জাতীয় সংসদে অর্থবিল পাস,ধনীদের করহার বৃদ্ধির প্রস্তাব থেকে সরে এলো সরকার
বিত্তবানদের আয়কর হার ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ করার প্রস্তাব থেকে সরে এসেছে সরকার। এ ছাড়া কোম্পানির কাজে ব্যবহৃত একাধিক গাড়িতে পরিবেশ সারচার্জ আরোপের প্রস্তাবও বহাল থাকেনি। এমন কিছু সংশোধনসহ শনিবার জাতীয় সংসদে অর্থবিল ২০২৪ পাস হয়েছে।
অর্থবিলের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের। পরে বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যের প্রস্তাবের ভিত্তিতে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী অর্থবিল পাসের আগে নতুন কিছু সংশোধনী আনেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে কণ্ঠভোটে বিল পাস হয়।
২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির সর্বোচ্চ করহার ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়। এরপর ৩ বছর এ করহার অব্যাহত ছিল। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে করহার বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেন অর্থমন্ত্রী। বার্ষিক ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি আয় থাকলে এ হার প্রযোজ্য। শনিবার সংসদে রংপুর-২ আসনের এমপি আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী এ প্রস্তাব প্রতিস্থাপন করে আগামী অর্থবছরের জন্য চলতি অর্থবছরের মতো সাড়ে ১৮ লাখ টাকার বেশি আয়ের ক্ষেত্রে আয়করের ২৫ শতাংশ বহাল রাখার প্রস্তাব করেন। একই সঙ্গে তিনি আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ক্ষেত্রে বার্ষিক ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি আয় থাকলে আয়কর ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন। সংসদে এ প্রস্তাব গৃহীত হয়।
অর্থবিলে ব্যক্তি ও কোম্পানি উভয়ক্ষেত্রে একাধিক গাড়ির ওপর সারচার্জ আরোপের প্রস্তাব দেওয়া হলেও পাস হওয়া বিল অনুযায়ী শুধু ব্যক্তির একাধিক গাড়িতে সারচার্জ প্রযোজ্য হবে। এদিকে অর্থবিলে সারাদেশে কমিউনিটি সেন্টার ভাড়ার ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করা হয়। এ প্রস্তাব সংশোধন করে শুধু সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ছাড়া কোম্পানির মতো তহবিল ও ট্রাস্টের মূলধনি আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স বসানো হয়েছে।
অডিটে ছাড়
হয়রানি কমিয়ে আনতে অডিটের শর্ত শিথিল করা হয়েছে। এ জন্য অর্থবিলের মাধ্যমে আয়কর আইন সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সংসদ। নতুন নিয়মে আগের বছরের চেয়ে রিটার্নে ১৫ শতাংশ আয় বেশি দেখালে ট্যাক্স ফাইল অডিটে দেওয়া হবে না। শুধু ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা এ সুযোগ পাবেন।
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বহাল
অর্থবিলে আগামী জুলাই মাস থেকে এক বছরের জন্য কালো টাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, নগদ টাকা ১৫ শতাংশ কর দিয়ে বিনা প্রশ্নে বৈধ বা সাদা করা যাবে। একইভাবে জমি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট কিনেও এলাকাভেদে নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে টাকা সাদা করা যাবে। এ ধরনের সুযোগ সৎ করদাতাদের প্রতি বৈষম্যমূলক এবং দুর্নীতি সহায়ক উল্লেখ করে তা বাতিলের দাবি ওঠে সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে। তবে শেষ পর্যন্ত এ প্রস্তাব বহাল রাখা হয়েছে।