সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জামায়াতের
‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ নামক নতুন আইন পাশ করার উদ্যোগের সমালোচনা করে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ নামে নতুন আইনের একটি খসড়া মন্ত্রীসভার বৈঠকে অনুমোদন দিয়ে বলা হয়েছে, আগামী সেপ্টেম্বর মাসে জাতীয় সংসদে ওই আইনটি বিল আকারে উত্থাপন করে তা পাশ করা হবে। এ সম্পর্কে আমাদের বক্তব্য হল সরকারের এ উদ্যোগ আইওয়াশ ছাড়া আর কিছুই নয়।
এটিএম মা’ছুম বলেন, জাতীয়, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠন, মানবাধিকার সংস্থা ও সংবাদপত্রের সাথে সম্পৃক্তদের পক্ষ থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি বাতিল করে দেওয়ার জোরালো দাবি ছিল। জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন ধারা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করা হয় এবং মত প্রকাশের প্রতিবন্ধক হিসেবে চিহ্নিত করে তা বাতিলের আহ্বান জানানো হয়। সরকারের উচিত ছিল দেশি ও আন্তর্জাতিক মহলের মতামতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে মত প্রকাশের পথে অন্তরায় সৃষ্টিকারী আইনটিকে বাতিল করা। কিন্তু তা না করে ওই আইনের কিছু ধারা সংশোধন করে নতুন নাম দিয়ে তা পাশ করাতে চাচ্ছে সরকার।
তিনি বলেন, সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যাদেরকে গ্রেপ্তার করেছে তাদেরকে মুক্তি না দিয়ে নতুন আইন করার উদ্যোগের মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে যে, এটি কোনো সংশোধিত আইন নয়। বরং এই আইনটি নিবর্তনমূলক আইন হিসেবে নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে মানুষের মধ্যে চাপ তৈরি হয়। এ জন্য তারা নাম পরিবর্তন করছেন। সাইবার নিরাপত্তা আইন হলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আর থাকছে না।’ তার কথা থেকেই বুঝা যায় যে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি নতুন অবয়বে জুলুম-নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হবে। জনগণকে ফাঁকি দিয়ে ভিন্ন নামে আইনটি বহাল রাখার উদ্দেশ্যেই ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ নামে নতুন আইন পাশ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধিকাংশ ধারা সাইবার নিরাপত্তা আইনে থাকছে। নতুন আইন পাশ করার পরে মানুষের ওপর জুলুমম-নির্যাতন আদৌ বন্ধ হবে না বলেই মনে করেন দেশের সচেতন মহল।
জামায়াতের শীর্ষ এই বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সালে প্রণীত ও বহুল সমালোচিত ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন’ বদলিয়ে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ পাশ করা হয়েছিল। এখন আবার আগামী ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের আগে মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ পাশ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মত সাইবার নিরাপত্তা আইনেও ৬০টি ধারাই থাকছে। এতে ৫টি ধারা জামিনযোগ্য রাখা হয়েছে। আইনের নাম পাল্টানো হলেও আইনের কাঠামোগত কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।
জামায়াতের শীর্ষ এই নেতা আরও বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৮ ও ২৯ ধারা বাতিলের দাবি শুরু থেকেই ছিল। ঐ আইনের ২৮ ধারা প্রস্তাবিত আইনে বহাল রেখে জামিনযোগ্য করার প্রস্তাব করা হয়েছে। কেউ যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতি বা মূল্যবোধে আঘাত করে তাহলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। প্রস্তাবিত ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ পাশ করা থেকে বিরত থাকার এবং ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’টি অবিলম্বে বাতিল করার জন্য আমরা সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।