চিকিৎসকের নেতৃত্বে ১৬ বছর ধরে মেডিক্যালের প্রশ্ন ফাঁস, কোটি কোটি টাকার লেনদেন

0
-4ae405e19a0264918c6b7565c393eed0
Array

বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের আড়ালে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চিকিৎসকসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সংস্থাটি বলছে, চক্রটি ২০০১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত শত শত মেডিক্যাল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর কাছে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করেছে। এর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা আয় করেছে; যা দেশে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে চক্রের সদস্যরা। এমনকি অনেকে বিদেশেও অর্থপাচার করেছে।

গ্রেফতাররা হলো, ডা. ময়েজ উদ্দিন আহমেদ প্রধান (৫০), ডা. সোহেলী জামান (৪০), ডা. মোহাম্মদ আবু রায়হান, ডা. জেডএম সালেহীন শোভন (৪৮), ডা. মো. জোবায়দুর রহমান জনি (৩৮), ডা. জিল্লুর হাসান রনি (৩৭), ডা. ইমরুল কায়েস হিমেল (৩২), জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া মুক্তার (৬৮), রওশন আলী হিমু (৪৫), আখতারুজ্জামান তুষার (৪৩), জহির উদ্দিন আহমেদ বাপ্পি (৪৫) ও আব্দুল কুদ্দুস সরকার (৬৩)।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ১৯টি মোবাইল ফোন, চারটি ল্যাপটপ, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, ব্যাংক কার্ড, ভর্তির এডমিট কার্ড, নগদ ২ লাখ ১১ হাজার টাকা এবং থাইল্যান্ডের মুদ্রা ১৫ হাজার ১০০ বাথ উদ্ধার করা হয়েছে।

রবিবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদর দফতরের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী।

তিনি বলেন, পাবলিক পরীক্ষা এলেই প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই চক্র নানা কায়দায় প্রশ্নপত্র ফাঁস করে, যা শিক্ষা খাতের ক্যানসার হিসেবে বিবেচিত। এসব প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রকে নির্মূল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে নিয়মিত প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী বিশাল এক সিন্ডিকেটের খোঁজ পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ।

এ ঘটনায় মিরপুর মডেল থানায় ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’ এর একটি মামলা তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায়। চক্রটির অন্তত ৮০ সদস্য প্রায় ১৬ বছর ধরে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে ফাঁস করা প্রশ্নপত্র দিয়ে মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ভর্তি করিয়ে শত কোটি টাকা আয় করেছে।

এই ঘটনায় জড়িতদের ঢাকা, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালিয়ে ১২ জনকে গ্রেফতার করে সিআইডির সাইবার টিম। গ্রেফতার ১২ জনের মধ্যে ৭ জনই চিকিৎসক। এদের প্রায় সবাই বিভিন্ন মেডিক্যাল ভর্তি কোচিং সেন্টার, নয়তো প্রাইভেট পড়ানোর আড়ালে প্রশ্নপত্রফাঁস করতো। গ্রেফতারদের মধ্যে আট জন তাদের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। যাতে শতাধিক শিক্ষার্থীর নাম উঠে এসেছে, যারা প্রশ্নপত্র পেয়ে মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছে। ইতোমেধ্যে অনেকে পাস করে ডাক্তারও হয়ে গেছে। এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে।

গ্রেফতার আসামিদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের দেওয়া বিপুল পরিমাণ ব্যাংকের চেক এবং অ্যাডমিট কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। যেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এছাড়াও চক্রের অন্যতম হোতা জসীম উদ্দিন ভূঁইয়ার কাছ থেকে একটি গোপন ডায়েরি উদ্ধার করা হয়েছে, যেখানে সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা তার চক্রের অন্যান্য সদস্যদের নাম রয়েছে। সেসব সদস্যদের ধরতে সিআইডির অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তদন্তে উঠে এসেছে, ২০০১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১৬ বছরে অন্তত ১০ বার এই চক্রটি মেডিক্যালের প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে। এদের ব্যাংক একাউন্টে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে, যেগুলো মানিলন্ডারিং মামলায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সিআইডির হাতে গ্রেফতার ডা. ময়েজ উদ্দিন প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড। মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে ‘ফেইম’ নামের একটি কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে মেডিক্যাল প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়ান। গত ২০ বছর এভাবে শতশত শিক্ষার্থীকে ভর্তি করিয়েছেন। ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা ময়েজ বর্তমানে জামায়াতপন্থী চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে দুটি মানিলন্ডারিং মামলা রয়েছে।

এছাড়া বর্তমানে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ও সাবেক ছাত্রদলের রাজনীতি করা গ্রেফতার অন্য চিকিৎসকরা হলো, সালেহীন শোভন, জোবাইদুর রহমান, জিল্লুর হাসান রনি ও জহির উদ্দিন আহমেদ বাপ্পী। তারা সবাই ২০০৫ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত হয়। এরপর বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের আড়ালে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে আসছিল।

About Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat