এই ফ্যাসিবাদী অগণতান্ত্রিক সরকারের পতন ছাড়া আদিল-এলানদের চূড়ান্ত মুক্তি সম্ভব নয়
গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, আদিলুর রহমান, নাসির উদ্দিন এলান, খাদিজাসহ মানুষের অধিকার রক্ষায় কাজ করা ব্যক্তিদের গ্রেফতার করার সংস্কৃতি বাংলাদেশে নতুন নয়। অগণতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৫ বছর ধরে এটি করে আসছে। তাই শুধু তাদের মুক্তি দাবি করলেই এই নিপীড়ন থেকে চূড়ান্ত মুক্তি মিলবে না। আজ একজনকে মুক্তি দিলে কাল তারা আরও পাঁচজনকে গ্রেফতার করবে। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে অবশ্যই এই ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটাতে হবে। গতকাল বিকেলে নিপীড়ন বিরোধী ছাত্র-জনতার আয়োজনে মানবাধিকার কর্মী আদিলুর রহমান খান ও নাসির উদ্দিন এলানসহ সাইবার নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতারকৃত সকলের মুক্তির দাবিতে রাজধানীর শাহাবাগে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
নুর বলেন, আগামী দুই মাস বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের ভোটাধিকার, মানবাধিকার ও দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে কে বাম কে ডান- সেটি আর দেখার সুযোগ নেই। সবাইকে একসঙ্গে রাজপথের নেমে আসতে হবে। যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমেই কেবল এই ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব। সমাবেশে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বলেন, পৃথিবীর কাছে আমাদের এক নতুন পরিচয়ের সৃষ্টি হয়েছে।
সেটি হচ্ছে নিশীথ ভোটের দেশ, বাংলাদেশ। সরকার উন্নয়নের মুলা ঝুলিয়ে দিয়ে দেশে একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে, মুক্তিযুদ্ধের প্রথম লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা। তার কোনোটি বর্তমান বাংলাদেশে নেই।
সমাবেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুম বলেন, মানবাধিকার কর্মীরা মানুষের অধিকার রক্ষার সেফগার্ড। অথচ আজ তারাই শাসকগোষ্ঠীর নির্যাতনের শিকার। আইন সকলের জন্য সমান এই চিরন্তন সত্যটি আওয়ামী লীগ সরকার দেশ থেকে মুছে ফেলেছে। তারা আইনকে সব সময় মানুষকে নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এসেছে। এই সরকার কোনো কালেই জনগণের পক্ষে ছিল না। তাদের নিপীড়ন, আগ্রাসী আচরণ সহ্যের সব সীমা অতিক্রম করেছে।
নারীপক্ষের সংগঠক শিরীন হক বলেন, সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত রাজপথে এসে দাঁড়াতে হবে। আমরা সব নিপীড়নমূলক আইনের পরিবর্তন চাই, মানবিক রাষ্ট্র চাই। আমাদের নামকরা মানবাধিকারকর্মীদের কীভাবে প্রকাশ্যে বিনা অপরাধ গ্রেফতার করা হল সেটি আমরা সবাই দেখলাম। নিপীড়িত মানুষের পক্ষে কথা বলায় তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের দ্রুত নিঃশর্ত মুক্তি দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং (বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড) বন্ধ করার কথা বলি। আমাদের জুডিশিয়াল কিলিংয়ের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হতে হবে। কালো আইনের মাধ্যমে নিরপরাধ মানুষরা নির্যাতনের শিকার হবে এটি কোনোভাবে মেনে নেয়া যাবেনা। ঘুমের শিকার স্বামীর সন্ধানে মাসের পর মাস বিভিন্ন জায়গায় ধরনা দিয়েও কোন প্রতিকার পাননি উল্লেখ করে নাসরিন জাহান স্মৃতি নামে এক নারী বলেন, মন্ত্রীরা অসভ্য বডি ল্যাঙ্গুয়েজে বলেন- দেশে গুম, খুন নেই। অথচ দেশে প্রতিনিয়তই সরকারবিরোধীদের ঘুম করা হচ্ছে। স্বামী ঘুমের পর দুঃসহ দিনগুলোতে সব থেকে বেশি কাছে পেয়েছি আদিলুর রহমান ভাইকে। আজ তাকেই সরকার গ্রেফতার করেছে। সমাবেশ আরও বক্তব্য রাখেন মায়ের ডাকের প্রধান সমন্বয়ক আফরোজা আখি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সি আর আবরার সাংবাদিক ও কথা সাহিত্যিক মাহবুব মোর্শেদ প্রমুখ।