মানবাধিকার সংগঠনের সতর্কতা শোনেনি সরকার,নির্বাচন ও বিএনপির আন্দোলন নিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদন
বাংলাদেশের নির্বাচন ও বিরোধী দলগুলোর ভোট বর্জনের আন্দোলন নিয়ে বার্তা সংস্থা একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ৭ জানুয়ারির ভোটের আগে সুষ্ঠু নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশের বিরোধী সমর্থকরা কখনও কখনও রাস্তায় সহিংস বিক্ষোভ করেছেন। তখন বিরোধী নেতাদের বিরোধীদের উপর দমন-পীড়ন করেছেন সরকার।
নির্বাচন পরিচালনার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে এখন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি সাধারণ নির্বাচন বর্জন করছে।
গত অক্টোবরে মারাত্মক সরকার বিরোধী বিক্ষোভের পর প্রায় ২৫ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে সরকার। এখন গ্রেফতার এড়াতে প্রায় ১ কোটি বিরোধী নেতাকর্মী পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
বিরোধী দলের নেতারা বলছেন, সরকার বিরোধী দলের নেতাদের বাড়িতে খুঁজে বেড়াচ্ছে। এই পরিস্থিতি তাদের দলের নেতাদের পাশাপাশি কর্মীদের মনে একটি ভীতি তৈরি হয়েছে।
শেখ হাসিনা এবং তার আওয়ামী লীগ বারবার বিএনপিকে নির্বাচনে নাশকতার জন্য সমস্যা সৃষ্টিকারী হিসাবে তিরস্কার করেছে। বিরোধীদের উপর দমনপীড়ণ বন্ধ করতে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর সতর্কতাও প্রত্যাখ্যান করেছে।
বিএনপির মহিলা শাখার প্রধান আফরোজা আব্বাস বলেন, গত কয়েক মাসে প্রায় ১০০ নারী বিরোধী নেত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৭৪ বছর বয়সী তার স্বামী মির্জা আব্বাস। যিনি বিএনপির শীর্ষনেতাদের মধ্যে একজন। তিনিও পহেলা নভেম্বর থেকে কারাগারে আছেন। পুলিশ যখন তাকে গ্রেফতার করে, তখন তিনি ডায়াবেটিস এবং কিডনির সমস্যার মতো অসুস্থতা নিয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন।
বিএনপির কর্মকর্তারা বলছেন, পুলিশ ঘন ঘন রাতের অভিযানে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর ভাংচুর করেছে। অথছ পুলিশ বলছে- তারা শুধুমাত্র সহিংসতার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়ে বিরোধী নেতাকর্মীদের এমন বক্তব্যকে অনুমান বলে দাবি করেছে পুলিশের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা।
বিএনপি গত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল কিন্তু ২০১৪ সালে নির্বাচনের বাইরে ছিল। নিউইয়র্ক ভিত্তিক এইচআরডব্লিউ বলেছে, বাংলাদেশীরা এবার আবারো স্বাধীনভাবে তাদের নেতা নির্বাচন করার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।
নভেম্বরের এক প্রতিবেদনে, মানবাধিকার সংগঠনটি বিএনপি কর্মীদের গ্রেপ্তারের সংখ্যা ১০ হাজার বলে উল্লেখ করেছে। সহিংসতায় কমপক্ষে ১৬ জন নিহত এবং দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার আহত হয়েছেন।
সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অফ সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের গবেষণা ফেলো অমিত রঞ্জন বলেছেন, বাংলাদেশে ভিন্নমতের দমনপীড়ন সাধারণ ঘটনা ছিল। সাম্প্রতিক সরকারী পদক্ষেপগুলি নজিরবিহীন।
তিনি বলেন, “বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব তারা বিরোধিতা চায় না।
এই দমনপীড়ন এমন এক সময়ে চালানো হয় যখন বিরোধী নেতৃত্ব নিজেকে গোছাতে শুরু করে এবং দলের সভাপতি খালেদা জিয়া যখন অসুস্থ। কয়েক দশক ধরে প্রাক্তন এই প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈরিতা ও তিক্ত রয়েছে শেখ হাসিনার। যার কারণে তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে। যদিও তার ছেলে সাময়িকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তিনি প্রবাসে রয়েছেন এবং দলের পরবর্তী সবচেয়ে সিনিয়র নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৯ অক্টোবর থেকে কারাগারে রয়েছেন।
রাস্তায় ভোটাররা বলছেন, তারা সুষ্ঠু নির্বাচন চান, কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা, তারা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা চান।
গত ১৫ বছরের ক্ষমতায় শেখ হাসিনা অর্থনীতি এবং বিশাল গার্মেন্টস শিল্পকে ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য কৃতিত্ব পেয়েছেন। প্রতিবেশী মিয়ানমারে নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলমানদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক প্রশংসা কুড়িয়েছেন। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ১৭০ মিলিয়নের দেশের জন্য জ্বালানি ও খাদ্য আমদানির দাম বৃদ্ধির পর থেকে অর্থনীতি তীব্রভাবে ধীর হয়ে গেছে।