নির্বাচনের আগে সরকারকে অবশ্যই নির্যাতন বন্ধ করতে হবে,ইউনাইটেড এগেইনস্ট টর্চারের (ইউএটি) বিবৃতি

0
Array

আগামী জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচনের তোড়জোড়ে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বেড়েই চলছে। পুলিশ কর্তৃক নির্যাতনের অভিযোগ বহুগুণ বেড়ে চলেছে এবং তার সঙ্গে বাড়ছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও মানবাধিকার কর্মীদের বিচারিক হয়রানির পাশাপাশি সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ওপর হামলার ঘটনা।

এই উদ্বেগজনক প্রেক্ষাপটের মধ্যে, বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) ইউনাইটেড এগেইনস্ট টর্চার (ইউএটি) এক বিবৃতিতে সরকারকে সহিংসতা বন্ধ এবং এর মানবাধিকারকে সমুন্নত রাখার করার আহ্বান জানিয়েছে।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন-এর অর্থায়নে পরিচালিত ইউনাইটেড এগেইন্সট টর্চার (ইউএটি) যে ছয়টি আন্তর্জাতিক নির্যাতন বিরোধী সংগঠন দ্বারা গঠিত তার একটি হলো ইন্টারন্যাশনাল রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল ফর টর্চার ভিকটিমস (আইআরসিটি)।

আইআরসিটির মহাসচিব লিসা হেনরি বলেছেন, ‘বাংলাদেশে আমাদের প্রতিনিধিরা বলছেন যে-গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন প্রতিদিনই ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলে নির্যাতন বাড়ছে। ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার এবং নিরাময়ের অধিকার রয়েছে, তাই জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এবং ভুক্তভোগীদের পুনর্বাসন প্রদানের জন্য নির্যাতনের মামলা নথিভুক্ত করার জন্য আমরা বাংলাদেশে আমাদের সদস্য এবং অংশীদারদের সমর্থন করার জন্য একসাথে কাজ করবো।’

বাংলাদেশ তার জনগণের জন্য নির্যাতন নিষিদ্ধ করার সাংবিধানিক অঙ্গীকারকে বাস্তবে পরিণত করতে ব্যর্থ হয়েছে। ঢাকা ১৯৯৮ সালে নির্যাতনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের সম্মেলনে যোগদান করে এবং ২০১৩ সালে নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন পাশ করে যা নির্যাতনকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে। তা সত্ত্বেও, বাংলাদেশ ২০১৯ সাল পর্যন্ত কমিটি এগেনস্ট টর্চার (সিএটি) এর কাছে রিপোর্ট করতে অস্বীকার করে। একই বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় আছেন, শুধুমাত্র এটুকু অঙ্গীকার দেন যে কোনও নিরপরাধ ব্যক্তি নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হবে না।

২০১৯ সালের কমিটি এগেনস্ট টর্চার (সিএটি) পর্যালোচনা বাংলাদেশকে আহ্বান জানিয়েছিল, আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের দ্বারা নির্যাতন ও দুর্ব্যবহারের নিয়মিত অনুজ্ঞা- এর মোকাবিলা করার একটি প্রকাশ্য অঙ্গীকার দেওয়ার জন্য এবং ‘দ্ব্যর্থহীনভাবে বলার জন্য যে কোনো পরিস্থিতিতে বা কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নির্যাতন ও দুর্ব্যবহার সহ্য করা হবে না।

তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং জোরপূর্বক গুম করার জন্য কুখ্যাতভাবে অপব্যবহারকারী আধা-সামরিক র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-এর ওপর ২০২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হওয়ার পাশাপাশি নির্যাতন এবং অন্যান্য গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বৃদ্ধির প্রতিবেদন করেছে।

বাংলাদেশ ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের কাছাকাছি আসার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনী প্রধান বিরোধী দল, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে বেআইনি, নজিরবিহীন এবং অতিরিক্ত বল প্রয়োগের নীতি অনুসরণ করছে। গত বছর ধরে, বিরোধী বিক্ষোভ গুলি বার বার পুলিশ দ্বারা শটগানের গুলি, টিয়ারগ্যাস এবং রাবার বুলেট চালিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছে এবং বিক্ষোভকারীদের লাঠিপেটা করা হয়েছে, যার ফলে শত শত লোক গুরুতর আহত হয়েছেন।

পুলিশ প্রায়ই সরকার এবং আদালত দ্বারা যে কাজগুলোকে বিদ্রোহমূলক বলে বিবেচনা করা হয়, সেগুলোকে প্রতিহত করার সময় প্রতিবাদকারীদের অভিযুক্ত করে যে তারা প্রথমে তাদের ওপর হামলা চালায়।

তবে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ডিজিটাল ভেরিফিকেশন ল্যাবের বিশ্লেষণে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো গেছে যে, তারা যে ভিডিওগুলি হাতে পেয়েছে তাতে দেখা যায়-বিক্ষোভকারীদের পুলিশ শোয়া বা নিরস্ত্র এবং পালানোর অবস্থায় মারধর করেছে। যেমনটা কম প্রাণঘাতী মন্ত্রের বিষয়ে জাতিসংঘের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ‘লাঠিসোটা এমন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবহার করা উচিত নয়, যে না হিংসাত্মক আচরণে জড়িত না হুমকি দিচ্ছে’।

বাংলাদেশ পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনী এবং সেইসঙ্গে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সমর্থক মানবাধিকার রক্ষাকারীদের নির্যাতনের ভুক্তভোগীদের এবং তাদের পরিবারের পাশাপাশি সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর সদস্যদের এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ওপর হামলা করেছে বলে জানা গেছে। যা স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থাগুলো ভিন্নমতের বিরুদ্ধে ভয় দেখানোর পরিবেশ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

নিউইয়র্ক টাইমসের সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে যে, প্রমাণ বহির্ভূতভাবে বিএনপির কয়েক হাজার সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করে কীভাবে বাংলাদেশের বহুদলীয় গণতন্ত্রকে পদ্ধতিগতভাবে শ্বাসরোধ করা হচ্ছে।

নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মাদ ইউনুস। যিনি ‘গরিবের ব্যাংকার’ হিসাবে পরিচিত, তিনি অসংখ্য মামলার শিকার হয়ে জেলে যাওয়ার মুখে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার অলকার তুর্ক নাগরিক সমাজের আইনি হয়রানি বন্ধ করতে এবং যথাযথ প্রক্রিয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা বিক্ষোভকারীদের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ফাঁস করার পরে বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর দুই নেতা আদিলুর রহমান খান এবং এএসএম নাসিরুদ্দিন এলানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

অধিকার হলো ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন এগেইনস্ট টর্চার (ওএমসিটি)-এর এসওএস-টর্চার নেটওয়ার্কের অংশ, ইউএটি কনসোর্টিয়ামের কনসোর্টিয়ামের অংশ, এবং খান ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন এগেইনস্ট টর্চার (ওএমসিটি)-এর সাধারণ পরিষদে বসেন।

ওএমসিটি-এর মহাসচিব বলেছেন, ‘যারা হত্যা করে তাদের শাস্তি দেওয়া উচিত, যারা খুনের নিন্দা করে তাদের নয়। আমার দেখা সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন আদিল এবং এলানকে হত্যাকাণ্ড প্রকাশ করার জন্য অন্যায়ভাবে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল অপরাধীরা এখনো মুক্ত।

আইআরসিটি এবং ওএমসিটি-এর পাশাপাশি, ইউনাইটেড অ্যাগেইনস্ট টর্চার কনসোর্টিয়াম অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য প্রিভেনশন অফ টর্চার (এপিট), ওমেগা রিসার্চ ফাউন্ডেশন এবং রেডরেস-এর সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশনের শক্তি ও দক্ষতা একত্রিত করে। নির্যাতন প্রতিরোধ, পুনর্বাসন, প্রমাণ সংগ্রহ এবং কৌশলগত মামলায় বিশ্বনেতা হিসাবে, আমরা আমাদের সদস্যদের এবং বাংলাদেশের অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে বর্তমান সংকট মোকাবিলায় সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করব এবং জাতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে নির্যাতন ও দুর্ব্যবহার বন্ধ করার জন্য এবং ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য সহযোগিতা করবো।

About Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat