দিল্লিতে পররাষ্ট্র সচিবের বৈঠককে বিস্ময়কর বললেন রিজভী
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দিল্লিতে ৯০ দেশের কূটনীতিকদের সাথে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের বৈঠককে বিস্ময়কর বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘গতকাল বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব দিল্লিতে ৯০টি দেশের কূটনীতিকদের সাথে বৈঠক করেছেন। বাংলাদেশে কি সেই সমস্ত দেশের দূতাবাস নেই? দিল্লিতে গিয়ে বৈঠক করতে হলো কেন? ভারতই বা কেন এর আয়োজন করে দিলো? ভারত যদি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয়ে থাকে তাহলে তো তাদের বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের পক্ষে থাকার কথা ছিল। আজকে তো ইউরোপ-আমেরিকা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের পক্ষে স্বোচ্চার। যে সরকারের একদলীয় দুঃশাসনে দেশের সাধারণ মানুষ সবাই পিষ্ট সেই সরকারের পক্ষে কাজ করানোর জন্য দিল্লিতে ৯০টি দেশের কূটনৈতিকদের বৈঠক আমার কাছে বিস্ময়কর মনে হয়েছে। আমি বিস্মিত হয়েছি।’
রোববার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘দেশ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এক দুর্বিষহ দুর্ভিক্ষদের কাছে আটকে আছে দেশের জনগণ। রাষ্ট্রক্ষমতাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে রাষ্ট্রশক্তিকে ব্যবহার করে যা ইচ্ছে তাই করা হচ্ছে। সেই রাষ্ট্রশক্তি দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে যারা কথা বলছে তাদেরকে নির্মূল করছে। সেটা অনেক আগে থেকেই করে আসছিল এবার পুরোদমে করছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দ্বাদশ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অবৈধ সরকার থেমে নেই। রাষ্ট্রের প্রশাসন এবং গড়ে তোলা ক্যাডার বাহিনী দিয়ে একাত্তরের সেই ভয়াল রাতের পরিস্থিতি বর্তমান বাংলাদেশের তৈরি করেছে। বর্তমান প্রজন্ম ’৭১ সালের সেই ভয়াল রাত দেখেনি কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি দেখে তারা বুঝতে পারছে তখন কী হয়েছিল। একাত্তরের মতো গ্রামগঞ্জে বিভিন্ন এলাকায় যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দেখিয়ে দিচ্ছে কোনটা বিএনপির বাড়ি। বিএনপি নেতাকর্মীরা কোথায় বসবাস করে, তাদের পরিবার কোথায় বসবাস করে। ঠিক ’৭১ সালে একই ঘটনা ঘটিয়েছে শান্তি কমিটি, আলবদররা। তারা পাকিস্তানী বাহিনীকে দেখিয়ে দিয়েছে এই বাড়ির মানুষ স্বাধীনতাকামী। এই বাড়ির মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধের সাথে জড়িত। তখন বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা যারা থাকতেন তাদেরকে পাকিস্তানিরা নিয়ে গিয়ে জুলুম-নির্যাতন করত। এখন দেশের পরিস্থিতি ঠিক ওই রকমই হয়েছে। ’৭১-এর যেন পুনরাবৃত্তি হয়েছে আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের মধ্যে।’
রিজভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আগুনসন্ত্রাসীকে ছাড় দেয়া হবে না। ছাড় তো ইতোমধ্যে দিয়েছেন আসল অপরাধীকে। এখন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে ধরবেন, নির্যাতন করে অন্য নেতাদের নাম বলাবেন। গত ১৫ বছর যাবত এই কাজগুলোই তো করেছে আপনাদের সাজানো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।‘
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘বিএনপি নেতাকর্মীরা বাসায় থাকতে পারে না। অধিকাংশ নেতাকর্মীই জেলে। বাকি যারা আছে তারা নিজ বাসায় থাকতে পারে না, কোনো আত্মীয়-স্বজনের বাসায় থাকতে হয় বা পরিচিত মানুষের বাসায় থাকতে হয়। গ্রামগঞ্জে বিএনপির নেতাকর্মীরা নিজ বাসায় থাকতে পারে না, আত্মীয়-স্বজনের বাসায় থাকতে পারে না। যার কারণে ধানক্ষেতে মশারি টাঙিয়ে থাকতে হয়, বাঁশঝাড়ে কোনোরকমভাবে থাকতে হয় পুলিশের নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচার জন্য। এক বীভৎস পৈচাশিক অভিযান চলছে সারা দেশে।’
দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা-মামলার বিবরণ তুলে ধরে রিজভী বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ৪১০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১৫ মামলায় আসামি করা হয়েছে ১ হাজার ৭০৫ জনের অধিক নেতাকর্মীকে।