বাকস্বাধীনতা হরণের আরেক হাতিয়ার হতে চলেছে সাইবার আইন : টিআইবি
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের নামে নতুন মোড়কে মূলত একই ধরনের নিবর্তনমূলক ধারা সংবলিত সাইবার নিরাপত্তা আইন (সিএসএ), ২০২৩ পাস করার ঘটনায় হতাশা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই উদ্বেগ প্রকাশ করে সংস্থাটি।
টিআইবি বলছে, নতুন এই আইনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতোই মুক্তচিন্তা, ভিন্নমত, বাক-স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মতো সাংবিধানিক অধিকারসমূহকে খর্ব করার ঝুঁকি সৃষ্টি করা হয়েছে। যে বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্তি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, সেই সাইবার অবকাঠামো, ইন্টারনেট ও সংশ্লিষ্ট সব ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের নিরাপত্তা-সংক্রান্ত অনেক বিষয়কেই উপেক্ষা করা হয়েছে। সাধারণের প্রত্যাশার বিপরীতে গিয়ে সাইবার নিরাপত্তা আইনটি মত, চিন্তা, বিবেক, বাক ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের আরেকটি হাতিয়ারে পরিণত হতে চলেছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইন (সিএসএ) যেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) প্রতিরূপ না হয়, তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট স্থায়ী কমিটির সদস্য ও মন্ত্রীসহ সব সংসদ সদস্যের জোরালো ভূমিকা পালনের আহ্বান জানানোর পাশাপাশি ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ থেকে খসড়া সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ : তুলনামূলক পর্যালোচনা ও সুপারিশ’ শীর্ষক একটি কার্যপত্রও পাঠিয়েছিল টিআইবি। অথচ আমরা দেখলাম, তাড়াহুড়ো করে আইনটি পাস করা হলো জাতীয় সংসদে, যেখানে প্রতিশ্রুতি থাকলেও টিআইবিসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনের পরামর্শ ও সুপারিশ আমলে নেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, আমরা দেখলাম, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে ৫ সেপ্টেম্বর বিলটি সংসদে উত্থাপনের পর মাত্র আট দিনের মধ্যে তা কণ্ঠভোটে পাস করা হলো। ফলে জনসাধারণের প্রত্যাশাকে একদিকে যেমন পদদলিত করা হলো, অন্যদিকে পাশাপাশি মুক্ত চিন্তা, মত প্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মতো মৌলিক মানবাধিকার চর্চাকে অনেক ক্ষেত্রেই আবারো অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করা হলো, যা চরম হতাশাজনক।
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলা ও হামলার চেষ্টার ঘটনা, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো, ডোমেইন অ্যাকাউন্টস, ব্যাংক ও ডেটাবেজ থেকে সংবেদনশীল তথ্য চুরির উদাহরণ রয়েছে- উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত আইনি কাঠামো তৈরি করার বিষয়গুলোকে আইনের আওতার বাইরেই রেখে দেওয়া হয়েছে। সাইবার স্পেসে নিরাপত্তাকে উপেক্ষা করে ভিন্নমত দমন ও গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের জন্যই সিএসএর মোড়কে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচিত কালো আইন ডিএসএকেই বাস্তবে বহাল রাখা হলো। ডিএসএর ব্যবহার ও অপব্যবহার যেভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তার নামে জনমনে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করেছিল, সিএসএও একইভাবে সাইবার মাধ্যম ব্যবহারকারীদের জন্য হয়রানি, হুমকি, আতঙ্ক ও সাইবার নিরাপত্তাহীনতাবোধ সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে প্রণীত হলো।