বৃহস্পতিবার ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও সফলভাবে সম্পন্ন করায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিইসি এসব কথা বলেন। নির্বাচন ভবনের মিলনায়তনে এ ধন্যবাদ জ্ঞাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম। এতে চার নির্বাচন কমিশনার বিশেষ অতিথি ছিলেন।
জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ায় জাতি সংকট থেকে রেহাই পেয়েছে জানিয়ে সিইসি বলেন, অনেকেই সুনাম করেছেন, প্রশংসা করেছেন আবার অনেকে অপবাদ বা বদনাম করেছেন। দুটোকেই আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে যেটি মনে করি, নির্বাচনটা সুসম্পন্ন হয়েছে। মহাসুসম্পন্ন বলব না, সুসম্পন্ন হয়েছে। একটা চলমান সংকট যেটাতে শঙ্কা, উদ্বেগ ছিল, সেটা থেকে জাতি উঠে এসেছে। কিন্তু এটা স্থায়ী সমাধান বলে আমার কাছে মনে হচ্ছে না।
তিনি বলেন, রাজনীতিবিদদের যদি আমাদের প্রতি আস্থা না থাকে, আস্থা যদি চরমমাত্রায় চলে যায়, তাহলে নির্বাচন কমিশনেরও গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। কিন্তু রাজনৈতিক সংকট নিরসন আমাদের কাজ নয়।
টিআইবির প্রতিবেদনের কথা সরাসরি উল্লেখ না করে সিইসি বলেন, আজও (বৃহস্পতিবার) যখন পত্রিকায় পড়ছিলাম একটি সংস্থা থেকে বলছে যে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার অজুহাত নিয়ে নির্বাচন কমিশন সরকারের একটা গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে। আমি এখনো জানি না সরকারের সঙ্গে আসলে কোনো গোপন এজেন্ডা আছে কিনা? আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি আমার সঙ্গে হয়নি। কারও সঙ্গে হয়েছে কিনা আমি জানি না। কোথায় গোপন এজেন্ডাটা হলো? কোন গোপন এজেন্ডাটা আমরা বাস্তবায়ন করেছি? সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার অজুহাত কিভাবে নিলাম? তাহলে কি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ছিল না? প্রশ্ন রাখেন তিনি।
সিইসি আরও বলেন, শুধু আমরাই নই, সরকারের পক্ষ থেকে সবাই নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। নির্বাচন জনগণের কাছে প্রশংসিত হয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি। তিনি বলেন, আজকে নির্বাচনটা যেভাবে উঠিয়ে আনা হয়েছে, এটাকে যদি অব্যাহত রাখা যায়, অথবা নির্বাচন ব্যবস্থায় যদি আরও সংস্কার আনা যায়, যেখানে আরও বেশি স্বচ্ছতা, আরও বেশি আস্থা, আরও বেশি নির্ভরযোগ্যতা দৃশ্যমানভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে। তাহলে হয়তো আগামী নির্বাচনগুলো জনগণের কাছে আরও বেশি গ্রহণযোগ্য হতে পারে।
নির্বাচনে বিদেশি রাষ্ট্র ও সংস্থার প্রভাব টেনে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, বিদেশি অনেক রাষ্ট্র ও সংস্থা আমাদের নির্বাচনের সঙ্গে অনেক বেশি সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছিল। তারাও নির্বাচন বিষয়ে বিভিন্ন গাইডলাইন দিচ্ছিলেন। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হতে হবে এই ধরনের একটা ইচ্ছা ব্যক্ত করছিলেন। আমরা ত্রিমুখী চাপে নির্বাচন সম্পন্ন করতে আরও বেশি উদ্বুদ্ধ ও সচেষ্ট হয়েছি।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান বলেন, সরকার প্রধান থেকে শুরু করে প্রশাসনের সর্ব পর্যায় একত্রে কাজ করার যে সাফল্য তার সবই আমরা অর্জন করতে পেরেছি। সবাই মিলে ইমানের সঙ্গে বিবেকের সঙ্গে কাজ করেছি।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, বড় বড় রাজনৈতিক দল অংশ নিলে এ নির্বাচন আরও গ্রহণযোগ্য হতো। সব দল নির্বাচনে না আসায় আমাদের করণীয় কিছু নেই, সে ব্যর্থতার দায় আমাদের নয়। সে ব্যর্থতার দায় যখন আমাদের ওপর চাপানো হয় তখন আমাদের খুব খারাপই লাগে।
নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেন, আমরা বড় গলায় বলতে পারব সবার ভোটাধিকার নিশ্চিত করেছি।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেন, কিছু জায়গায় আমাদের খুব ভালো কো-অর্ডিনেশন ছিল। চমৎকার কো-অর্ডিনেশন হয়েছে। অল্প কিছু জায়গায় ছিল না বলে আমি মনে করি।