ঢাকা ছাড়ছেন মানুষ,সড়ক-রেল-নৌ-আকাশ পথে যাত্রীর ভিড়
ঈদের বাকি আরো কয়েকদিন। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি এবং আর্থিক সঙ্কটে নাকাল মানুষ। তবুও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে লাখো মানুষ। প্রতিদিন রাজধান ঢাকা ছাড়ছেন নগরবাসী। বাস, ট্রেন, লঞ্চ সবখানেই ঘরমুখো মানুষের ভিড়। ঢাকা থেকে বের হওয়ার মুখগুলোতে যানজট থাকলেও দূরযাত্রায় দুর্ভোগ নেই। এদিকে মানুষ বাড়ি ফেরায় ধীরে ধীরে ঢাকা ফাঁকা হতে শুরু করেছে। ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচল করা উড়োজাহাজে টিকেটে ছাড় দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে যাত্রীদের আনা নেয়ায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস অতিরিক্ত ৪০টি ফ্লাইট পরিচালনা করার ঘোষণা দিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ট্রেনে আনুষ্ঠানিকভাবে ঈদযাত্রা শুরু হলেও গতকাল শুক্রবার সবচেয়ে বেশি মানুষ ঢাকা ছেড়েছে। ভোর থেকে গাবতলী, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ ও কমলাপুর রেলস্টেশন গিয়ে দেখা যায়, বেশ স্বাচ্ছন্দে হাজার হাজার মানুষ ঢাকা ছাড়ছেন।
শুক্রবারের ট্রেনযাত্রা ছিল স্বাভাবিক। কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীর উপচে পড়া ভিড় নেই। টিকিট ছাড়া কেউ প্ল্যাটফরমে ঢুকতে পারছে না। স্টেশনে টিকিটবিহীন যাত্রীর প্রবেশ ঠেকাতে তিন স্তরের তল্লাশির ব্যবস্থা রেখেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
মহাখালী বাস টার্মিনালে সকাল থেকে যাত্রীর চাপ ছিল। ঘরমুখো মানুষের চাপ দেখা যায় সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে। সেখানকার পরিবহনগুলোর দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা অবশ্য মানুষের এই চাপকে বলছেন মোটামুটি। ভিড় কম ছিল গাবতলী বাস টার্মিনালে। দুপুরে অল্প কিছু কাউন্টার বাদে বেশির ভাগ কাউন্টারই খালি ছিল। সন্ধ্যার পর অবশ্য যাত্রীর চাপ বাড়তে শুরু করে। পদ্মাসেতুর কারণে গাবতলীতে যাত্রীর চাপ কমে গেছে বলে জানিয়েছেন সাউদিয়া পরিবহনের ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, ঈদের মৌসুমে সকালে একটি গাড়ি ছেড়েছি। কিন্তু আগে পাঁচ থেকে সাতটি গাড়ি ছাড়া হয়ে যেত। তবে সব রুটের বাসে টিকিটের দাম বেশি নেয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। তাদের ভাষ্য, অনেক বাসেই টিকিটের দাম ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি রাখা হচ্ছে। ওদিকে গতকাল সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ছিল দক্ষিণাঞ্চলগামী ঘরমুখো মানুষের ভিড়। পদ্মা সেতু চালুর পর গত বছরের মতো এবারও যাত্রীর চাপ স্বস্তিদায়ক। অনেকেই টার্মিনালে এসে টিকিট কেটে লঞ্চে চড়েছেন। এ ঘাট থেকে চাঁদপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, ঝালকাঠিগামী লঞ্চগুলো যাত্রা শুরু করছে। লঞ্চগুলো যাত্রীতে ভরপুর। টার্মিনালেই টিকিট কেটে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিতে পেরে যাত্রীরা স্বস্তি প্রকাশ করেন।
ঈদে এখন উড়োজাহাজেরও যাত্রীদের যাতায়াত বেড়েছে। বাংলাদেশ বিমান ও সেসরকারি কয়েকটি কোম্পানীর উড়োজাহাজ দেশের সাতটি অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ রুটে অতিরিক্ত ৪০টি ফ্লাইট পরিচালনা করার ঘোষণা দিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। একইসঙ্গে ১ থেকে ২০ রমজান পর্যন্ত বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ রুটে মূল ভাড়ার ওপর ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। এতে বলা হয়েছে, ঈদের আগে ও পরে যাত্রীদের যানজটমুক্ত স্বাচ্ছন্দ্যময় ভ্রমণ নিশ্চিত করতে প্রতি বছর ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করে বিমান। বিমান জানিয়েছে, ঢাকা থেকে কক্সবাজারের ফ্লাইটের বেস ফেয়ার পাঁচ হাজার ৯৯৯ টাকা, বরিশালের তিন হাজার ৪৯৯ টাকা এবং সিলেট, চট্টগ্রাম, যশোর, রাজশাহী ও সৈয়দপুরের চার হাজার ৪৯৯ টাকা।
কমলাপুর রেলস্টেশনে ঈদযাত্রার শুক্রবার অন্যান্য দিনের তুলনায় যাত্রীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। টিকিট ছাড়া কেউ যাতে ঢুকতে না পারে, সেজন্য তদারকি চালাতে দেখা গেছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। এবার ট্রেনের শতভাগ টিকিট দেওয়া হয়েছে অনলাইনে। তবে যাদের টিকিট নেই তারা স্টেশন থেকে স্ট্যান্ডিং টিকেট কাটতে পারছেন ২৫ শতাংশ। স্টেশনে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তবে বরাবরের মতোই রয়েছে ট্রেন বিলম্বে ছাড়ার অভিযোগ। এবার আন্তঃনগর ট্রেন স্টেশনগুলোতে প্রয়োজন অনুযায়ী নিরাপত্তার জন্য ২ মিনিটের বেশি সময় বিরতি দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার। গতকাল শুক্রবার তিনি এসব কথা জানান।
ঢাকা থেকে ট্রেন ছাড়তে ১০-১৫ মিনিট বিলম্ব হচ্ছে কেন জানতে চাইলে মাসুদ সারওয়ার বলেন, ঈদযাত্রায় এখন পর্যন্ত কোনো ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় হয়নি। গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া অগ্রিম টিকিটের যাত্রায় সব ট্রেন মোটামুটি সময়মতো কমলাপুর স্টেশন ছেড়েছে। ঈদে সার্বিক বিষয় নিয়ন্ত্রণ করতে একটু সময় লাগবেই। এতে করে যাত্রীরাই সুবিধা পাবেন।
স্টেশন সূত্রে জানা যায়, ঈদযাত্রার প্রথম চার দিন রাজধানী ছেড়ে যাবে ৪২টি আন্তঃনগর ট্রেন। আর যাত্রার শেষ তিন দিনে যুক্ত হবে আরও ৬টি ট্রেন, এতে শেষ তিন দিনে রাজধানী ছেড়ে যাবে ৪৮টি করে ট্রেন। সাত দিনে ৩৩ হাজার ৫০০ আসনের বিপরীতে বিক্রি হয়েছে ট্রেনের টিকিট।
কমলাপুর রেলস্টেশনে কথা হয় আনিস নামের একজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আগেই অফিস থেকে ৮ ও ৯ এপ্রিল ছুটি নিয়ে রেখেছিলাম। ঈদের আনন্দ শহরে পাওয়া যায় না, গ্রামে বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করা যায়। বাসার সবার জন্য শপিং করে এখন প্ল্যাটফর্মে ট্রেনের অপেক্ষায় আছি।
তবে এরই মধ্যে রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। গত সপ্তাহজুড়ে অনলাইনে যারা ট্রেনের অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করেছেন সেসব যাত্রীরা বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশে আসতে শুরু করেছেন স্টেশনে। বিমানবন্দর রেলস্টেশনের প্রবেশ গেটেই রয়েছে টিকেট চেকার। যারা অনলাইনে আগেই টিকেট কেটেছেন তাদের টিকেট চেক করে ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন। যাদের টিকেট নেই তাদের টিকেট কাটতে হচ্ছে। এদিকে নির্ধারিত ট্রেনের জন্য যাত্রীরা প্লাটফর্মগুলোতে বসে অপেক্ষা করছেন। এদিকে বিমানবন্দর রেলস্টেশনের ভেতরে রয়েছে পুলিশের তথ্য কেন্দ্র। সেখানেও যাত্রীদের সেবা দিচ্ছে রেল পুলিশ। স্টেশনের ভেতরে ও বাইরে মোতায়েন রয়েছে পর্যাপ্ত আনসার সদস্য। এদিকে, টিকিট ছাড়া কাউকে প্লাটফর্মের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশনে এমন চিত্র দেখা য়ায়।
বিমানবন্দরে স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় ছিলেন মুয়াজ সরকার। তিনি বলেন, কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনে একটি টিকেট কেটেছিলাম অনলাইনে। দুপুরে ট্রেনের টাইম। ইউনিভার্সিটির ক্লাস শেষ তাই যাত্রীদের চাপ বাড়ার আগেভাগেই বাড়ি যাচ্চি। প্লাটফর্মে অপেক্ষা করছেন আরেক যাত্রী। তার সঙ্গে রয়েছে পরিবারের ৪ সদস্য। তিনি বলেন, আমার ছুটি এখনো হয়নি। আমি পরিবারের সদস্যদের আগেই বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
যাত্রীর চাপ বেড়েছে মহাখালী বাস টার্মিনালে। গতকাল শুক্রবার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলোতে এমন যাত্রী বেশি দেখা গেছে। এছাড়া পরিবারের স্বজনরা এমন সব যাত্রীদের বাসে তুলে দিতে এসে এমন তথ্য জানিয়েছেন।
সকাল ১০টায় মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে নাটোর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাগুলোর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছিল একতা পরিবহন। আর এই বাসের যাত্রী হয়েছেন আনিকা। তিনি বলেন, আমার হাজবেন্ডের এখনো কয়েকদিন অফিস আছে। আর ঈদের সময় যেহেতু রাস্তায় প্রচণ্ড ভিড় হয়, যাওয়াও ঝামেলা। তাই আমরা কয়েকদিন আগেই ঢাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আমার ছেলের বাবা এসে গাড়িতে তুলে দিয়ে গেছেন, আর আমরা নাটোরে বাবুর দাদা বাড়িতে যাব।
একইভাবে মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ময়মনসিংহ ছেড়ে যাওয়া এনা পরিবহনের একটি বাসে স্ত্রী ও মেয়েকে তুলে দিতে এসেছেন শফিকুল নামের একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি বলেন, ঈদের সময় স্ত্রী সন্তান নিয়ে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া খুব কঠিন। একদিকে পুরো রাস্তা জুড়ে যানজট, অন্যদিকে ঠিকমতো গাড়ির সিট পাওয়া যায় না তাই আগেই পরিবারের সদস্যদের পাঠিয়ে দিচ্ছি নিজ এলাকায়। আমার এখনো কয়েকদিন অফিস আছে, যদিও পরিবার আগে চলে গেলে আমার এই কয়দিন থাকা খাওয়ার সমস্যা তবুও ভোগান্তি এড়াতে পরিবারের সদস্যদের আগেই পাঠিয়ে দিচ্ছি।
মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে উত্তরবঙ্গের দিকে ছেড়ে যাওয়া একটি বাস কাউন্টারের সহকারী ব্যবস্থাপক বলেন, আমাদের দূরপাল্লার বাসের আজকের টিকিটসহ, ঈদের আগের দিন পর্যন্ত সব টিকিটই বিক্রি হয়ে গেছে আগেই। শুধু যাত্রীরা আসছে এবং নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে রওনা হচ্ছে। তবে এখন অনেক চাকরিজীবী কর্মজীবীরা ঢাকা ছাড়ছে না। বরং তাদের পরিবারের সদস্যদের আগে পাঠিয়ে দিচ্ছে, আমাদের আজকের বাসগুলোতে এমন যাত্রী সংখ্যায় বেশি। মূলত ঈদের দুইদিন আগে সবাই যখন ঢাকা চলে যাবে ওই সময়টাতে সবচেয়ে বেশি ভিড় হবে।
এবারের ঈদযাত্রার প্রথম দিকেই যানবাহনের চাপ বেড়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে দীর্ঘ যানজট দেখা গেছে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার ১৩ কিলোমিটার অংশে। মহাসড়কটিতে কুমিল্লাগামী লেনে ভোররাত থেকে যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকে। সরেজমিনে দেখা যায়, গজারিয়ার মেঘনা সেতু থেকে দাউদকান্দি সেতু পর্যন্ত যানজট সৃষ্টি হয়। এ যানজটের কারণে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের। যানজটে আটকে থাকা গাড়িগুলোর মধ্যে পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ আর বাসের সংখ্যাই বেশি দেখা যায়।
যানজটের কারণ সম্পর্কে ভবেরচর হাইওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ হুমায়ুন কবির জানান, ঈদকে সামনে রেখে স্বাভাবিক নিয়মেই মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। এ কারণে মহাসড়কটির মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া ১৩ কিলোমিটার অংশে শুক্রবার সকাল থেকে যানবাহন ধীরগতিতে চলছে। যানবাহনের অতিরিক্ত চাপের কারণে মেঘনা সেতু থেকে কুমিল্লার দাউদকান্দি মেঘনা-গোমতী সেতু পর্যন্ত যানবাহন ধীরগতিতে চলাচল করছে। তিনি জানান, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে বলে মনে করেন ভবেরচর হাইওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ হুমায়ুন কবির।
এদিকে এ পথ ব্যবহারকারী অনেকেই দীর্ঘ যানজটে আটকে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। জ্যাম এ আটকে থাকা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভোর রাত থেকে এই জ্যামের সৃষ্টি হয় তার পর থেকে ধীরে ধীরে যানবাহন চলচ্ছে মাঝেমধ্যে একই স্থানে ৫ থেকে ৭ মিনিটও বসে থাকতে হয়েছে। তাছাড়া যানজটে আটকেপড়া যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে।
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ছোট ছোট শিল্প কারখানা ছুটি ঘোষণা করে দেওয়ায় চন্দ্রা এলাকাজুড়ে যাত্রী ও গণপরিবহনের চাপ বেড়েছে। মহাসড়কে থেমে থেমে চলছে যানবাহন। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের এলাকাজুড়ে এমনই চিত্র দেখা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, উত্তরবঙ্গের ২২টি জেলার মানুষের প্রবেশ মুখ চন্দ্রা। এখানে ছোট-বড় অসংখ্য শিল্প কারখানা রয়েছে। এসব শিল্প কারখানা ছুটি হলেই চন্দ্রাজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। অপরদিকে সরকারি অফিস আদালত বন্ধ থাকায় ও ছোট ছোট অনেক শিল্প কারখানা ছুটি ঘোষণা করায় চন্দ্রা এলাকাজুড়ে যাত্রী ও গণপরিবহনের চাপ বেড়েছে। এদিকে কোনাবাড়ি থেকে চন্দ্রা, চন্দ্রা থেকে মির্জাপুর ও চন্দ্রা থেকে বাইপাল পর্যন্ত ধীরগতিতে চলছে গণপরিবহন। আগের মতো এবারও যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশের থাকছে বিশেষ ব্যবস্থা। তবে মহাসড়কের চন্দ্রাজুড়ে রয়েছে অসংখ্য বাস কাউন্টার। যত্রতত্রভাবে গাড়ি পার্কিংসহ ফুটপাতে রয়েছে দোকানপাট, যার ফলে প্রতি বছর ঈদ আসলেই ঢাকাণ্ডটাঙ্গাইল মহাসড়কে চন্দ্রা এলাকাজুড়ে চরম যানজটের সৃষ্টি হয়।
হাইওয়ে পুলিশের ওসি শাহাদাত হোসেন জানান, এবার মহাসড়ক পর্যবেক্ষণ করতে ড্রোনসহ ৩২টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। চন্দ্রা এলাকাজুড়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। কোনো ধরনের যাত্রীদের যেন হয়রানি না করতে পারে তার জন্য সকল প্রস্তুতি রয়েছে।
লৌহজং ও মাওয়া উত্তর সংবাদদাতা জানান, গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মাওয়া প্রান্ত দিয়ে দক্ষিণাঞ্চল গামী মোট ১৬,৫৬৪ টি যান ও ২,৯২৬টি মোটরসাইকেল পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয় ১ কোটি ৭৩ লাখ ৫৯ হাজার ৮শত ৫০টাকা এবং জাজিরা প্রান্ত দিয়ে ঢাকা গামী দুপুর ১২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত মোট ৭,১৪১টি যান ও ১২৯৫টি মোটরসাইকেল পারাপার হয়। এতে টোল আদায় হয় ৯৬ লাখ ২৬ হাজার ৮শত ৫০টাকা আদায় হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ সেতু অথরিটি অতিরিক্ত পরিচালক আমিরুল হায়দার।
আসন্ন ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখের ছুটির আগেই পদ্মা সেতু হয়ে ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়েছে। ঈদেরছুটি শুরুর হতে এখনো বেশ কয়েকদিন বাকি। এর মধ্যেই ঈদযাত্রায় ভোগান্তি এড়াতে স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে রাজধানী থেকে গ্রামের পথে ছুটছেন ঘরমুখী মানুষ। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন সকাল থেকেই ব্যক্তিগত যানবাহনের পাশাপাশি যাত্রীবাহী বাস ও মোটরসাইকেলের চাপ বেড়েছে ঢাকা মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েসহ মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের পদ্মা সেতু টোল প্লাজা এলাকায়। এতে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মহাসড়কে তৈরি হয়েছে দীর্ঘ যানবাহনের সারি। এদিকে সড়কে বিশৃঙ্খলা এড়াতে মহাসড়কের ৬টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
অন্যদিকে শুরুতেই ভোগান্তিহীন ঈদ যাত্রায় বাড়ি ফিরতে পেরে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে যাত্রীরা বলছেন ঈদের ছুটি শুরুর আগে সাপ্তাহিক দু’টি ছুটির দিন ও রবিবার শবে কদর রাত থাকায় টানা তিন দিনের ছুটিতে নাড়ির টানে রাজধানী ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ।
পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের টোল ম্যানেজার আহমেদ হক বলেন, ভোর থেকেই যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে সেতুর মাওয়া প্রান্তে। তবে দূরপাল্লার গণপরিবহনের চেয়ে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বেশি। এছাড়া ভোর থেকে একইসঙ্গে মোটরসাইকেলেরও বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। সকালে গড়িয়ে দুপুরের এ চাপ ছিলো চোখে পড়ার মতো।