নাফ নদে মিয়ানমারের যুদ্ধজাহাজ,গুলি আতঙ্কে সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারা

0
114350_b3
Array

কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদের ওপারে মিয়ানমারের একটি যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতি দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এ ছাড়া বুধবার দিনের পর রাতেও মিয়ানমার থেকে গুলির শব্দ ভেসে আসে। এতে আতঙ্ক বিরাজ করছে সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দাদের মধ্যে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, নাফনদে একটি বড় জাহাজ দেখা গেছে এবং বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাওয়ার বিষয়ে অবহিত হয়েছি। সতর্ক অবস্থানে রয়েছি আমরা।

সীমান্ত এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, বুধবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নাফনদে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মৌলভীপাড়ায় মিয়ানমারের কাছে জাহাজটি দেখা গিয়েছিল। এরপর রাত ৯টা থেকে এপারে ভেসে আসতে থাকে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ। টানা তিন ঘণ্টা ধরে সীমান্তের লোকজন ওই শব্দ শুনেছেন। তারপর থেমে থেমে রাতভর শোনা গেছে। তারা বলছেন, বৃহস্পতিবার ভোর ৪টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত আবারো বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। সকালের পর সেই ‘বড় জাহাজটি’ দক্ষিণ দিকে সরে গিয়ে বর্তমানে টেকনাফের নাফনদে ও বঙ্গোপসাগরের নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে অবস্থান করছে।

জাহাজ থেকে মিয়ানমারের স্থলভাগে থেমে থেমে গোলাগুলি ও মর্টারশেল বর্ষণের শব্দ অব্যাহত রয়েছে।

সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, গত এক মাস টেকনাফ সীমান্তের পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক ছিল। কোনো বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়নি। এর মধ্যে গত ৫ই জুন, ৮ই জুন এবং ১১ই জুন নাফনদে ও বঙ্গোপসাগরের নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে মিয়ানমারের অংশ থেকে সেন্টমার্টিনগামী নৌযানে গুলি করা হয়। বুধবার দুপুরে নাফনদে দেখা মিলে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর জাহাজ। বুধবার রাত থেকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপসহ আশপাশের সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমারের ওপার থেকে থেমে থেমে বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসতে শুরু করে।

সালাম বলেন, বিম্ফোরণের শব্দে সীমান্ত লাগোয়া শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাট এলাকাসহ জালিয়াপাড়া, পশ্চিমপাড়া, উত্তরপাড়া ও আচারবনিয়ার আশপাশের বসতঘর ও স্থাপনা কেঁপে ওঠে। এসময় সীমান্তের একেবারে কাছাকাছি বসবাসকারীদের অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে দূরে স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নেন। বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসার ঘটনা অব্যাহত থাকায় স্থানীয়দের অনেকে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। জাহাজটি এখন নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে রয়েছে। দুপুর ১টা পর্যন্ত গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যাওয়ার বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জেনেছি। জাহাজটি মিয়ানমারের অংশে রয়েছে। বর্তমান সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে বিজিবি ও কোস্ট গার্ডসহ সংশ্লিষ্টরা সজাগ রয়েছে। পাশাপাশি প্রশাসনও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।

এদিকে কক্সবাজারের টেকনাফের নাফনদের নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্ট থেকে গুলিবর্ষণের ঘটনায় গত সাতদিন ধরে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথ দিয়ে নৌযান চালাচল বন্ধ ছিল। বুধবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের জরুরি এক বৈঠকে বৃহস্পতিবার থেকে বঙ্গোপসাগরের বিকল্প পথ ব্যবহার করে পণ্য পরিবহন এবং সীমিত আকারে যাত্রী আসা-যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ৭ দিন পর বিকল্প পথে ঝুঁকি নিয়ে সেন্টমার্টিন হয়ে টেকনাফ ঘাটে পৌঁছায় যাত্রীবোঝাই ৪টি ট্রলার। ওদিকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে টেকনাফ ঘাট ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ওই ট্রলারের সংশ্লিষ্টরা। ১৩ই জুন দুপুর ২টার দিকে সেন্টমার্টিন হয়ে যাত্রীবোঝাই ৪ ট্রলার বিকল্প নৌ-রুটে টেকনাফ ঘাটে পৌঁছে। পরে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয় ট্রলারগুলো।

ওদিকে তীব্র খাদ্য ওষুধের সংকটে ভুগছিল সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রায় ১২ হাজার বাসিন্দা। দুই পাড়ে আটকে পড়েছিল শতাধিক বাসিন্দা। এমন পরিস্থিতিতে দ্বীপে খাদ্য সংকট এড়াতে বিকল্প রুটে পণ্য পাঠানোর উদ্যোগ নেয় জেলা প্রশাসন। এরই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের ঘোলারচর পয়েন্ট থেকে ৫টি ট্রলারে করে কিছু পণ্য পাঠানোর দিনক্ষণ ছিল। শুক্রবার থেকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার

বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে সাগরপথে পণ্যবাহী ট্রলার চলাচল করবে। বুধবার রাতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান জেলা প্রশাসকের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইয়ামিন হোসেন।
তিনি জানান, নাফনদে যেহেতু ট্রলার দেখলেই গুলি ছোড়া হচ্ছে সে কারণে বিকল্প পথ হিসেবে কক্সবাজার থেকে পণ্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই পথে নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি নেই।

About Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat