সাকিবের কাছে দলই এখন সব

0
Shakib
Array

ভালো সময়ে সব পরিবারকে দেখেই মনে হয়, এরাই বুঝি সবচেয়ে সুখে আছে! এদের কোনো দুঃখ-কষ্ট নেই। সময়ের একটু খরস্রোত বিভেদের রেখাগুলো স্পষ্ট করে তোলে। অতিচেনা চেহারাটাকেও তখন মনে হয় অচেনা।
গত দুটি বছর সুখী পরিবারের মতোই কাটিয়েছে বাংলাদেশ দল। এখনো তা-ই আছে। নিউজিল্যান্ডের কাছে একটা ওয়ানডে সিরিজ হারেই তো আর সব এলোমেলো হয়ে যায়নি। অন্তত খেলোয়াড়দের সম্পর্কে কোনো অস্বস্তির কাঁটা মাথা তোলেনি এখনো। পালা করে তাঁদের অনেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন নিউজিল্যান্ডপ্রবাসী সাবেক ক্রিকেটার আল শাহরিয়ারের সঙ্গে। তবে একটা চোরা কাঁটার সন্ধান যেন মিলছে। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে খেলোয়াড়দের মতের মিলগুলো খুব সূক্ষ্ম হলেও ফুটে উঠছে।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার পর কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের কথায়ও ছিল সেই ক্ষোভ। অন্য অনেককেই হয়তো এ নিয়ে প্রশ্ন করলে ধরি মাছ না ছুঁই জাতীয় কোনো উত্তর দিতেন। কিন্তু সোজাসাপটা প্রশ্নে সাকিব আল হাসানও যে বরাবরই সোজাসাপটা! নেলসন পার্কে কাল প্রসঙ্গটা তুলতেই সাকিবের কাঠখোট্টা জবাব।
এ নিয়ে প্রথম প্রশ্ন ছিল, সিনিয়ররা ঠিকভাবে দায়িত্ব নিচ্ছেন না বলে যে অভিযোগ উঠছে, সেটা তিনি মানেন কি না?
সাকিব: একটা দলে খেলে ১১ জন, দায়িত্ব সবারই। সিনিয়র-জুনিয়রের ব্যাপার নেই। দিন শেষে দলটা বাংলাদেশ। জিতলে সবাই জেতে, হারলে সবারই দায়। সিনিয়র-জুনিয়র ব্যাপারটি আমার কাছে উপযুক্ত মনে হয় না। এখানে সবারই আলাদা দায়িত্ব আছে এবং সেটি সবার পালন করা উচিত। কেউ নতুন আসবে বলে পারবে না, এমন নয়। আমরা মনে করি, যে-ই দলে আসে তার কিছু করার ক্ষমতা আছে বলেই আসে এবং তা পারবেও।
সাকিব কার কথা বোঝাতে চাইলেন, সেটা মোটামুটি স্পষ্ট। তবে তিনি যেহেতু কারও নাম বলেননি, এখানেও সেটা ঊহ্যই রাখা হলো। ওয়ানডে সিরিজের দলে আসার পর থেকেই ওই ক্রিকেটারের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে সমালোচনা। পরশু কোচ বলেছেন, নির্বাচকেরাই নাকি তাঁকে ক্যাম্পে এনেছেন। এ সময় প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন খুব কাছেই দাঁড়িয়ে শুনছিলেন হাথুরুসিংহের কথা।
সাকিব: আমরা এখনো বিশ্বাস করি যে জিততে পারি। ছেলেরা দেখিয়েছে যে অন্তত তারা কিছু করতে পারে। আগে যে দুবার এখানে এসেছি, একটুও ভালো করতে পারিনি আমরা। এবার ফলাফল হয়তো খুব ভালো বলছে না, তবে অনেক উন্নতির ছাপ রাখতে পেরেছি। সেটিকে ইতিবাচকভাবে নিলে টি-টোয়েন্টি সিরিজে আরও ভালো করা সম্ভব।
সিনিয়রদের বেশি করে দায়িত্ব নেওয়ার প্রসঙ্গ এখানেই চলে আসছে। সাকিবের তাতেও ভিন্ন মত, ‘যদি চিন্তা করেন যে সিনিয়ররাই সব করবে, তাহলে তো হবে না (হাসি)। তাহলে তো আপনি পাঁচজন ক্রিকেটার নিয়ে খেলছেন। কিন্তু আপনি তো পাঁচজন নিয়ে খেলছেন না, তাই না? ছয়জন জুনিয়র ক্রিকেটার যখন খেলবে, তাদেরও কিছু কাজ থাকবে।’
দলের সিনিয়র খেলোয়াড়দের কখনো কখনো নিজের জন্যও খেলতে হয়। দলের প্রয়োজনে তো বটেই, নিজের প্রয়োজনেও। সাকিব বলছেন ভিন্ন কথা। নিজের জন্য যেন আর কিছুই চাওয়ার নেই তাঁর, ‘একটা সময় হয়তো নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে চিন্তা করার সময় ছিল। এখন আমার কাছে ব্যক্তিগত বিষয়গুলো কোনো ব্যাপারই নয়। দলের জন্য অবদান রাখতে খেলি। করতে পারলে ভালো লাগে। না পারলে খারাপ লাগে।’
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে তাহলে খারাপ সময়ই কেটেছে সাকিবের। সেটা পোষানো যায় একভাবেই—টি-টোয়েন্টি সিরিজে বড় কিছু করে দেখানো। হতে পারে সেটা সাকিবের অন্য সব কীর্তির চেয়েও বড়।

About Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat