কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে প্রাথমিক বিদ্যালয় পুনরায় চালু করার লক্ষ্যে বিদ্যালয়ের ও অভিভাবকের করণীয়গুলোঃ

0
Array

আমাদের সন্তানেরা আমাদের ভবিষ্যৎ। পৃথিবীর সকল পিতামাতাই সন্তানের সর্বোচ্চ সুরক্ষা চান। কিন্তু বর্তমান বিশ্ব কোভিড-১৯ পরিস্হিতিতে জনস্বাস্হ্য আজ হুমকির সম্মুখীন। গত ১৭ই মার্চ ২০২০ থেকে অদ্যাবধি বিদ্যালয় বন্ধ আছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বাস্হ্যবিধি মেনে পুনরায় বিদ্যালয় খোলার চিন্তাভাবনা করছেন। বিদ্যালয় খোলার পূর্বেই বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষ, ওয়াশব্লক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে পাঠদানের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির নির্দেশনা প্রদান করেছেন।

করোনাকালীন জনস্বাস্হ্য ও স্বাস্হ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে গত ২৭ শে ফ্রেব্রুয়ারী ২০২০ তারিখ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক কর্মচারীদের টিকা গ্রহণ এবং স্বাস্হ্য সুরক্ষা মেনে সকল কার্যক্রম করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আগামী ১২ জুন ২০২১ পর্যন্ত সকল ধরনের বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও ১৩ জুন বিদ্যালয় খুলবে কিনা তাও অনিশ্চিত হয়ে আছে। যদি আমাদের বিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়া হয় তাহলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও অভিভাবকগণের কিছু নিদের্শনা অনুসরণ করা প্রয়োজন। স্বাস্হ্যবিধি মেনে বিদ্যালয়কে শিক্ষার্থীর উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করে রাখা প্রয়োজন যাতে বিদ্যালয়ে এসে শিক্ষার্থীরা কোভিড-১৯ সংক্রমণে পতিত না হয়। প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষকগন নিম্নোক্ত বিষয়গুলো অনুসরণ করলে করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি কিছুটা কম হবে।বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ নিম্নোক্ত কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজ নিজ বিদ্যালয়কেখোলার উপযোগী করবেনঃ
১। প্রতিটি শ্রেণিকক্ষ ও বিদ্যালয়ের ভবন জীবানুমুক্ত রাখতে হবে।
২। বিদ্যালয়ের ওয়াশব্লকে পর্যাপ্ত পানি ও জীবানুমুক্ত হ্যান্ড সেনিটাইজার রাখতে
হবে।
৩। নেপ কর্তৃক প্রণীত বার্ষিক পাঠদান পরিকল্পনা অনুসরণ করে শিক্ষার্থীদের
পূর্বেই ফোনে, মেসেঞ্জারে, জুমে, গুগলমিটের মাধ্যমে পাঠদান কার্যক্রমচালু রাখা
যাতে বিদ্যালয় খোলার সাথে সাথেই শিক্ষার্থীরা পিঁছিয়ে না পড়ে।
৪। বিদ্যালয়ের গেটে মাস্ক ব্যবহার ব্যতীত প্রবেশ নিষেধ। No mask no entry, মাস্ক
পরিধান করুন সেবা নিন, Wear mask get service ইত্যাদি বার্তা দৃশ্যমান স্থানে টানাতে
হবে যাতে মাস্ক পরিধান ও স্বাস্হ্যবিধি প্রতি পালন নিশ্চিত হয়।
৫। শিক্ষার্থীরা যখন বিদ্যালয়ে ঢুকবে তখন তাদের দেহের তাপমাত্রা মাপার জন্য
থার্মাল থার্মোমিটার ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা মাপতে হবে।
সেইসাথে হাত ধোয়া ও মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতে হবে।

৬। যেসব বিদ্যালয়ে অধিক শিক্ষার্থী আছে তারা শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থী বাদ দিয়ে
একেক শ্রেণির বা শাখার শিক্ষার্থীদের একেক দিন বিদ্যালয়ে উপস্হিত করে স্বাস্হ্য
সম্মতভাবে পাঠদান কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন।
৭। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সংশ্লিষ্ট শিক্ষক কর্মচারীর
টিকা দেওয়া নিশ্চিত করবেন।
৮। বিদ্যালয়ের রি-অপেনিং এর যাবতীয় কার্যক্রম ও সমস্যাবলী সময়মত উধ্বর্তন
কর্তৃপক্ষকে অবগত করবেন।
৯। প্রতিটি বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত বেসিন, সাবান, হ্যান্ডওয়াশ ও পানির ব্যবস্হা
উপযুক্ত জায়গায় করবেন যাতে শিক্ষার্থীরা সহজেই নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে
পারে।
১০। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণ নিজ বিদ্যালয়ের কর্মতালিকা বা কার্যক্রম
বিদ্যালয়ের গেটে নোটিশ আকারে টানিয়ে দিবেন।

অভিভাবকদের করণীয়ঃ

শিশুর সুরক্ষার জন্য বিদ্যালয়ের পাশাপশি অভিভাবকদেরও দ্বায়িত্ব ও কর্তব্য কম
নয়। অভিভাবকদের শুধুমাত্র বিদ্যালয়ের উপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজের সন্তানের
সুরক্ষার দায়িত্ব নিজেকেও নিতে হবে। আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের
শিকার। বিদ্যালয়ের ধরন অনুযায়ী এবং অভিভাবকদের আয়ের সামর্থ্য অনুযায়ী
শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে। সমাজের উচ্চবৃত্তদের
ছেলেমেয়েরা ইংরেজি মাধ্যাম ও কিন্ডারগার্টেনে পড়ে আর নিম্নবিত্ত বা
হতদরিদ্রদের সন্তানেরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে থাকে। আপনার
আমার সন্তান যেখানেই পড়ুক না কেন তার সুরক্ষার প্রতি আমাদেরই নজর দিতে হবে।
অর্থাৎ সন্তানদের সবাস্হ্যবিধি মেনে চলা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার দ্বায়িত্ব
বিদ্যালয়ের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও কম নয়। তাই বিদ্যালয় খোলার সাথে সাথে
অভিভাবকরা নিম্ন লিখিত বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখবেন।
১। আপনার সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠানোর পূর্বে নিজে গিয়ে বিদ্যালয়ের পরিবেশ দেখে
আসবেন। যদি বিদ্যালয়ের পরিবেশ অনুকুল ও স্বাস্থ্যসম্মত হয়, পরিস্কার-
পরিচ্ছন্ন হয়, তবেই আপনার সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠাবেন।
২। অভিভাবকগণ নিজ সন্তানকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও মাস্ক পরিয়ে ছোট্ট এক
টুকরা সাবান বা ডিটারজেন্ট প্যাকেট স্কুল ব্যাগে দিয়ে দিবেন যাতে নিজের প্রয়োজনে
নিজের জিনিস ব্যবহার করতে পারে।
৩। কবে কখন কোন দিন আপনার সন্তানের পাঠদান তা নিশ্চিত হবেন।
৪। বিদ্যালয়ের বাহিরের ফেরিওয়ালার খাবার যাতে না খায় সে বিষয়ে আগেই বুঝিয়ে
সাবধান করতে হবে এবং সেই সাথে বাসা থেকে পর্যাপ্ত খাবার ও পানি দিয়ে দিবেন।
৫। শিক্ষার্থী অসুস্হ্যবোধ করলে তাকে বিদ্যালয়ে পাঠাতে নিরুৎসাহী হোন। সেই সাথে
অসুস্হ্য, সর্দিজ্বরে আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের পাশে বসতে নিরুৎসাহিত করুন।

৬। বিদ্যালয়ের শ্রেণি অনুসারে প্রদত্ত সিলেবাস বাসায় প্রস্তুতি নিয়ে সমাপ্ত করুন
যাতে বিদ্যালয় খোলার সাথে সাথে আপনার সন্তান যেন পড়ালেখায় পিঁছিয়ে না পড়ে।
৭। বিদ্যালয় হতে প্রদত্ত ওয়ার্কসিট, হোমওয়ার্ক যথাযথভাবে সম্পন্ন করে
বিদ্যালয়ের শ্রেণি শিক্ষকের কাছে জমা দিন এতে আপনার সন্তানের শিখণ ঘাটতি
কিছুটা হলেও কম হবে।
৮। প্রধান শিক্ষক ও সহশিক্ষকগণের পাঠদান সংক্রান্ত নির্দেশনা অনুসরণ করুন।
৯। বিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রমে অংশগ্রহণসহ যোগাযোগ করুন যাতে আপনি ও
আপনার সন্তান বিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থাকতে পারেন।

আজিজা আক্তার
সহকারি থানা শিক্ষা অফিসার
সেনানিবাস, ঢাকা।
বিভাগীয় শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তা- ঢাকা বিভাগ-২০১৭ খ্রি:
জেলা শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তা- ঢাকা জেলা-২০১৭ ও ২০১৮ খ্রি:

About Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat