রাজনৈতিক মাঠে বড় দুই দলের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে জনমনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে
সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে বিএনপি। গত কয়েক মাস ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে আসছে দেশের অন্যতম প্রধান এই রাজনৈতিক দলটি। সরকার পতনের এই আন্দোলনে সফল হতে বিএনপির টার্গেট অক্টোবর মাস। বিভিন্ন সময়ই দলীয় কর্মসূচি থেকে সে কথাই জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ নেতারা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বৃহৎ কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। বলা হচ্ছে, এই মহাসমাবেশ কর্মসূচি থেকেই সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনে যাবে তারা।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের এই আন্দোলনে বিএনপি তার কিছু শরিক দলকেও পাশে পাচ্ছে। বিএনপির পাশাপাশি নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে সরব রয়েছে তারাও। সবার লক্ষ্য, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে বিদায় করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন।
কারা থাকছে বিএনপির সঙ্গে
২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে বিএনপির শরিকরাও প্রস্তুতি শুরু করেছে। জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘ঢাকার মহাসমাবেশে সারা দেশ থেকে লাখ লাখ মানুষ অংশ নেবেন। এ কর্মসূচি আমরা শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করতে চাই। সরকারের কাছে মহাসমাবেশের বার্তা হবে—অবিলম্বে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক সংকট উত্তোরণে তারা একটা কার্যকরী রাজনৈতিক উদ্যোগ নেবে। তারপরও সরকারের যদি বোধোদয় না হয়, পরের দিন থেকে লাখ লাখ মানুষ রাজপথে নেমে আসবে। স্বীকৃত গণতান্ত্রিক আন্দোলনের যে ফর্মগুলো রয়েছে যেখানে অবস্থান, বিক্ষোভ, ঘেরাও, অবরোধ এমনকি হরতাল পর্যন্ত আছে, পর্যায়ক্রমে সেগুলো আমরা অ্যাপ্লাই করব। তবে আমরা কখন কোনটাতে যাব, সেটা নির্ভর করবে সরকার ও প্রশাসনের আচরণের ওপর। আমাদের লক্ষ্য, শেষ পর্যন্ত পুরো আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণ রাখা। আমরা সরকারের উসকানি, সহিংসতা এড়িয়ে কর্মসূচি করতে চাই, যেন লাখ লাখ মানুষ এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।’
কী ঘটতে যাচ্ছে ২৮ অক্টোবর?
বিএনপির চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলনের সঙ্গে কঠোর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রঐক্যও। ছাত্র জোটের চূড়ান্ত লক্ষ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক আন্দোলন গড়ে তোলা। এর অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলায় ছাত্র সমাবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের, যদিও দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, সরকারবিরোধী চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীও সম্পৃক্ত হতে পারে। গত ৩০ ডিসেম্বর আন্দোলন শুরুর পর প্রথম দুটি কর্মসূচি যুগপৎভাবে পালন করলেও পরবর্তী সময়ে একক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে দলটি। এদিকে একদফার আন্দোলনে জামায়াত সম্পৃক্ত হলে দলটির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরও তখন পৃথক কর্মসূচি নিয়ে ছাত্রঐক্যের সঙ্গে যুগপৎ ধারায় আন্দোলনে সম্পৃক্ত হতে পারে বলে দাবি ওই সূত্রের।
বিএনপি ও যুগপৎ শরিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আন্দোলনের এ পর্যায়ে ঘেরাও ছাড়াও বিক্ষোভ, অবরোধ এমনকি হরতালের কর্মসূচিও আসতে পারে। একেবারে শেষ পর্যায়ে দেশজুড়ে চলতে পারে লাগাতার অবরোধের কর্মসূচি। এর মধ্যে থাকতে পারে রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধ। নেতাকর্মীরা যে যেখানে থাকবেন, সেখান থেকে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবেন।
দু-একদিনের মধ্যে যুগপৎ আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ জোট গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বৈঠকের পর স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মহাযাত্রার কর্মসূচি চূড়ান্ত করবে বিএনপি।
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওই মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে সরকার পতনের মহাযাত্রা শুরু হবে—দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত যা চলমান থাকবে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ফিরে যাব না। অনেক বাধা আসবে, বিপত্তি আসবে। সব বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ছুটে যেতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আশা করছি সরকারের বোধদয় হবে, তারা পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত করবে, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবে, দেশকে সংকটের হাত থেকে উদ্ধার করবে। এটা আমরাই শুধু চাই না, আন্তর্জাতিক বিশ্বও চায় যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তারা সবাই চায়। যদি সরকারের বোধোদয় না হয়, তাহলে আমাদের কর্মসূচি চলবে।’
এদিকে, বিএনপির এ মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে রাজপথে কঠোর অবস্থানে থাকবে আওয়ামী লীগ। আন্দোলনের নামে যেকোনো বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্যের কড়া জবাব দিতে সাংগঠনিক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন।
রাজনৈতিক মাঠে বড় দুই দলের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে জনমনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সবার মনে প্রশ্ন জাগছে আসলেই কী ঘটতে যাচ্ছে ২৮ অক্টোবর?