রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে পৌঁছালো ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান
সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় দেশের সবচেয়ে আলোচিত ও বড় প্রকল্প পাবনার রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান রূপপুরে পৌঁছেছে। শুক্রবার দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে গাড়িবহরটি উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের রূপপুর এলাকায় প্রবেশ করে।ইউরেনিয়াম পরিবহনে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিশেষ নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল। প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে নিরাপত্তার কারণে ভোর থেকেই বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে পাবনা-ঢাকা রুটে বন্ধ রাখা হয় বাস চলাচল। ঢাকাগামী বাসের টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখে বাস মালিকরা। পাবনার পুলিশ সুপার আকবর আলী জানান, পাবনা-ঢাকা রুটের বঙ্গবন্ধু সেতুতে যানজট হয়। এজন্য এই রুটের যানবাহন বন্ধ রাখা হয়। তবে ইউরেনিয়াম প্রকল্পে পৌঁছাতেই বাস চলাচল পুনরায় শুরু হয় বলেও জানান তিনি।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান জানান, ইউরেনিয়াম রূপপুরে পৌঁছানোর মাধ্যমে পরমাণু প্রযুক্তির বৈশ্বিক এলিট গ্রুপে নিজের অবস্থান গড়লো বাংলাদেশ। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ ২০২৪ এবং আগামী ২০২৫ সালে দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে বলেও জানান।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে একটি বিশেষ বিমানে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে রাশিয়া থেকে ইউরেনিয়ামের এই চালান ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনা হয়। ৫ অক্টোবর রূপপুর প্রকল্পে এ জ্বালানি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্প কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে।রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশনের (রোসাটম) মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ এ জ্বালানি হস্তান্তর করবেন।
রূপপুর প্রকল্পে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত থাকবেন।
রোসাটমের জ্বালানি প্রস্তুতকারী কোম্পানি টেভেলের একটি প্রতিষ্ঠান নভোসিবিরস্ক কেমিক্যাল কনসেনট্রেটস প্ল্যান্ট (এনসিসিপি) রূপপুরের এই জ্বালানি উৎপাদন করছে। এরই মধ্যে প্রথম ইউনিটকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তৈরি করতে সব প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার গাইড মেনে ধাপে ধাপে এগিয়ে নেয়া হচ্ছে প্রকল্পের কাজ। সংশ্লিষ্টরা জানান, ইউরেনিয়াম উৎপাদন ও পরিবহণ থেকে শুরু করে বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি হিসেবে ইউরেনিয়াম (ফুয়েল রড) স্থাপন করা পর্যন্ত পাঁচটি বিষয়ের প্রস্তুতি রয়েছে।
রূপপুরে পারমাণবিক কেন্দ্রে জ্বালানি পৌঁছানোর পর তা হস্তান্তর ও পরিচালনার সময় যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তার মধ্য দিয়েই জ্বালানি বিনিময় ও ব্যবস্থাপনা করার ব্যাপারে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিটের উৎপাদনের সক্ষমতা ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। প্রকল্পের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ আগামী বছর প্রথম ইউনিট থেকে জাতীয় গ্রিডে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে চায়। একই বছর বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করার আশা করছে তারা।