এই সংবিধানের অধীনে নির্বাচন হতে পারে না,নয়াপল্টনে মহিলা সমাবেশে মির্জা ফখরুল
এই সংবিধানের অধীনে নির্বাচন হতে পারে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে ‘মহিলা সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার একদফা দাবিতে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বর্তমান সংবিধানের অধীনেই নির্বাচন হবে- ক্ষমতাসীনদের এই বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সংবিধানের অধীনে নির্বাচন হতে পারে না। কারণ এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে সেই নির্বাচন কখনো অবাধ ও সুষ্ঠু হতে পারে না। আর এই সরকার যদি আবার ক্ষমতায় আসে তাহলে এদেশের মহিলা ও নারীসহ কোন মানুষের নিরাপত্তা থাকবে না। আমরা আমাদের স্বাধীনতাকে হারাবো, সার্বভৌমত্ব হারাবো, আমাদের গণতন্ত্র চিরতরে চলে যাবে এবং ভোটের অধিকার চলে যাবে।
নারী নেত্রীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ঐক্য গড়ে তুলি। সেই ঐক্যের মধ্যে দিয়ে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করবো সংসদ বিলুপ্ত করতে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে একটি নতুন ইসি গঠন করে নির্বাচন দিতে। তাহলেই একমাত্র এই সংকট থেকে মুক্ত হতে পারি।
তিনি আরো বলেন, এই সরকারের কাছে কেউ নিরাপদ না। গণতন্ত্রও নিরাপদ না। বিশেষ করে মহিলাদের নিরাপত্তা এখন এদেশে নাই।আর দেশে যদি গণতন্ত্র না থাকে তাহলে মহিলাদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা যাবে না। আর বেগম খালেদা জিয়া নারীদের ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নের জন্য অনেকগুলো কাজ করেছেন। তারমধ্যে সবেচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে, মহিলা শিক্ষার ব্যবস্থা করা। আজকে সমস্ত দেশ বিপদগ্রস্ত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষ করে আমাদের মা-বোনদের সবচেয়ে বড় যে সমস্যা, চাল, ডাল, তেল ও লবণসহ প্রত্যেকটা জিনিসের দাম যেভাবে বেড়েছে! আজকেও পত্রিকায় আছে, সরকার জিনিসপত্রের দাম বেঁধে দিয়েছে। সেই দামের কথা কেউ মানছে না।
মহিলা নেত্রীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, আজকে সরকার জোর করে আবারও ক্ষমতায় থাকতে চায়। আপনারা কি সেটা দিবেন? সরকারকে কি আবার ক্ষমতায় থাকতে দিবেন? এরা কাউকেই ছাড় দেয়নি। আপনারা যারা আন্দোলন করেছেন। সেই আমার মা-বোনদেরকে গ্রেপ্তার করে তারা কারাগারে পাঠিয়েছে। আমার মা-বোনদের এরা অন্যায়ভাবে নির্যাতন করেছে। বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই আমাদের অংসখ্য নারী নেত্রীকে তারা অত্যাচার ও নির্যাতন করেছে। এই সরকার অত্যাচারের সরকারে পরিণত হয়েছে। পত্র-পত্রিকায় যে ছবি বের হয়েছে, সেই ছবি ফেসবুকে দেয়ার কারণে গত কয়েকদিন আগে মিলি নামে একজন মহিলাকে গ্রেপ্তার করেছে।
তিনি বলেন, আজকে আমরা খুব পরিষ্কার করে বলে দিতে চাই, সর্বপ্রথম বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে হবে। আমরা আশা করি যে, তার পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে। আমরা আশা করি যে, এই সরকার অবৈধ হলেও তারা খালেদা জিয়াকে বাইরে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিবে।
অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি করে রেখে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ফখরুল। তিনি বলেন, একটি মাত্র কারণ, সেটা হলো- তারা জানেন যে, বেগম জিয়া যদি বাইরে থাকেন তাহলে জনগণের সেই স্রোতকে তারা বন্ধ করতে পারবে না। আর তাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, নারী সমাজ রাজপথে নেমেছে। কারণ তাদের নারীদের অপহরণ করা হচ্ছে। তারা খেতে পারছে না এবং ছেলেদের খেতে দিতে পারছে না। দেশে চলছে হাহাকার। এজন্য আজ দেশের নারী সমাজ জাগ্রত হয়েছে। কঠিন আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করানো হবে বলেও ক্ষমতাসীনদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।দুপুর থেকেই সমাবেশে অংশ নিতে ঢাকাসহ সারাদেশের মহিলা দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীরা ব্যানার ও রংবেরঙের ফেস্টুনসহ সমাবেশে জড়ো হতে শুরু করেন। এসময় তারা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগানে সমাবেশস্থল মুখরিত করে তুলেন ।
এদিকে সমাবেশকে ঘিরে নয়াপল্টন এবং এর আশপাশের এলাকায় সতর্ক অবস্থানে ছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, মহিলা নেত্রী আফরোজা খান রিতা, জেবা খান, নার্গিস আলী, নাজমুন নাহার বেবি, নুরজাহান মাহবুব, নেওয়াজ হালিমা আরলী, নিলুফার চৌধুরী মনি, রোজিনা ইসলাম, জাহান পান্না, হেলেন জেরিন খান, শাম্মী আক্তার, পারভিন আক্তার, রুমা আক্তার, শাহিনুর নার্গিস, নায়েবা ইউসুফ, রুনা লায়লা রুনা, নুরুন্নাহার, মোছলেহা কামাল, রাশিদা জামান, মমতাজ ইউসুফ, জান্নাতুল ফেরদৌস, গুল লাহার বেগম, শিরিন চাকলাদার, ফিরোজা আক্তার, সাবিহা হাবিব, কামরুন নাহার মুন্নি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।