জামায়াতসহ বিরোধীদলকে নেতৃত্বশূন্য করার ঘৃণ্য চক্রান্তের লিপ্ত হয়েছে সরকার : এটিএম মা’ছুম
সরকার জামায়াতসহ বিরোধীদলকে নেতৃত্বশূন্য করার ঘৃণ্য চক্রান্তের লিপ্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম।
তিনি বলেন, সরকার বিরোধী চলমান আন্দোলন দমন এবং জামায়াতসহ বিরোধীদলকে নেতৃত্ব শূন্য করার ঘৃণ্য চক্রান্তের অংশ হিসেবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর (বীর উত্তম), বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অবঃ) আলতাফ হোসেন চৌধুরী এবং মুজিবনগর উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা খানজাহান আলীকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা এই অন্যায় গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
রোববার (৫ নভেম্বর) বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর (বীর উত্তম) ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী এবং মুজিবনগর উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা খানজাহান আলীকে বেআইনিভাবে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দেয়া বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, গতকাল শনিবার রাজধানীর আরামবাগে আয়োজিত এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আগুন দিয়ে যারা পোড়াবে তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। দরকার হলে তাদের ধরে ওই আগুনের মধ্যে ফেলতে হবে। যে হাত দিয়ে আগুন দেবে সেই হাত আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিতে হবে। তবেই তাদের শিক্ষা হবে।’ আমরা বলতে চাই, প্রধানমন্ত্রীর পদে থেকে তিনি এ জাতীয় কথা বলতে পারেন না। তার এই বক্তব্য ভয়ংকর ও সর্বনাশী, যা দেশকে সংঘাত-সংঘর্ষের দিকে নিয়ে যাবে। এই বক্তব্য দিয়ে তিনি দেশের সংবিধান ও মানবাধিকার লংঘন করেছেন। তার এই বক্তব্যে গোটা জাতি স্তম্ভিত। জনসাধারণকে আইন হাতে তুলে নেয়ার তার উস্কানিমূলক বক্তব্যের আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, আবারো একতরফা প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে বিনাভোটের সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চক্রান্ত করছে এবং সারাদেশে গণগ্রেফতার অব্যাহত রেখেছে। ক্ষমতালোভী সরকার গণআন্দোলনে ভীত হয়ে পড়েছে। সরকারের আজ্ঞাবহ পুলিশ প্রশাসন গুলি চালিয়ে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছে। এভাবে গ্রেফতার ও জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে সরকার বিরোধী চলমান আন্দোলন দমন করতে পারবে না।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছর যাবত কর্তৃত্ববাদী সরকারের অপশাসনে দেশের মানুষ অতীষ্ঠ। দেশকে করদ রাজ্যে পরিণত করা হয়েছে। স্বাধীন মত প্রকাশ স্তব্ধ করে দেয়া হয়েছে। ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। মৌলিক মানবাধিকার আজ ভূলুণ্ঠিত। দেশে সুশাসন বলতে কিছু নেই। শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। যে যেভাবে পারে দুর্নীতি ও লুটপাট করছে। হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে কানাডা-মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেগম পাড়া তৈরি করা হয়েছে। দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করা হয়েছে। এভাবে কোনো দেশ চলতে পারে না। জামায়াতসহ বিরোধীদলের ডাকা অবরোধ কর্মসূচি সমর্থন করে মুক্তিকামী জনতা আজ ঘর থেকে রাস্তায় চলে এসেছে। কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রগণ করে তারা সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছে। সরকারের রক্ত চক্ষুকে তারা ভয় পাচ্ছে না। জনতার বাধ ভাঙা জোয়ার দেখে সরকার বেসামাল হয়ে পড়েছে। সরকারের ভেতর কম্পন তৈরি হয়েছে। দিশেহারা হয়ে সরকার প্রতিবাদী মানুষের ওপর হামলা চালাচ্ছে। গ্রেফতার করছে। সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৮৩ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দেশটাকে এক বৃহৎ কারাগারে পরিণত করা হয়েছে। আমি সরকারের এই অন্যায় গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং সকল রাজবন্দির নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। আমরা সরকারকে হুঁশিয়ারি করে বলতে চাই, ত্রাস সৃষ্টি করে প্রতিবাদী কণ্ঠ স্তব্ধ করা যাবে না। মানুষের যে বাধা ভাঙা জোয়ার শুরু হয়েছে, তাতে সরকার ভেসে যাবে। এবার আর পার পাওয়া যাবে না। ক্ষমতা ছাড়তেই হবে।
তিনি বলেন, জালিম সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন, আমিরে জামায়াত ডা: শফিকুর রহমানসহ সকল রাজবন্দি এবং ওলামা-মাশায়েখের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসার দাবিতে যে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে বিজয় পতাকা উড্ডীন না হওয়া পর্যন্ত মাটি কামড়ে ধরে গণআন্দোলনকে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে আসার জন্য আমি জামায়াতে ইসলামীর সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও সংগ্রামী দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। সেই সাথে মুক্তিকামী জনতা জীবনবাজি রেখে রোববারের অবরোধ কর্মসূচি সর্বাত্মকভাবে সফল করায় আমি তাদের আন্তরিক মুবারকবাদ জানাচ্ছি।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি