লক্ষ্মীপুর উপ-নির্বাচনে সিল মারা প্রশ্নে মুখে কুলুপ ইসির
সদ্য সমাপ্ত লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে অবৈধভাবে সিল মারার ঘটনায় কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দিনভর সাংবাদিকরা নির্বাচন ভবনে অবস্থান করলেও বারবার পাশ কাটিয়ে গেছেন ইসি সচিব ও নির্বাচন কমিশনাররা।
রোববার (৫ নভেম্বর) লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাদা রঙের পাঞ্জাবি পরা এক ব্যক্তির নৌকা প্রতীকে সিল মারার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। দিনভর দেশজুড়ে এ নিয়েই চলে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, যিনি সিল মেরেছেন, তার নাম আজাদ হোসেন। তিনি লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। তবে সম্প্রতি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে বহিষ্কার করে জেলা ছাত্রলীগ। ভিডিওতে দেখা যায়, ব্যালটে সিল মারতে আজাদকে সহযোগিতা করছেন নৌকা প্রতীকের আরেক কর্মী।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার যখন আর সপ্তাহখানেক সময় বাকি, ঠিক তখন এ ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে ইসির সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে সোমবার (৬ নভেম্বর) দিনভর নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনারদের ব্যাখ্যা পেতে দপ্তরে দপ্তরে যান গণমাধ্যমকর্মীরা। কিন্তু কোনো নির্বাচন কমিশনারই মুখ খোলেননি।
ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলমও পাশ কাটিয়ে গেছেন বারবার, যদিও আগের দিনই তাকে গণমাধ্যমে কথা বলার জন্য ইসি সচিবালয়ের মুখপাত্র হিসেবে অফিস আদেশ জারি করা হয়।
ইসি সচিবের দৌড়ঝাঁপ
নির্বাচনে অবৈধভাবে সিল মারা নিয়ে মুখে কুলুপ আঁটলেও দিনভর দৌড়ঝাঁপের মধ্যে কাটান ইসির সচিব মো. জাহাংগীর আলম। কর্মকর্তারা বলছেন, এক নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে অন্য নির্বাচন কমিশনারদের দ্বন্দ্ব নিরসনেই ঘাম ঝরান তিনি।
প্রথমে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীরের দপ্তরে গিয়ে বৈঠক করেন ইসি সচিব। এরপর যান নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব) মো. আহসান হাবিব খানের দপ্তরে। সঙ্গে নেন নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার দুই যুগ্ম সচিব মো. ফরহাদ আহাম্মদ খান ও মো. আবদুল বাতেনকে। এরপর সচিব, বেগম রাশেদা সুলতানার দপ্তরে গিয়ে বৈঠক করেন। সেখান থেকে বেরিয়েই যান নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমানের দপ্তরে। এরপর তিনি ফিরে আসেন নিজের দপ্তরে।
পরে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর কয়েক মিনিটের জন্য বৈঠক করেন মো. আহসান হাবিবের দপ্তরে। এরপর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের দপ্তরে তিন কমিশনার গেলেও নিজ দপ্তরেই অবস্থান করেন মো. আনিছুর রহমান।
ইসি সচিব ও কমিশনারদের এ দৌড়ঝাঁপের মধ্যে সাংবাদিকরা বারবার তাদের কাছে যান। উপ-নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে চাইলে সচিব মো. জাহাংগীর আলম ‘আজকে না’ বলে বারবার পাশ কাটিয়ে যান। এর মধ্যেই সাংবাদিকদের চোখ এড়িয়ে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে দ্রুত নির্বাচন ভবন ত্যাগ করেন সিইসি। পরে সচিবসহ একে একে অন্য কমিশনাররাও চলে যান।
কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় অবমূল্যায়িত হওয়ার কারণে অনেকটা একলা চলো নীতিতে অবস্থান নেন। তাই সংসদ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে এসে দ্বন্দ্ব নিরসনেই চলে দিনভর চলে খণ্ড খণ্ড বৈঠক। মূলত ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে চলছে এ দ্বন্দ্ব।