রেকর্ড রানে আয়ারল্যান্ডকে হারালো বাংলাদেশ

0
cricket
Array

জিততে হলে রেকর্ড রান তাড়া করে জিততে হতো আয়ারল্যান্ডকে, করতে হতো ৩৩৯ রান। তবে পুরো ৫০ ওভারও খেলতে পারেনি দলটি, ৩০.৫ ওভারে মাত্র ১৫৫ রানে থেমে গেছে তাদের ইনিংস। ১৮৩ রানের রেকর্ড জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। রানের হিসেবে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয় এখন এটিই। ফলে সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল টাইগাররা।

পল স্টার্লিং আর স্টিফেন ডুহিনির উদ্বোধনী জুটিতে বাংলাদেশকে চমকে যায় বাংলাদেশ। শুর‍ুটা দেখে-শুনে করলেও সময়ের সাথে সাথে হাত খুলতে থাকেন আইরিশ দুই ওপেনার। ১১.২ ওভারে স্টিফেন ডুহিনিকে যখন মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ বানান সাকিব আল হাসান, ততক্ষণে ৬০ রান উঠে গেছে স্কোরবোর্ডে৷ ডুহিনি করেন ৩৮ বলে ৩৪ রান।

দ্বিতীয় উইকেটের দেখা পেতে দেরি করতে হয়নি, আরেক ওপেনার পল স্টার্লিংকে ফেরান এবাদত হোসেন। ৩১ বলে ২২ রান করে আউট হন স্টার্লিং। এক ওভার পরেই হ্যারি টেক্টরকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন এবাদত। পরের ওভারেই আইরিশ অধিনায়ক এন্ড্রু বালবির্নির উইকেট ভাঙেন তাসকিন আহমেদ। ১২ বলে ৫ রান করেন বালবির্নি।

এক ওভার পরেই ফের আঘাত হানেন তাসকিন আহমেদ, এবার ফেরান লরকান টেকারকে। ৮ বলে ৬ রান করা টেকারকে ইয়াসির আলীর ক্যাচ বানান তিনি। ফলে বিনা উইকেটে ৬০ রান করা আয়ারল্যান্ড পরের ১৬ রান যোগ করতেই হারায় ৫ উইকেট। ফলে সেখানেই ম্যাচের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় বাংলাদেশ।

এরপর একক লড়াই চালান জর্জে ডকরেল, কার্টিস ক্যাম্ফারকে নিয়ে গড়ে তুলেন ৩৩ রানের জুটি। সেই জুটি ভাঙেন নাসুম আহমেদ। ২৫তম ওভারে ক্যাম্ফারকে ১৬ ফেরান তিনি। পরের ওভারেই গ্যারেথ ডিলানিকে ১ ও ম্যাকবির্নিকে ফিরিয়েছেন গোল্ডেন ডাক উপহার দিয়েই। ফলে ১১৮ রানেই ৮ উইকেট হারায় আয়ারল্যান্ড। শেষদিকে মার্ক এডায়েরের সাথে ১৯ বলে ২৬ রানের জুটি গড়ে ডকরেল শুধু হারের ব্যবধানটাই কমিয়েছেন। দু’জনকেই ফিরিয়েছেন এবাদত হোসেন। ডকরেল করেন ৪৫ রান।

এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে স্বাগতিক সমর্থকদের হতাশ করেন সাকিব আল হাসান ও তৌহিদ হৃদয়। খুব কাছে গিয়েও শতক হাতছাড়া করেন উভয়েই। সাকিব আউট হন ৯৩ আর আর হৃদয় হৃদয় ভাঙেন ৯২ রানে। তবে দু’জনের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৩৩৮ রান সংগ্রহ করেছে টাইগাররা।

অবশ্য পাওয়ার প্লের মাঝে দুই ওপেনারকে হারিয়ে অস্বস্তিতে পড়ে যায় বাংলাদেশ। তৃতীয় ওভারেই ফেরেন তামিম ইকবাল খান। দলীয় ৩য় ওভারে মার্ক এড্যায়ারের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি, আউট হবার আগে করেন ৯ বলে মাত্র ৩ রান৷ তবে শুরুতেই অধিনায়ককে হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যাওয়া বাংলাদেশকে পথ দেখায় দ্বিতীয় উইকেট জুটি।

লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্ত মিলে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে যোগ করেন ৪৪ বলে ৩৪ রান। যখন মনে হচ্ছিলো এবার পাল্টা আক্রমণে যাবে টাইগাররা, তখনই স্টার্লিংকে ক্যাচ অনুশীলন করান লিটন, পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ৩১ বলে ২৬ রান করে ফিরেন তিনি। ১০ ওভার শেষে ২ উইকেট হারিয়ে ৫০ রান আসে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে।

লিটন আউট হবার পর সবাইকে অবাক করে চার নাম্বারে নেমে আসেন সাকিব আল হাসান। আগের দিনই প্রধান খোঁজ বলেছিলেন, যখন যেখানে প্রয়োজন, সেখানেই সাকিব আল হাসানকে খেলাবেন। সেই সূত্রে যেন আজ আগেভাগে সাকিবের নেমে আসা৷ শুধু শুধুই নেমে আসেননি সাকিব, রেখেছেন কোচের বিশ্বাস। ৪৯ রানে ২ উইকেট হারানো দলটাকে রেখে সাকিব যখন ফিরলেন, দলের রান তখন ৪ উইকেটে ২১৬।

অবশ্য একক কৃতিত্ব দেয়া যায় না সাকিবকে, তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন তৌহিদ হৃদয়। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি হয়েছেন সাকিবের পথেরই পথিক। প্রথমে শতক না স্পর্শ করতে পারার আক্ষেপ নিয়ে ৮৯ বলে ৯৩ রানে ফেরেন সাকিব, অতঃপর সেই আক্ষেপ আরো বাড়িয়ে দেন হৃদয়। সাকিবের মতোই খুব কাছে গিয়েও নিরাশ করেছেন তিনি। ৮৫ বলে ৯২ রানের ইনিংস খেলে ফেরেন হৃদয়।

অবশ্য আউট হবার আগে দেশের ক্রিকেটের একটা রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন তৌহিদ, নাসিরকে পেছনে ফেলে ওয়ানডে অভিষেকে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান করা ক্রিকেটার এখন তিনি। ২০১১ সালে নাসিরের করা ৬৩ রানের ইনিংসটি ছাপিয়ে গেছেন হৃদয়।

হৃদয় আউট হবার এক বল আগে একই ওভারে ফেরেন মুশফিকুর রহিমও। ছয় নাম্বারে নেমে দারুণ ব্যাট করেছেন এই উইকেট কিপার ব্যাটার। যদিও অর্ধশতক স্পর্শ করতে না পারার হতাশা নিয়ে ফিরেছেন তিনিও; তবে ২৬ বলে ৩ চার আর ৩ ছক্কায় ৪৪ রানের ইনিংস খেলে দলকে দিয়ে যান ভালো একটা অবস্থান। হৃদয়ের সাথে গড়ে তুলেছিলেন ৪৯ বলে ৮০ রানের জুটি।

এরপর তাসকিন আহমেদ ও নাসুম আহমেদের সমান ৭ বলে ১১ ও ইয়াসির আলী রাব্বির ১০ বলে ১৭ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩৩৮ রানের সংগ্রহ পেয়েছে বাংলাদেশ। যা বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসের দলীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ। এদিকে আয়ারল্যান্ডের হয়ে ৪ উইকেট শিকার করেন গ্রাহাম হোম।

About Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat