জনগণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না,ঢাকার বাইরে বিএনপির কালো পতাকা গণমিছিল
সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবিতে ‘কালো পতাকা’ নিয়ে রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লায় গণমিছিল করেছে বিএনপি। গতকাল রাজশাহী মহানগরীর ঐতিহাসিক ভূবনমোহন মাঠে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুল বলেন, জনগণ তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া আর কোনো নির্বাচনে যাবে না। কারণ এই সরকার জনগণ থেকে ছিটকে পড়েছে। সিলেট রেজিস্ট্রারী মাঠে শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, বর্তমান সরকার দেশের গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। তাই এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশে কোন দিনও অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং হারানো গণতন্ত্র ফিরে আসা অসম্ভব। এজন্য আমরা বলেছি, অবিলম্বে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, নিশীরাতের অবৈধ সংসদ এবং আজ্ঞাবহ কমিশন ভেঙে দিতে হবে। এছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে বিদেশে পাচার করেছে। অথচ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে সামান্য টাকার অজুহাত দেখিয়ে ফরমায়েশি রায় দিয়ে কারাগারে রেখেছে। গতকাল শনিবার বিকেলে রাজশাহী মহানগরীর ঐতিহাসিক ভূবনমোহন পার্কে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজশাহী মহানগর বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের আয়োজনে পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, এই সরকার গত কয়েকদিন হলো ব্রিকস সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার জন্য জনগণের কোটি কোটি টাকা খরচ করে আফ্রিকা গেছেন। সেখানে বাংলাদেশকে সদস্য দেশ হিসেবে তিনি তালিকা ভুক্ত করবেন। কিন্তু সেখানকার নেতারা বাংলাদেশকে পাত্তাই দেয়নি বলে উল্লেখ করেন তিনি। প্রধান অতিথি বলেন, এই সরকার কথায় কথায় বলে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শেখ মুজিবুর রহমান হতার বিচারকার্য বাধাগ্রস্থ করেন ইন্ডেমটিটি বিল পাস করে ছিলেন। এটা পুরোটাই মিথ্যা। কারণ সে সময়ে যখন এই বিল পাস করা হয় তখন জিয়াউর রহমান রাজনীতিতে ছিলেন না। সে সময়ে তিনি আর্মিতে ছিলেন।
বুলু বলেন, কুইক রেন্টালের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা এই সরকার লোপাট করেছে। অথচ জনগণ যাতে বিদ্যুৎ নিয়ে কোন কথা বলতে না পারে তারজন্য বর্তমান সরকার প্রধান তিনিও এই কালো আইন পাস করে বিদ্যুৎ সেক্টরকে দুর্নীতির আখড়াতে পরিণত করেছেন। সামনে নির্বাচন। এই নির্বাচনকে বাধাগ্রস্থ করতে দরবেশ বাবাকে এই সরকার বাইশ হাজার কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিয়েছে। অথচ জনগণ ও সাধারণ ব্যবসায়ী অর্থের অভাবে ব্যবসা করতে পারছে না।
প্রধান অতিথি বলেন, দেশে এখন নিরব দুর্ভিক্ষ চলছে। এর ফলে জনগণ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয় করতে হিমশিম খাচ্ছে। প্রতিদিন নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই সরকারে খাদ্যমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রী যোগসাজেশে করে বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করছে। সেখান থেকে তারা অবৈধ অর্থ গ্রহণ করছে। কিন্তু এভাবে আর চলতে দেয়া হবে না। সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন চলছে। এই আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই এই অবৈধ সরকারকে বিতারতি কওে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে উল্লেখ করে সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে রাজপথে থাকার আহ্বান জানান তিনি।
সমাবেশ ও গণমিছিলে রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশার সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক, রাজশাহী মহানগর বিএনপি সাবেক সভাপতি ও রাসিক সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত ও এ.এইচ.এম ওবাইদুর রহমান চন্দন প্রমুখ।
সিলেট ব্যুরো জানায়, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, বর্তমান সরকার দেশের গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। তাই এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশে কোন দিনও অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং হারানো গণতন্ত্র ফিরে আসা অসম্ভব। এজন্য আমরা বলেছি, অবিলম্বে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, নিশীরাতের অবৈধ সংসদ এবং আজ্ঞাবহ কমিশন ভেঙে দিতে হবে। এছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। এসব দাবি আদায় করে সরকারকে বিদায় করতে যা যা করা প্রয়োজন দলের প্রতিটি নেতাকর্মীদের তাই করতে হবে। গতকাল বিকেলে নগরীর রেজিস্ট্রারী মাঠে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে সিলেট মহানগর বিএনপি আয়োজিত কালো পতাকা গণমিছিল পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এসময় তিনি আরো বলেন, তারা এত বড় নির্লজ্জ, সারা পৃথিবীতেও তাদের মত আর নির্লজ্জ নেই। ক্ষমতায় টিকে থাকতে এবং লুটপাট করার জন্য তা সব করতে পারে। পদত্যাগের কথা শুনলে ভীত হয়ে যায়, চেয়ারের মায়া ছাড়তে পারে না। দেশবাসী জেগে উঠেছে, পদত্যাগ করতেই হবে, এর বিকল্প নেই। আমাদের দাবি একটাই, একটি নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। আর নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে জনগণের সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাবে। আর দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হলে সিলেটবাসীর প্রিয় নেতা এম. ইলিয়াস আলীসহ গুম হওয়া দলের সকল নেতাকর্মীদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। তাই দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য সর্বস্থরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন নিশ্চিত করতে রাজপথে নামতে হবে।
মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীর সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন, নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড. জয়নুল আবেদীন বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল তবে বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ের সংবিধানে নির্বাচন হবে না। সারা দুনিয়ার মানুষ খায়রুল হকের রায় মানে না। বিএনপি নির্বাচনে যাবে তবে শেখ হাসিনার অধীনে কোন নির্বাচন হবে না। গতকাল শনিবার বরিশাল জেলা ও মহানগর বিএনপি দলীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর বিএনপি আয়োজিত গণ মিছিল পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জয়নুল আবেদীন।
মহানগর বিএনপির আহবায়ক মো. মনিরুজ্জামান খান ফারুকের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির জাহিদের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, মাহবুবুল হক নান্নু, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ প্রমুখ।
স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কালো পতাকা গণমিছিলে নেতাকর্মীদের ঢল নেমেছে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক। গতকাল শনিবার নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে থেকে গণমিছিল কর্মসূচি শুরু করে মহানগর বিএনপি।
স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা থেকে জানান, কুমিল্লায় বিএনপির কালো পতাকা গণমিছিল কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে কুমিল্লা মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসহযোগি সংগঠনপর নগরীর কান্দিরপাড়ে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে গণমিছিল শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি যুগ্নমহাসচিব হাবিব উন-নবী খান সোহেল।
এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা বিভাগ) মো. মোস্তাক মিয়া। মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক ভিপি জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও মহানগর সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব হাজী জসিম উদ্দিন প্রমুখ।
গাজীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, ১ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষে গতকাল বিকেলে কালো পতাকা মিছিল করেছে গাজীপুর মহানগর বিএনপি। রাজবাড়ি রোডস্থ দলীয় কার্যালয় প্রাঙ্গনে মিছিলপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
মহানগর বিএনপির সভাপতি মো. শওকত হোসেন সরকারের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, বেনজীর আহম্মেদ টিটো, কেন্দ্রীয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার, কাজী সাইয়্যেদুল আলম বাবুল, ডাক্তার মাজহারুল আলম।