সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় আজ থেকে শুরু হচ্ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা

0
boi mela
Array

আজ থেকে শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেল ৩টায় বইমেলার উদ্বোধন করবেন। তারপরেই মেলা উন্মুক্ত হবে সর্বসাধারণের জন্য। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেয়া হবে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত মীর মশাররফ হোসেনের ‘বিষাদ সিন্ধু’-র অনুবাদে ‘ocean of sorrow’ এবং জার্মানি থেকে প্রকাশিত ‘হার্ন্ড্রেড পয়েমস ফ্রম বাংলাদেশ’।  বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানেই ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৬’ দেয়া হবে।

বইমেলা ঘিরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে জানিয়ে লেখক-প্রকাশ ও দর্শনার্থীদের আশ্বস্ত করেছেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। লেখক-প্রকাশক-মুক্তমনাদের ওপর হামলা-হুমকির প্রেক্ষাপটে অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে ঘিরে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা, যা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রকাশকরা।

মঙ্গলবার সকালে বইমেলার প্রস্তুতি পরিদর্শনে আসেন তিনি। কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলামসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে মেলাপ্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেন ডিএমপি কমিশনার। ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে’ এমন কোনো বই মেলায় প্রদর্শন ও বিক্রি থেকে বিরত থাকার জন্য লেখক-প্রকাশকদের অনুরোধ জানান তিনি।

আছাদুজ্জামান বলেন, মেলায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে এমন কোনো বই যাতে প্রদর্শন ও বিক্রি না হয় সে বিষয়ে প্রকাশকদের সচেতন থাকতে হবে। আমাদের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ আসলে আমরাও বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।

এবার বইমেলায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে জানিয়ে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেছেন, মেলায় ঢুকতে সবাইকে নিরাপত্তা তল্লাশি পেরিয়ে যেতে হবে, যার আওতায় তিনিও থাকবেন। গ্রন্থমেলা নিয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় তিনি বলেন, মেলায় আগত প্রত্যেককে নিরাপত্তা তল্লাশি পেরিয়ে যেতে হবে, এমনকি আমাকেও এই তল্লাশির ভেতর দিয়ে যেতে হবে।

ওই সভা থেকেই জানানো হয়, মেলার নিরাপত্তায় পাঁচটি ওয়াচ টাওয়ার থাকছে পুলিশের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুই হাজারেরও বেশি সদস্য মোতায়েন থাকবে সাদা পোশাকে। ওয়াচ টাওয়ার থেকে মেলা প্রাঙ্গণ ভালোভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য বাড়ানো হচ্ছে আলোকসজ্জা। মেলার নিরাপত্তায় দোয়েল চত্বর থেকে শুরু করে শামসুন্নাহার হল পর্যন্ত রাস্তায় থাকছে ২৫০টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। বাংলা একাডেমিতে, শাহবাগ থানায় ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্থাপিত তিনটি কন্ট্রোল রুম থেকে এসব ক্যামেরা মনিটর করার জন্য থাকছে ১৭টি ইউনিট। ডিএমপির কন্ট্রোল রুম থেকে ২৪ ঘণ্টা মনিটর করা হবে মেলাপ্রাঙ্গণ।

মেলায় থাকছে ২২টি আর্চওয়ে। ভ্যালেন্টাইনস ডে, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ বিশেষ দিনগুলোতে যোগ হবে দুটি স্পেশাল আর্চওয়ে। মেলা উপলক্ষে আসা বিদেশি অতিথিরা চাইলে প্রত্যেককে একজন করে নিরাপত্তাকর্মী দেয়া হবে বলে মেলা আয়োজকরা জানান। প্রতিটি প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মীদের বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে আইডি কার্ড দেয়া হয়েছে, সেগুলো ঝুলিয়ে রাখা বাধ্যতামূলক।

পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) থেকে জানানো হয়েছে, প্রকাশনা সংস্থা থেকে তারা প্রতিটি বিক্রয়কর্মীর তথ্য সংগ্রহ করবেন। বিক্রয়কর্মী পরিবর্তন হলে তা মেলা পরিচালনা কমিটিকে জানাতে হবে।

ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত বইমেলা খোলা থাকবে। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা এবং ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। প্রতি শুক্র ও শনিবারের প্রথম পর্বকে মেলা কর্তৃপক্ষ বলছে শিশু প্রহর। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলবে এই শিশু প্রহর।

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশ নিচ্ছে ৪০৯টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। গ্রন্থমেলা কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদ জানান, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং একাডেমির সামনের ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় চার লাখ বর্গফুট জায়গায় মেলা হবে। মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশকে ১২টি চত্বরে সাজানো হয়েছে।

একাডেমি প্রাঙ্গণে ৮০টি প্রতিষ্ঠানকে ১১৪টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩২৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৫৪৯টি ইউনিট এবং বাংলা একাডেমিসহ ১৫টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ১৫টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ১০০টি লিটল ম্যাগাজিনকে বর্ধমান হাউসের দক্ষিণ পাশে লিটল ম্যাগাজিন কর্নার স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র প্রকাশনা সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে যারা বই প্রকাশ করেছেন তাদের বই বিক্রি/প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের স্টলে। গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বই ৩০ শতাংশ কমিশনে এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে।

এবারও শিশুকর্নার মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে। এই কর্নারকে শিশুকিশোর বিনোদন ও শিক্ষামূলক অঙ্গসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। এবার মেলায় নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। টিএসসি ও দোয়েল চত্বর দিয়ে দুটি প্রধান প্রবেশপথ থাকছে। এরপর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তিনটি পথ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও বেরোনোর আটটি পথ থাকবে। এবারই প্রথম সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য একটি নতুন প্রশস্ত গেইট নির্মাণ করা হয়েছে।

গ্রন্থমেলা উপলক্ষে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন দেশের ছয়জন লেখক-বুদ্ধিজীবীকে ‘আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন লেখক সম্মাননা-২০১৭’ দেয়া হবে।

এছাড়া গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০১৬ সালে প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি ‍পুরস্কার’, ২০১৬ সালের গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থ প্রকাশের জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেয়া হবে। ২০১৬ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্যে থেকে ‘গুণগতমান বিচারে’ সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য ১টি প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই’ স্মৃতি পুরস্কার’ এবং  এ বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেয়া হবে। মেলার শেষ দিন দেয়া হবে ‘সৈয়দ ওয়াল্লীউল্লাহ্ সাহিত্য পুরস্কার-২০১৬’।

বইমেলার সার্বিক আয়োজন নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রকাশকরা। বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম বলেন, এবারের বইমেলায় নিরাপত্তার বিষয়টি শুধু প্রকাশকদের জন্য নয়, একই সঙ্গে পাঠক-দর্শকদের জন্যও জোরদার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে নিরাপত্তা ইস্যুতে আমরা সন্তুষ্ট। মেলাকে সার্বিকভাবে ত্রুটিমু্ক্ত রাখতে আমরা নিজেরাও উদ্যোগী হবো। এ মেলা হবে অন্যরকম এক মেলা।

নিরাপত্তার বিষয়টি শুধু আইন-শৃঙ্খলা রক্বাষাকারী বাহিনীর ওপর ছেড়ে না দিয়ে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। তিনি বলেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থায় যেন কোনো ত্রুটি না থাকে, সে ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা রক্বাষাকারী বাহিনী প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। তবে আমাদের সবাইকে আসলে সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের আশপাশে সন্দেহভাজন কেউ ঘোরাফেরা করছে কি না, তা আমাদেরই লক্ষ্য রাখতে হবে। স্টলের বিক্রয়কর্মীদের মধ্যেও যেন কেউ ঘাপটি মেরে না থাকে সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে।

About Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat