আমার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা থাকে…

0
image
Array

ছোট্ট ক্লো’কে কোলে নিয়ে ওয়াল্ট ভাবছেন, এ কার মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন তিনি! এ কী তার ছাড়া অন্য কারো সন্তান হতে পারে?

কোনও কোনও মানুষের স্বপ্ন এমন আশ্চর্যভাবে সত্যি হয়ে যায় যে, তখন ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করা ছাড়া যেনো উপায় থাকে না। জার্মানির ওয়াল্ট এবং অ্যানি ম্যানিসের কাহিনি তেমনই এক আশ্চর্য স্বপ্নপূরণের কাহিনি।

ওয়াল্ট যখন কিশোর, তখন থেকেই এক বাচ্চা মেয়ের স্বপ্ন তার মনে ঘুরতো। মেয়েটিকে সে পেতে চাইতো নিজের কন্যারূপে। তার সেই মানসকন্যার মাথায় লম্বা ঘন কালো চুল, কালো ডাগর চোখ, আর গায়ের চামড়া জলপাই ফলের মতো মসৃণ। ওয়াল্ট মনে মনে ভাবতো, এই মেয়ের নাম সে রাখবে ক্লো।

কিছু দিন পরে তাদেরই পাড়ায় থাকতে এলো অ্যানি। দু’জনের চার চোখের মিলন হতে দু’জনেই বুঝে গেলো, তারা একে অন্যের জন্যেই এসেছে এই পৃথিবীতে। আলাপ-পরিচয় একটু গভীর হতেই তারা নিশ্চিত হলো যে, তাদের অনুমান মিথ্যে নয়, ঈশ্বর যেনো তাদের দু’জনকে পরস্পরের জন্যেই গড়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। কেননা, অ্যানিও যে এক মাথা কালো চুল আর গভীর কালো চোখের অধিকারিণী এক মেয়ের মা হতে চায়। আরও আশ্চর্যের কথা, অ্যানিও তার মেয়ের নাম রাখতে চায় ক্লো।

ওয়াল্ট-অ্যানির সম্পর্ক ভালোবাসায় রূপান্তরিত হতে বেশি সময় নেয়নি। দীর্ঘদিন প্রণয়পর্ব চলার পরে তারা বিবাহবদ্ধনে আবদ্ধ হন। একটা সময়ে তারা সন্তানগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। সেই স্বপ্নে দেখা মেয়ের জন্য শুরু হয় অপেক্ষা।  কিন্তু যে ঈশ্বরের ওপর অগাধ আস্থা রেখে নিজেদের দাম্পত্য জীবনে প্রবেশ করেছিলেন ওয়াল্ট-অ্যানি, সেই ঈশ্বরের মনে বোধহয় অন্য পরিকল্পনা ছিল দু’জনের জীবন সম্পর্কে।

বছরের পর বছর কেটে গেলো, কিন্তু সন্তান এলো না অ্যানির কোলে। দীর্ঘ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও দেখা মিললো না সেই বহু প্রতীক্ষিত ক্লো’র। হতাশ ওয়াল্ট আর অ্যানি আস্থা হারালেন ভগবানের প্রতি। অ্যানি প্রস্তাব দিলেন, যদি নিজেরা সন্তানের জনক-জননী না হতে পারি, তাহলে কোনও বাচ্চাকে দত্তক নিতে বাধা কোথায়? রাজি হলেন না ওয়াল্ট। শেষে অনেক পিড়াপিড়ির পরে মত পাওয়া গেলো ওয়াল্টের। কিন্তু সন্তান দত্তক নেয়ার পথেও অনেক বাধা। হাজারটা আইনি জটিলতা, পছন্দমতো সন্তানের দুর্লভতা। বাধ্য হয়ে খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিলেন ওয়াল্ট-অ্যানি। বিজ্ঞাপনের উত্তরে একটি ইমেইল এসে পৌঁছলো অ্যানির কাছে।

ইমেইলে এক মহিলা জানিয়েছেন, তিনি গর্ভবতী এবং নিজের আসন্ন সন্তানকে তিনি তুলে দিতে চান ওয়াল্ট-অ্যানির কোলে। রাজি হলেন দু’জনে। ওয়াল্ট-অ্যানির সঙ্গে একদিন দেখা করতে চাইলেন মহিলা।

নির্দিষ্ট ঠিকানায় নির্দিষ্ট দিনে পৌঁছলেন ওয়াল্ট আর অ্যানি। দরজায় কলিংবেল টেপার পরে কিছুক্ষণের অপেক্ষা, তারপরেই দরজা খুললেন ওয়াল্ট-অ্যানিকে নিজের সন্তান দত্তক দিতে চাওয়া মহিলা। তার দিকে তাকিয়েই একেবারে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন ওয়াল্ট। যে ক্লো’কে ছোটবেলা থেকে স্বপ্নে দেখে এসেছেন তিনি, এ তো সেই বাচ্চা মেয়েরই বড় বয়সের রূপ। ঠিক সেই চোখ, সেই চুল, সেই ত্বক। অ্যানি জানালেন, হ্যাঁ, তারও স্বপ্নের কন্যাকে বড় হলে এই মহিলার মতোই দেখতে হবে ঠিকই। তবে ওয়াল্ট-অ্যানির বিস্ময়ের তখনও বাকি ছিল। দু’জনকে হতবাক করে দিয়ে মহিলা জানালেন, তিনিও কন্যাসন্তানের জননী হতে চান, এবং মেয়ের নাম রাখতে চান ক্লো।

ওয়াল্ট-অ্যানি বুঝে যান, অন্য ভাবে তাদের স্বপ্নপূরণের পরিকল্পনা করে ফেলেছেন ঈশ্বর। অবশেষে নির্দিষ্ট সময়ে জন্ম নিলো সেই মহিলার সন্তান। যেনো অবধারিতভাবেই কন্যাসন্তান প্রসব করলেন তিনি এবং ওয়াল্ট-অ্যানি এক ঝলক সেই মেয়ের দিকে তাকিয়েই বুঝে গেলেন, এ সেই তাদের স্বপ্নে দেখা মেয়ে ছাড়া আর কেউ হতেই পারে না।

এখন সেই ক্লো বড় হচ্ছে ওয়াল্ট-অ্যানির কোলে, তাদের স্নেহ-ভালোবাসায়। ছোট্ট ক্লো’কে কোলে নিয়ে ওয়াল্ট আজ ভাবেন, এ কার মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন তিনি! এ কী তার ছাড়া অন্য কারো সন্তান হতে পারে?

নিজেদের স্বপ্নপূরণের এই অলৌকিক কাহিনি তারা নিজেরাই জানিয়েছেন তাদের ওয়েবসাইট ‘ওয়াল্ট অ্যান্ড অ্যানি’তে। ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছে তাদের লেখা। মানুষের স্বপ্নযে, কী অদ্ভুতভাবে পূরণ হয়ে যেতে পারে, তা ভেবে পানি এসেছে দুনিয়াজুড়ে অজস্র মানুষের চোখে।

About Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat