এখনই কমছে না বৃষ্টি
শুক্রবার বিকাল থেকে মেঘে ঢাকা ছিল রাজধানীর আকাশ, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিও শুরু হয় রাত থেকে। সেই বৃষ্টি আর থামেনি গত দুই দিন। কখনও হালকা, কখনও ভারী- এভাবে একনাগাড়ে বৃষ্টি হয়েই চলেছে। রবিবার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে ভারী বর্ষণের কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে কর্মজীবীদের। এই ভোগান্তি সহসাই কমে না বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আগামী তিন দিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে তারা।
দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট পানির নিচে না গেলেও ভোগান্তি ঠিকই আছে। বিশেষ করে সকালে অফিস যাওয়া আর বিকালে ফিরে আসার সময় ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। রাস্তায় যাত্রীবাহী বাস থাকলেও সিএনজি ও রিকশা কম। সোমবার ঈদে মিলাদুন্নবির ছুটি, মাঝখানে রবিবার ছুটি নিয়ে বিভিন্ন যায়গায় গেছেন অনেকে। ফলে ব্যাংক, বীমা, সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতে যারা ডিউটিতে ছিলেন তাদের বাধ্যতামূলকভাবেই অফিসে ছুটতে হয়েছে। রিকশাচালক, ফেরিওয়ালাদের শ্রমজীবীরাও পেটের দায়ে বাধ্য হয়েই বের হয়েছিলেন রাস্তায়। তবে স্কুল-কলেজগুলোয় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার ছিল খুবই কম।
রাজধানীর শান্তিনগর মোড়ের তরকারি বিক্রেতা শরাফত জানান, সকাল থেকে বৃষ্টির মধ্যেই তিনি রাস্তায় নেমেছেন। গতকালই কিছু তরকারি কেনা ছিল, আজ বিক্রির জন্য বের হওয়া ছাড়া কোনও উপায় ছিল না।
রাজধানীর পল্টন ও বায়তুল মোকাররাম এলাকার হকারদের কেউ কেউ দোকান বসালেও সারাদিনই বৃষ্টির কারণে সেখানে ক্রেতা ছিল খুবই কম। তাদের একজন রফিকুল ইসলাম বলেন, আজ তেমন বেচাকেনা নেই। এরপর সপ্তাহের মাঝে একদিন দোকান বন্ধ রাখতে চাইনি বলে দোকান খুলেছি। এছাড়া কাল বন্ধের দিন, এই এলাকায় ক্রেতা আসবে না। ফলে পরপর দুই দিন দোকান বন্ধ রাখা কঠিন।
রিকশাওলা রাসেল রবিবার দুপুরে জানান, সকালে বের হয়েছি। ঠান্ডা পানি, তার ওপর বাতাস। রাস্তায় রিকশা চালানো কঠিন। ভাড়া ভালো পেলেও ঠান্ডায় বেশি সময় ধরে রাস্তায় থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, আজ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং আশেপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে পারে। মৌসুমী বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, গভীর স্থল নিম্নচাপের কেন্দ্রস্থল ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। এর ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়তে পারে। সোম, মঙ্গল ও বুধবার দেশের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।
আবহাওয়াবীদ মো. হাফিজুর রহমান জানান, আগামীকাল সোমবার রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। একই সঙ্গে মঙ্গল ও বুধবারও কিছু কিছু জায়গায় দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে।
গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে পটুয়াখালিতে ১৬১ মিলিমিটার। এছাড়া ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে ৭৮ মিলিমিটার। ১০০ মিলিমিটরের বেশি বৃষ্টি হয়েছে এমন এলাকার মধ্যে ফরিদপুরে ও গোপালগঞ্জে ১৫১, বরিশালে ১২৯, যশোরে ১২৪, মোংলা ও কুমারখালিতে ১২২, চুয়াডাঙ্গায় ১১৮, মাদারিপুরে ১০৭ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
স্থল গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কোথাও কোথাও আজ (১৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ভারী (৪৪-৮৮ মিলিমিটার/ ২৪ ঘণ্টায়) থেকে অতি ভারী (২৮৯ মিলিমিটার/ ২৪ ঘণ্টায়) বর্ষণ হতে পারে।ভারী বৃষ্টিতে ভূমিধসের শঙ্কার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
এদিকে আগের মতোই চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
নদী বন্দরগুলোকে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। রবিবার রাত ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দর সমূহের জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, রাজশাহী, পাবনা, টাঙ্গাইল, ঢাকা, যশোর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, মাদারীপুর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ওপর দিয়ে দক্ষিণ/দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।