অ্যাডভেঞ্চার চাইলে ঘুরে আসতে পারেন সব ভূতের বাড়ি!
ভূত আছে কি নেই! এই বিতর্ক ছিলো, আছে এবং থাকবে। ভূতে বিশ্বাস থাকুক বা না থাকুক, ভূতের গল্প শুনে ভয় আমরা সবাই কম-বেশি পাই। ভূতের বাড়ি কি কেবল কল্পনাতেই আছে? একদম নয়! পৃথিবীজুড়ে আছে সত্যিকারের ভয়ংকর সব ভূতের বাড়ি, আর সেগুলোর অন্তরালে আছে ভয়ানক গা ছমছমে সব কাহিনী। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এমন সব স্থাপনা আছে যা নিয়ে শুধু ছোটদের কেন, ভয় রয়েছে বড়দেরও। আসুন, এমন কিছু ভৌতিক স্থাপনা সম্পর্কে জানি।
টাওয়ার অব লন্ডন
১৫৩৬ সালে হেনরি ১৭ বা সেভেনটিনের সময়ে এই টাওয়ারে এক নারীর শিরশ্ছেদ করা হয়। পরে শোনা যায়, ওই নারীর আত্মাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা যেতো। মাঝে মাঝে তার খণ্ডিত মাথা হাতে নিয়ে হাঁটতেও দেখা যায়। টাওয়ার গ্রিন ও টাওয়ার চাপেল রয়েলে হাঁটার কথা বলেছেন অনেকে। বিখ্যাত ভৌতিক স্থান হিসেবে পরিচিত এই টাওয়ার অব লন্ডন।
প্রাচীন রাম হোটেল, ইংল্যান্ড
পরিবেশই ভয়ানক ইংল্যান্ডের এই রাম হোটেলের। এখানে সবসময় কেমন যেন স্যাঁতস্যাতে পরিবেশ বিরাজ করে। কেমন যেন কদাকার সেই গন্ধ। অভিযোগ আছে, এই হোটেলটি একটি কবরের ওপর তৈরি করা হয়েছে। সবার ধারণা, এ কারণেই এই হোটেলটির পরিবেশ এমন ভুতুড়ে।
প্যারিসের কাটাকম্ব
মরা মাথার খুলি রাখার স্থান প্যারিসের কাটাকম্ব। ফ্রান্সের প্যারিসে ১৭০০ সালের মাঝামাঝি মাটির নিচে এটি নির্মাণ করা হয়। কমপক্ষে ৩০ বছর আগে যারা মারা গেছেন, তাদের খুলি এখানে সংরক্ষণ করা হয়। কথিত আছে, রাতেরবেলা এখানকার খুলি, হাড়গুলো নিজে নিজেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াত করে।
স্ট্যানলি হোটেল
কলোরাডোর এস্টেস পার্কে অবস্থিত স্ট্যানলি হোটেল। উপন্যাসিক স্ট্যানলি কিং এই হোটেলে এসে ভৌতিক অভিজ্ঞতার মুখে পড়েন। ১১৭ নম্বর রুমে থাকাকালে তিনি শুনতে পেতেন ভূতের ছেলেরা পাশের রুমে খেলা করছে! অনেক আত্মা ওখানে ঘুরে বেড়াতো। যখন অতিথি আসতো তারা দেখতেন পিয়ানোর কীগুলো নিজে নিজেই নড়ছে, সুর তুলছে। পরে জানলেন, এই সব অভিজ্ঞতা যাদের হয় তাদের জীবন নাকি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সেই অভিজ্ঞতা থেকেই পরে The Shining উপন্যাসটি লেখেন স্ট্যানলি। উপন্যাসে কাল্পনিক ওভারলুক হোটেলের বর্ণনাটিতে তাকে অনুপ্রাণিত করে এই স্ট্যানলি হোটেল। স্টিফেন কিংয়ের উপন্যাস অবলম্বনে পরে নির্মাণ হয় ভৌতিক চলচ্চিত্র।
এডিনবার্গ দুর্গ, স্কটল্যান্ড
স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ দুর্গে যারা গেছেন, ভূত দেখার অভিজ্ঞতা তাদের অনেকেরই হয়েছে। কথিত আছে, ফরাসি যুদ্ধের সময় দুর্গে বহু বন্দীকে হত্যা করা হয়। ফলে দুর্গটি অতৃপ্ত আত্মায় ভরে যায়। স্থানীয়দের মতে, এই ভৌতিক দুর্গে বহুবার ভূত দেখা গেছে। দুর্গটিতে ঘুরতে আসা অনেক পর্যটকও বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
মন্টে ক্রিস্টো, অস্ট্রেলিয়া
অষ্ট্রেলিয়ার জুনে শহরে অবস্থিত এই মন্টে ক্রিস্টো ভৌতিক বাড়িটি। ১৮৮৫ সালে ক্রিস্টোফার উইলিয়াম ক্রাওলি এটি নির্মাণ করেন। বলা হয়, স্বামীর মৃত্যুর পর মিসেস ক্রাওলি ২৩ বছরে মাত্র দু’বার বাড়ির বাইরে বের হন। তার মৃত্যুর পর আজও নাকি এই বাড়িতে তাকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়।
বাড়িটির ভেতরে ঘুরে এসে অনেকেই বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তারা বলেন, বাড়িটির ভেতরে ঢুকলে মনে হয় কে যেন সামনে কিংবা পেছনে দাঁড়িয়ে আছে, আবার হুট করে মিলিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে মালকিন ক্রাওলির ঘরে গেলে পুরোটা সময় অস্বস্তি হয়। পরে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসলে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়।
উডচেস্টার ম্যানশন
ভৌতিক বাড়ি হিসেবে খ্যাত ইংল্যান্ডের গ্লস্টারশায়ারে অবস্থিত উডচেস্টার ম্যানশন। প্রায় দুশ’ বছর আগে এর নির্মাণ কাজ শুরু হলেও তা অসমাপ্ত থাকে। পরিত্যক্ত ভবনটির ভেতর থেকে অদ্ভুত শব্দ শোনা যায়। নির্মাণ কাজের শব্দের মতো শব্দ শুনেছেন অনেকে। কেউ বা আবার রোমান সৈন্য এমনকি তরুণীদেরও দেখেছেন। গুজব আছে, যারাই এটি নির্মাণের উদ্দেশ্যে আসেন কোনো না কোনোভাবে তাদের মৃত্যু হয়।
স্ক্রিমিং টানেল, নায়াগ্রা ফলস
কুখ্যাত জায়গার মধ্যে অন্যতম নায়াগ্রা জলপ্রপাতের এই স্ক্রিমিং টানেল। স্থানীয়রা বলে, এই টানেলের ভেতরে ম্যাচের কাঠি দিয়ে আগুন জ্বালালে সেটি নাকি আগুনের গোলা হয়ে টানেলের বাইরে চলে যায়। আর সেসময় একটি ছোট্ট মেয়ের চীৎকারের আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়। খুবই ভয়ানক সেই আর্তচিৎকার। সেখানে যেতে সবসময়ই পর্যটকদের নিষেধ করেন স্থানীয়রা।
ডোমিনিকান হিল, ফিলিপাইনস
কথিত আছে, যুদ্ধের সময় এখানে আহতদের চিকিৎসা দেয়া হতো। কেউ মারা গেলে তাকে সেখানেই কবর দেয়া হতো। একসময় জায়গাটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। রাত হলে নাকি এখনো অদ্ভুত আওয়াজ শোনেন স্থানীয়রা। কখনো গুলি, কখনো বা মানুষের আর্তনাদ। আতংকে এই পথ মাড়ায় না কেউ। পর্যটকরা দূর থেকে দেখেই চলে যান।
বোরলে রেকটরি
বোরলে রেকটরি পৃথিবীর সবচেয়ে ভৌতিক জায়গা হিসেবে পরিচিত। এটি যুক্তরাজ্যের বোরলে গ্রামে অবস্থিত, ১৮৬৩ সালে নির্মাণ করা হয়। এখানে ‘নুন’ নামের এক ব্যক্তিকে হাঁটতে দেখা যায় যাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল। পুরোনো একটি গল্প প্রচলিত আছে যে, নুন লোকটি ‘বোরলে’ সম্প্রদায়ের এক সন্ন্যাসিনীর প্রেমে পড়েন। দুজনে চেয়েছিলেন পালিয়ে যেতে, কিন্তু যেতে পারলেন না। ধরা পরার পর সন্ন্যাসিনীকে খুন করা হয় আর নুনকে পুড়িয়ে মারা হয় এই ভবনে। এরপর থেকে এই বাড়ি ভৌতিক বাড়ি হিসেবে পরিচিত।
দি স্কিরিড ইন
কুখ্যাত ভৌতিক স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ইংল্যান্ডের ওয়ালেস স্টেটের Llanfihangel Crucorney তে অবস্থিত Skirrid Mountain Inn. লোকগল্পমতে ৯০০ বছর আগে এখানে ১৮০ জনেরও বেশি লোককে সিঁড়ির বিমের সাথে ফাঁসি দেয়া হয়। তখন ভবনের প্রথম তলা কোর্ট রুম হিসেবে ব্যবহার হতো। এই ঘটনার পরে হঠাৎ একদিন দেখতে পায় একটা গ্লাস উড়ছে। লোকজন দেখতে পেতো জানালায় তারা তাদের ঘাড়ে ফাঁস বানাচ্ছে। ঠাণ্ডা কক্ষগুলো হঠাৎ করে গরম হয়ে উঠতো। এভাবে তাপমাত্রা বাড়তে থাকতো আস্তে আস্তে। এরপর দালানটির মালিক ফেনি প্রাইস চিন্তা করলেন এখানে অনেক সক্রিয় আত্মা রয়েছে, পরে অন্যান্য লোকজন এটাকে বিপদজনক স্থান হিসেবে উল্লেখ করেন।
বেল ফার্ম
১৮১৭ থেকে ১৮২১ সালের মধ্যে একজন মহিলা বেল পরিবারে প্রবেশ করে। তার নাম হচ্ছে কেট। কিছুদিন পর সে ‘জন বেল’ এবং তার পরিবারের ওপর খুব অত্যাচার চালায়। একপর্যায়ে বেল স্নায়ুতন্ত্রের ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় এবং মারা যায়। তার মৃত্যুশয্যার পাশে একটি কালো তরলের শিশি পাওয়া যায়। শিশিটা পরীক্ষা করে দেখা যায়, এটি ছিল বিষের শিশি। অর্থাৎ বেলকে হত্যা করা হয়েছিল। এখনো সেই ভবনের আশপাশে বেলের আত্মা আছে বলে মনে করেন অনেকে, কেননা অনেকেই চাক্ষুস দেখেছে।
ভাঙ্গার দুর্গ, ইন্ডিয়া
ভারতের রাজস্থানের পাশে অবস্থিত এই ভাঙ্গার দুর্গ। স্থানীয়দের কাছে শোনা যায়, জায়গাটির ওপর নাকি অভিশাপ আছে। কথিত আছে, এক ঋষি এই জায়গারটির ওপর অভিশাপ দেন যে, যাদের এখানে মৃত্যু হবে তাদের আত্মা চিরকাল এখানেই বন্দি থাকবে। রহস্যময় দুর্গটিতে কোনো পর্যটককে সন্ধ্যার পর থাকতে দেয়া হয় না। বলা হয়, সন্ধ্যার পরে এখানে যারাই থেকেছেন আজ পর্যন্ত তারা ফিরে আসেননি। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এখানকার কোনো বাড়ির ছাদ নেই।