হরতাল-অবরোধ : সারা দেশে ৩৭৬টি অগ্নিসংযোগ, নিহত ৬
বিএনপিসহ সমমনা দলের ডাকা দেশব্যাপী চলমান অবরোধ ও হরতালে গত ২৯ অক্টোবর থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত ৩৭৬টি অগ্নিসংযোগ এবং ৩১০টি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময়ের মধ্যে সহিংসতার ঘটনায় নিহত হয়েছেন ছয়জন।বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ শাখা থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ পরবর্তী হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। দেশব্যাপী চলমান অবরোধ ও হরতালে ২৯ অক্টোবর থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত ২৯০টি যানবাহন, ১৭টি স্থাপনাসহ মোট ৩৭৬টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ২৭৫টি যানবাহন, ২৪টি স্থাপনাসহ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে ৩১০টি। এছাড়া এই সময়ের মধ্যে বিভিন্ন ঘটনায় কর্তব্যরত একজন পুলিশ সদস্যসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন।
পুলিশ সদর দফতর জানায়, ২ নভেম্বর ঝালকাঠির আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুর, ৫ নভেম্বর পিরোজপুর এবং ৬ ও ১৫ নভেম্বর সিরাজগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুটি অফিসে দুবৃর্ত্তরা অগ্নিসংযোগ করে। ১৯ নভেম্বর গাজীপুরের শ্রীপুর থানার বরমী ইউনিয়নের ১৩২ নম্বর গিলাশ্বর মরহুম আব্দুল জব্বার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিনের তৈরি স্কুলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে ওই বিদ্যালয়ের চারটি বেঞ্চ এবং একটি টিনের জানালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৩১ অক্টোবর থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত রেলওয়েতে ২৪টি নাশকতার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, টাঙ্গাইল ও জামালপুরে তিনটি ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ঢাকা মহানগরে একটি, ময়মনসিংহে দু’টি, গাজীপুরে একটি, নেত্রকোনায় একটি এবং নওগাঁয় একটিসহ ছয়টি ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
কিশোরগঞ্জে একটি, নোয়াখালীতে দু’টি, সিলেটে একটি, পাবনায় একটি, দিনাজপুরে একটি এবং গাজীপুরে তিনটিসহ রেললাইনে ৯টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া, সিলেট, ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জে তিনটি রেললাইন কেটে ফেলার চেষ্টা এবং গাইবান্ধায় রেললাইনের ফিস প্লেট খোলার চেষ্টার ঘটনা ঘটে। পাবনায় ট্রেনে পেট্রোল ও ডিজেল ভর্তি বোতল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া, নারায়ণগঞ্জে রেললাইনের ওপরে অতিরিক্ত ৩ ফুট লম্বা ৩ ইঞ্চি চওড়া পাত সংযোজন করে নাশকতার চেষ্টা করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৮ অক্টোবর থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকা মহানগর এলাকায় গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ২৯ জনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরমধ্যে রমনায় দু’জন, বংশালে দু’জন, মুগদায় চারজন, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে দু’জন, মোহাম্মদপুরে একজন, পল্লবীতে আটজন, কাফরুলে একজন, গুলশানে পাঁচজন ক্যান্টনমেন্টে একজন, খিলক্ষেতে দু’জন ও উত্তরায় একজনকে গ্রেফতার করা হয়।
এছাড়া, গত ২৮ অক্টোবর থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত কুমিল্লায় অবরোধ ও হরতালের সময় পিকেটিং ও অগ্নিসংযোগকালে ছয়টি ঘটনায় হাতেনাতে ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় একজন ও পিকেটিং করাকালে ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার ব্যক্তিদের অনেকেই নিজেদের সম্পৃক্ততার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। পুলিশকে বিতর্কিত করার লক্ষ্যে নাশকতাকারীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে পিআরইএসএস (PRESS) লেখা জ্যাকেট পরে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অবরোধ-হরতালে পরিবহন বা স্থাপনা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগকারীদের উপযুক্ত প্রমাণসহ ধরিয়ে দিলে অথবা সুনির্দিষ্ট তথ্য দিলে ২০ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হবে। তথ্য দেয়া ব্যক্তির পরিচয় গোপন রাখা হবে বলেও জানায় পুলিশ সদর দফতর।