তারুণ্যের শক্তিতে গড়া নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি ‘এনসিপি’তে আস্থা মানুষের

শেখ হাসিনা ভারতে পালানোর মধ্যদিয়ে ছাত্রদের জুলাই আন্দোলনের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। সেদিন থেকেই আলোচনায় আসে ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দলের বিষয়টি। ২৮শে ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সংসদ ভবন এলাকায় মানিক মিয়া এভিনিউয়ে এক বিশাল সমাবেশ করে নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দেয়া হয়। নতুন দলের নাম ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ (এনসিপি)। সমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসেন দলের নেতাকর্মীরা। এই সমাবেশে যোগ দেন সাধারণ জনতাও। তাদের চাওয়া নতুন দল বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।
শুক্রবার মানিক মিয়া এভিনিউয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা মানুষের সঙ্গে কথা বললে এমনই কথা ব্যক্ত করেন তারা।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুপুরের পর থেকে একের পর এক মিছিল নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, বিভাগ থেকে মানুষ জড়ো হতে শুরু করেন। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, খুলনা, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, রাজশাহী, গাইবান্ধা ও সিরাজগঞ্জ সহ বিভিন্ন জেলা থেকে বাসে করে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন কর্মী-সমর্থকরা। এ সময় তাদের হাতে জাতীয় পতাকাসহ নানা ধরনের প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুন দেখা যায়। স্লোগান দিতে দিতে তারা সমাবেশস্থলে প্রবেশ করেন। আয়োজনে সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বপালনে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। আজকের আয়োজনকে কেন্দ্র করে মেডিকেল টিম, অস্থায়ী ওয়াশ রুম, পুলিশ বুথ, নারীদের জন্য বুথ, ভিআইপি বুথ ও পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আবু বকর সিদ্দিক এসেছেন মুন্সিগঞ্জ থেকে। তিনি বলেন, নিজ উদ্যোগে রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে সকালেই এখানে এসেছি। ছাত্র-তরুণদের নতুন এ দলকে আমরা স্বাগত জানাই।
রাজশাহী থেকে প্রায় ১৪টির মতো বাস এসেছে বলে জানান রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী রুহুল আমিন রিফাত। তিনি বলেন, আমরা যারা এসেছি আজকের এই সমাবেশে, তাদের বেশিরভাগই জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। আজকে জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশকে কেন্দ্র করে সকালে রওনা দিয়ে আমাদের বাস ঢাকায় আসছে বেলা ১২ টায় ।
মো. আকাশ রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, মানুষ এখন নতুন নেতৃত্ব চায়। ছাত্রদের হাতে দেশ থাকলে দেশ নিরাপদ ও দুর্নীতিমুক্ত থাকবে। আমরা ছাত্ররা স্বত:স্ফুর্তভাবে নতুন এই দলকে নিয়ে গর্ব করি।
জাকির হোসেন ঢাকার লালমাটিয়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি বলেন, আমি আমার নিজের জায়গা থেকে এই নতুন নেতৃত্বকে স্বাগত জানাতে আসছি। ছাত্ররা দেশের আমূল পরিবর্তন করতে পারবে বলে বিশ্বাস করি।
লালমনিরহাট থেকে আসছে দুইটি বাস। পল্লি চিকিৎসক মো. আনিসুর রহমান বলেন, বেলা ১১ টার দিকে আমরা আসছি। রাতে রওনা দিয়েছিলাম। শেখ হাসিনা সরকার মানুষের উপর যে জুলুম নির্যাতন চালিয়েছে। তার বিচার করতে পারবে একমাত্র ছাত্ররা। ছাত্ররা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনোকিছুই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে আটকিয়ে রাখতে পারবে না বলেও জানান তিনি।
একই এলাকার আশিকুল ইসলাম বলেন, দেশে যখন যে দল ক্ষমতায় এসেছে, তারা সবাই দেশটাকে লুটেপুটে শেষ করেছে। আমরা আর এমন বাংলাদেশ দেখতে চাই না। নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশকে আমরা স্বাগত জানাই। ছাত্র-তরুণরা দেশে আমূল পরিবর্তন করবে বিশ্বাস করি। তাদের হাতে দেশ নিরাপদ। তাদেরকে শুধু সঠিকভাবে গাইড করতে হবে।
জয় নামে সিরাজগঞ্জ থেকে আসা এক শিক্ষার্থী বলেন, সিরাজগঞ্জ থেকে আমার তিনটি বাসে ১৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ আসছি। আমাদের দেশ নতুন করে গড়তে হবে। সেক্ষেত্রে সব রাজনৈতিক দলকে মোটামুটি আমরা চিনি জানি। ছাত্র তরুণদের জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি দেশে পরিবর্তন রচনা করবে। সকল জুলুম, অন্যায় , অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধ করে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারবে। আমার চাই নতুন এই দল দেশে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে জুলাই অভ্যুত্থানের মত।
একই এলাকার মাহি হোসাইন বলেন, দেশের জন্য কাজ করতে আমরা প্রস্তুত আছি। আমরা ছাত্ররা নতুন দলের আমাদের বড় ভাইদের গাইডলাইন মেনে কাজ করবো। এদেশের মানুষ নতুন দলের কাছে নতুন কিছু প্রত্যাশা করে। তারা যদি সঠিকভাবে দেশের মানুষের চাওয়াগুলো বুঝে কাজ করেন। অবশ্যই জাতীয় নাগরিক পার্টি হবে জনতার পার্টি, মানুষের আস্থার জায়গা।
অনেকে বলছেন, নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিরোধ-সংঘাতে না জড়িয়ে সৃজনশীল কর্মসূচির মাধ্যমে এগিয়ে গেলে বেশি সফলতা পাবে। পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলো জনমানুষের যেসব আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে সেগুলো চিহ্নিত করা এবং সেসব আকাঙ্ক্ষা পূরণের কর্মকৌশল নতুন দলকে এগিয়ে রাখতে সাহায্য করবে বলেও প্রত্যাশা করেন তারা।