শ্রমিক বিক্ষোভ আশুলিয়া ষড়যন্ত্র

0
126237_f1
Array

কোনো ইস্যু ছাড়াই সাভারের আশুলিয়া এলাকার তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের আন্দোলনে নামিয়েছিল একটি অদৃৃশ্য পক্ষ। একেক জায়গায় একেক কথা বলে শ্রমিকদের রাস্তায় নামানো হয়। তাদের সম্মিলিত কোনো দাবি ছিল না।স্থানীয়রা বলছেন পেছনে থাকা একটি পক্ষের রাজনৈতিক যোগাযোগ রয়েছে। পোশাক শ্রমিকদের মাঠে নামিয়ে পরিকল্পিতভাবে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে চক্রটি। আন্দোলনে সাধারণ শ্রমিকদের পাশাপাশি অবস্থান নেয় অনেক বহিরাগত। বেতন বৃদ্ধির দাবির কথা বলায় এই আন্দোলনে সাড়া দেন শ্রমিকরা। কিন্তু সেখানে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি অস্থিশীল করে তোলেন নেতৃত্ব দেয়া এসব বহিরাগতরা। বুধবার ভাঙচুর শুরু করেন বহিরাগতরাই। বন্ধ কারখানাগুলোর শ্রমিকরা সড়কে অবস্থান নেন। আর চালু থাকা কারখানার শ্রমিকদের উত্তেজিত করে বিক্ষোভ করার কথা বলেন।

গতকাল আশুলিয়ায় কয়েকটি এলাকার বেশ কয়েকটি পোশাক ও অন্যান্য কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানা যায়।
আন্দোলনের শুরু হয় যেসব কারখানা থেকে তারমধ্যে একটি আশুলিয়ার পার্ল গার্মেন্টস। তারা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন ২৮শে আগস্ট। শুরুতে তারা মৌখিকভাবে দাবির কথা জানায়। আন্দোলনে অংশ নেয়া এক ব্যক্তি বলেন, আমাদের মূলত দাবি ছিল হাজিরা বোনাস ৮০০ টাকা করার দাবিতে। এরপর আমরা লিখিতভাবে জানাই। গার্মেসন্ট থেকে আমাদের জানানো হয় বিষয়টি নিয়ে মালিকদের সঙ্গে কথা বলবেন। এরপর আমরা যথারীতি কাজ করছিলাম। এরপর আমাদের সঙ্গে জুয়েল নামে এক ব্যক্তি যোগাযোগ করে। তিনি শিমুলতলা এলাকার দি ড্রেস অ্যান্ড দি আইডিয়াস পোশাক কারখানার শ্রমিক হিসাবে পরিচয় দেন। তার সঙ্গে থাকা সাইফুল ইসলাম পরিচয় দেন জামগড়ের আলীস জেন্টস ড্রেসাপ নামে প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক। দি ড্রেস অ্যান্ড দি আইডিয়াস নামে কারখানার খোঁজ পাওয়া গেলেও আলীস জেন্টস ড্রেসাপ নামে কোনো প্রতিষ্ঠান আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, এখনই আমাদের সময় বেতন বৃদ্ধি করার। আমাদের শুধু বেতন ও ওভার টাইম হাজিরা ৮০০ টাকা করার কথাই বলা হয়। গত ২৯শে আগস্ট আমাদের দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। আমরা কি করবো তখন বুঝতে পারছিলাম না। এরপর সেদিন রাতে এই দুই নেতা আবারও আসেন। তারা বলেন, এখুনি সময় দাবি আদায় করে নেবার। এখন নতুন সরকার আমাদের দাবি তুলে বেতন বাড়িয়ে নিতে হবে। গত ৩১শে আগস্ট আমরা মাঠে নামি। কারণ হিসেবে বলেন, আমাদের বেতন খুবই কম। আমরা প্রচুর পরিশ্রম করি। একটা আন্দোলন করে যদি বেতন বাড়িয়ে নেয়া যায় তাহলে ক্ষতি কি?

৩১শে আগস্ট আন্দোলনে নামা আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমরা আমাদের দাবি জানিয়ে সড়কে বিক্ষোভ করছিলাম। এ সময় কিছু লোক এসে বলতেছে সড়ক আটকাইতে। আন্দোলনে অধিকাংশই ছিল নারীকর্মী। তারা নানা ধরনের উসকানি দিয়ে তাদের সামনে পাঠিয়ে দেয়। ইসমত আরা নামে এক সুইং অপারেটর বলেন, আমরা স্ল্লোগান দিচ্ছিলাম আর যাদের চিনি না তারা ঢিল মারছিল। আর লাঠি দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ভাঙছিল। এরপর আমাদের অনেকেই ঢিল দেয় কিন্তু তারা শুরু করে দিয়ে পিছনে চলে যায়।

অত্র এলাকার একটি সিরামিক ও পোশাক কারখানায় ভাঙচুর চালানো হয়। সিরামিক কারখানাটি নির্দিষ্ট কোনো কারখানার নয়। এখানে বিভিন্ন কারখানার উদ্বৃত্ত কাজ করা হয়। এই সিরামিকের সামনে থাকা দোকানদারদের সঙ্গে ঘটনার বর্ণনা পাওয়া যায়। গত ৪ তারিখ আন্দোলন করছিলেন শ্রমিকরা। এ সময় একদল লোক এসে দেয়াল টপকে ঢুকে পড়ে কারখানায়। এরপর তারা একটি পকেট গেট খুলে দিয়ে বের হয়ে আসে। সেখানে প্রবেশ করে আন্দোলনকারীরা। কিছু সময় থাকার পর পুলিশ চলে আসায় সরে যায় তারা।

সাঈদ নামে এক দোকানদার বলেন, যারা লাঠিসোটা হাতে প্রথম ঢুকেছিল তাদের আগে দেখি নাই। আর তাদের দেখে মনেও হচ্ছিল না শ্রমিক। তারা সামনে থাকা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা লোকদের লাঠি তুলে ভয় দেখিয়ে সরিয়ে দেয়। একজনকে চড় থাপ্পড়ও মেরেছে। দোকানে থাকা শহিদুল ইসলাম বলেন, এরা আন্দোলনকারীদের ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরে পাহারা দিচ্ছিল আর উসকানি দিচ্ছিল যাতে ভাঙচুর করে। আগুন লাগিয়ে দেয়ার কথাও বলছিল। তারা সংখ্যায় আট থেকে ১০ জনের মতো ছিল।

আশুলিয়ার জামগড় এলাকায় রয়েছে বেশক’টি গার্মেন্ট। এই এলাকায় প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক বেশ জোরালোভাবে ক’দিন ধরে আন্দোলন করেন। গত ৪ তারিখ কয়েকটি কারখানায় ভাঙচুর চালানো হয়। গতকাল জোহরের নামাজের পর বেশ কয়েকজন আলোচনা করছিলেন। এ সময় শরিফুল নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমাদের বেতন যে খুবই কম এটাতো মানতেই হবে। তবে আমরা চাই না আমাদের আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যাক। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের বেতনের দাবি কাজে লাগিয়ে একপক্ষ আমাদের সামনে ঠেলে দিচ্ছে। কিন্তু আমরা যে ব্যবহার হচ্ছি- সেটাও বুঝতে পারতেছি।

তাদের আন্দোলনে নামার জন্য একত্র করেছেন সজীব নামে এক ব্যক্তি। তিনি গাজীপুরের শ্রমিক নেতা বলে পরিচয় দেন তাদের। তার সঙ্গে ছিল আরেক ব্যক্তি। তারা কেউই ফোনে যোগাযোগ করতেন না। তারা আমাদের বলেন- আপানার শুধু আন্দোলনে নামবেন। আমরা আপনাদের দাবি নিয়ে কথা বলবো। এরপর গত মঙ্গলবার ও বুধবার জামগড় সড়কে তারা আগেই উপস্থিত ছিলেন। তারা আমাদের পিছনে রেখে সামনে সড়কে আগেই নেমে যায়। এরপর আমরা যাই প্রথমে তারা স্লোগান ধরে। এরপর সরে আসে।

গত বুধবারে গাড়ি ভাঙচুরের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ১০/১৫ জনের এই গ্রুপটা আমাদের নানা বক্তব্য দিয়ে উত্তেজিত করে তোলে। তারা বলে, আমাদের রক্ত-ঘামে ইনকাম করে তারা বিলাসবহুল বাড়িতে থাকে। গাড়িতে চড়ে। আমাদের পেটে ভাত জোটে না। এসব নানা কথা বলে ক্ষিপ্ত করে তোলে। এরপর তাদের কয়েকজন লোক গাড়িকে লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়তে থাকে।

এই তিনজনের বাইরে শ্রমিকদের ক্ষিপ্ত করে তোলার কাজ করেন ইসতিয়াক আহমেদ হৃদয় নামে এক ব্যক্তি। তিনি আন্দোলন চলাবস্থায় মোটরসাইকেলে করে বিভিন্ন পয়েন্টে গিয়ে শ্রমিকদের উত্তপ্ত করে তুলতেন। তার সঙ্গে থাকা আর দুই মোটরসাইকেলে থাকা চারজন কাউকে ভিডিও করতে দিতেন না। এক আন্দোলনকারী তার কয়েক সেকেন্ডের একটি ভিডিও ধারণ করেন। সেখানে বলতে শোনা যায়, আপনাদের গার্মেন্ট মালিকরা আপনাদের টাকা দিচ্ছে না। আপনাদের শ্রম দিয়ে যে মেশিন চলে সেই মেশিন দিয়ে তারা টাকা ইনকাম করে। আপনারা টাকা আদায়ে রাস্তায় থাকবেন না আপনারা গার্মেন্টে যান। যে মেশিন দিয়ে পোশাক বানান সেই মেশিনগুলো ছিনিয়ে নিয়ে আসুন।

এই উসকানি দেয়া চার ব্যক্তির পরিচয় জানতে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা হয়। অধিকাংশরাই তাদের ঠিকমতো চেনেন না। আবার অনেকেই বলেন, এই চারজনই সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানের লোক। তবে এই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কিন্তু কেন এই বিশৃঙ্খলা? এই বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রমিকরা জানান। এটা মূলত ঝুট ব্যবসার কারণে। গার্মেন্টে কোটি কোটি টাকার ঝুট ব্যবসা হয়। যেগুলো মূলত স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতারা নিয়ন্ত্রণ করতেন। এখন তাদের অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ায় এই ব্যবসা হাত ছাড়া হবার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ কারণেই একটা পক্ষ শ্রমিকদের উসকে দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করবার চেষ্টা করছে কিংবা নতুন যারা ব্যবসার হাল ধরবেন তারা এগুলো করাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ কারখানায় কাজ চলছে। কয়েকটি কারখানার সামনে বিক্ষোভ করছিলেন শ্রমিকরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া পাহারাও চোখে পড়ে। সেইসঙ্গে কারখানার স্টাফরাও লাঠিহাতে পাহারা দিচ্ছিলেন।

আশুলিয়ায় বহিরাগতদের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ, আহত অন্তত ৩০

সাভার থেকে জানান, আশুলিয়ায় চলমান অস্থিরতার মধ্যে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে স্থানীয় লোকজনের সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৩০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় নারী ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে বেশকিছু কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে অধিকাংশ কারখানাতেই স্বাভাবিক উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে শিল্প পুলিশ। এছাড়া ইটপাটকেলের আঘাতে শিল্প পুলিশের সদস্য আহতসহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে দুইজনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন স্থানীয়রা। সরজমিন আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কারখানার নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু স্টাফ মূল ফটকে অবস্থান করছেন। কোথাও দাবি আদায়ে শ্রমিকরা কারখানার সামনে অবস্থান নিয়েছেন। তবে বুধবার যেসব কারখানা বন্ধ ছিল, সেগুলোর অধিকাংশেই কাজ চলছে। এর মধ্যে সকালে অনন্ত গার্মেন্টস’র শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশ করলেও কাজ না করে বিভিন্ন দাবি আদায়ে কাজ বন্ধ করে বসে থাকে। এ সময় মালিকপক্ষ শ্রমিকদের কিছু দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলেও শ্রমিকরা তা না মেনে কারখানা থেকে বেরিয়ে যায়। কারখানায় বিশৃঙ্খলা করে বেরিয়ে যাওয়ার পথে অতর্কিতভাবে ৫০-৬০ জন ব্যক্তি লাঠিসোটা হাতে হামলা চালালে বেশক’জন শ্রমিক আহত হন। একই ঘটনা ঘটে পার্শ্ববর্তী নিউ এইজ কারখানায়। সকালে শ্রমিকরা কারখানাটিতে প্রবেশ করলেও ভেতরে ঢোকার কিছুক্ষণ পরই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কাজ করবে না জানিয়ে বেরিয়ে যায়। পরে মালিকপক্ষ কারখানাটি ছুটি ঘোষণা করে। প্রত্যক্ষদর্শী ও আহত শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকালে আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকার কয়েকটি কারখানার আশপাশে স্থানীয় ৫০-৬০ জনের একটি গ্রুপ লাঠিসোটা হাতে অবস্থান নেয়। পরে আন্দোলনকারী শ্রমিকরা কাজ না করে কারখানা থেকে বেরিয়ে এলে লাঠিয়াল গ্রুপটি তাদের উপর হামলা চালায়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৩০ জন শ্রমিক আহত হন। শ্রমিকদের বিক্ষোভের মুখে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পর্যায়ক্রমে বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের জিরাবো এলাকা পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে অবস্থিত বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। নরসিংহপুর এলাকার শারমিন গ্রুপের কারখানাগুলো বুধবার সকালে বন্ধ ঘোষণা করা হলেও সেগুলোতে উৎপাদন চলছে। এ সময় কারখানার সামনে পুলিশের পাশাপাশি কয়েকজন যুবকে লাঠি হাতে পাহাড়া দিতে দেখা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক নিজেকে শারমিন গ্রুপের স্টাফ দাবি করে বলেন, আমরা কারখানার নিরাপত্তায় সড়কের পাশে অবস্থান নিয়েছি। কারণ অন্য কারখানার শ্রমিক ও চাকরি প্রত্যাশীর নামে বহিরাগতরা কারখানায় হামলা করে। শারমীন গ্রুপের নিরাপত্তাকর্মীরা জানান, দুপুর ১২টার পর কারখানার শ্রমিকরা কাজ না করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় নিরাপত্তাকর্মীদের মারধর করে। এতে রাশেদুল গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য আশুলিয়ার নারী ও শিশু হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির তৈরির অভিযোগে নরসিংহপুর এলাকা থেকে স্থানীয় জনতা দুইজনকে আটক করে শিল্প পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে।

গাজীপুরে নিরাপত্তা জোরদার করে কল-কারখানা চালু

গাজীপুর থেকে জানান, গাজীপুরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে খুলে দেয়া হয়েছে তৈরি পোশাক কারখানাসহ সকল শিল্পপ্রতিষ্ঠান। গতকাল সকাল থেকে দলে দলে শ্রমিকেরা কারখানায় প্রবেশ করেছেন। কারখানা এলাকার নিরাপত্তায় শিল্প পুলিশ মোতায়েন করা রয়েছে। টহলে রয়েছেন সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যরা। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকেও বিভিন্ন স্থানে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার লক্ষ্যে মানববন্ধন করা হয়েছে।

গত কয়েকদিন শ্রমিক অসন্তোষ, বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ, কারখানা ভাঙচুরের ঘটনায় গাজীপুরে বেশকিছু কারখানায় ছুটি ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। পরে বুধবার বিজিএমইএ’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ও সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার আশ্বাস পেয়ে বৃহস্পতিবার থেকে সকল কারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেন মালিকরা। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গাজীপুরের টঙ্গী, বোর্ডবাজার, ভোগড়া, কোনাবাড়ী, কাশিমপুরসহ শিল্পাঞ্চলের কারখানাগুলো খোলা হয়। কাজে যোগ দিয়ে উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন শ্রমিকরা। কর্মচারী ও কর্মকর্তাগণ কারখানায় এসেছেন। নগরের ছয়দানা এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে এলাকাবাসী ও কারখানা মালিকপক্ষ বিশৃঙ্খলা মোকাবিলার লক্ষ্যে সকালে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।

আয়োজকরা বলছেন, ষড়যন্ত্রকারীরা যাতে হামলা চালিয়ে, ভাঙচুর করে শিল্পখাতে নৈরাজ্যের সৃষ্টি ও ক্ষতি করতে না পারে, সেজন্যই তারা মাঠে রয়েছেন। গাজীপুর শিল্পাঞ্চল-২ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান আহম্মেদ জানান, সব কারখানাই খোলা রয়েছে। কারখানা এলাকায় নিরাপত্তায় প্রায় ৯০০ শিল্প পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া বিজিবি ও সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে।

শিল্পাঞ্চলের অস্থিরতা নিরসনে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচ উপদেষ্টা জরুরি বৈঠকে বসেন। পরে শ্রম ও কর্ম সংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে অ্যাকশন শুরু হবে। যারা ইন্ধন দিচ্ছে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে যে তথ্য রয়েছে, সেটার ভিত্তিতে তাদের (ইন্ধনদাতাদের) গ্রেপ্তার করা হবে। সেখানে যে জনদুর্ভোগ তৈরি হয়েছে, সেটার জন্য পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।

About Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat