কানাডা ফ্রান্স ও মালয়েশিয়ার হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ,কানাডাকে বিনিয়োগের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

0
6-20240829000420
Array

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট থেকে দেশকে পুনর্গঠনে কানাডাকে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল বুধবার বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলস রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ আহ্বান জানান।

প্রফেসর ইউনূস কানাডার শীর্ষ রাজনীতিবিদ ও উন্নয়ন সংস্থাসহ দেশটির সঙ্গে তার দীর্ঘ সম্পর্কের কথা স্মরণ করে বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে তার সরকারের জন্য কানাডার সহায়তা প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমাদের বড় বিনিয়োগ দরকার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উত্তরাধিকার সূত্রে একটি অর্থনীতি পেয়েছে, যা বিপুল পরিমাণ ঋণের বোঝাসহ সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খল অবস্থায় ছিল।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার হচ্ছে অর্থনীতি ঠিক করা। সরকার পূর্ববর্তী সরকারের দ্বারা ভেঙে পড়া গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোও পুনরুদ্ধার করছে এবং প্রশাসনে শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা আনছে।

এসময় কানাডার হাইকমিশনার বলেন, তার সরকার প্রধান উপদেষ্টা ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। তিনি বলেন, কানাডা সার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের মাধ্যমে বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারে আগ্রহী। হাইকমিশনার বলেন, উত্তর আমেরিকার এই দেশটি থেকে বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশকে অবশ্যই কারখানাগুলোতে শ্রম অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

এসময় প্রফেসর ইউনূস বলেন, যেসব ব্র্যান্ড বাংলাদেশ থেকে পোশাক কেনে এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে পোশাক কেনে তাদের উদ্বেগ নিরসনে তার সরকার আইএলও’র মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শ্রম অধিকার সমুন্নত রাখবে।
নিকোলস বলেন, জুলাই ও আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনকে সমর্থন করতেও কানাডা আগ্রহী।

প্রফেসর ইউনূস বলেন, ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন বিপ্লব দেশে নতুন আশার সূচনা করেছে। এগুলো ঐতিহাসিক সুযোগ। এই সুযোগ হয়তো আর কখনোই ফিরে আসবে না। তিনি বলেন, দেশে ভোট অনুষ্ঠিত করার আগে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী সংস্কার করা হবে। বিগত সরকারের আমলে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনী কারচুপির কারখানায় পরিণত করা হয়েছিল।

কানাডার হাইকমিশনার বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শিবিরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের ওপর ক্রমবর্ধমান সহিংসতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, কানাডা রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার জন্য ৬০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অনুদান দিয়েছে এবং রোহিঙ্গা জনগণের জীবন-জীবিকার সুযোগ সৃষ্টির আহ্বান জানান।

প্রধান উপদেষ্টা কক্সবাজারের ক্যাম্প থেকে কিছু রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করে রোহিঙ্গা শিবিরে উপচে পড়া ভিড় কমিয়ে আনার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, তার সরকার রোহিঙ্গা তরুণদের মধ্যে আশার আলো দেখাতে যথাসাধ্য চেষ্টা করবে।

দেশ পুনর্গঠন প্রচেষ্টায় অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তা করবে ফ্রান্স

এদিকে, বাংলাদেশের পুনর্গঠনের প্রচেষ্টায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে ফ্রান্স। গতকাল বুধবার বিকেলে বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মেরি মাসদুপুই ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এ মন্তব্য করেন।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ তাকে সুবিধাজনক সময়ে ফ্রান্স সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তিনি জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে নিহত ছাত্র ও জনতার মৃত্যুতেও শোক প্রকাশ করেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিপ্লব অন্তর্বর্তী সরকারকে দেশ পুনর্গঠনের সুযোগ দিয়েছে, যা আগে কখনো হয়নি। এটি একটি বড় কাজ। তবে আমরা এটিকে একটি বড় সুযোগ হিসেবে দেখছি। আমরা যদি সুযোগটি কাজে লাগাই না, তাহলে এটি একটি বড় ব্যর্থতা হবে। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে জনগণ যতদিন চাইবে ততদিন থাকবে। দেশে জনগণকে ‘বড় পরিবারের’ অংশ হিসেবে দেখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কখনও কখনও আমরা খুব জোরালোভাবে দ্বিমত পোষণ করি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমরা শত্রু। সরকার প্রতিটি নাগরিকের অধিকার রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ। আসুন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করি। আমাদের কাজ হলো সংবিধানকে কার্যকর করা।

মাসদুপুই বলেন, ফ্রান্স ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে কাজ করছে এবং দুর্নীতি, মানব পাচার, ফরেনসিক সাইবার অপরাধ, বন্দর ও বিমানবন্দরের নিরাপত্তা এবং আর্থিক অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দক্ষতা বাড়াতে আগ্রহী।
ফরাসি রাষ্ট্রদূত বলেন, অ্যালায়েন্স ফ্রাঙ্কেস ঢাকা আগামী অক্টোবরে ৬৫তম বার্ষিকী উদযাপন করবে এবং তিনি অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ইউনূসকে আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, ফ্রান্সও ২০২৫ সালের এপ্রিলে প্যারিসে দুই সপ্তাহব্যাপী বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মৌসুমের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ফরাসি রাষ্ট্রদূত বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অন্তর্বর্তী সরকারের এজেন্ডা বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে আরও বাড়ানোর জন্য একটি মূল সক্ষমকারী হবে। কারণ অনেকেই শুল্ক ও বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। তিনি বলেন, ফরাসি প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে তিনটি সোলার পার্ক স্থাপন এবং দেশের ১৫টি বজ্রপ্রবণ জেলায় ‘লাইটনিং অ্যারেস্টার’ স্থাপনে আগ্রহী।

আসিয়ানের সদস্য হতে মালয়েশিয়ার সমর্থন চাইলেন ড. মুহম্মদ ইউনূস

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহম্মদ ইউনূস বাংলাদেশকে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় জাতি সংস্থা (আসিয়ান) সদস্য হতে মালয়েশিয়ার সমর্থন চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ আসিয়ান ও সার্কের মধ্যে সেতু হতে পারে। গতকাল বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনাহ হাশিম তার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করলে তিনি এ সহায়তা কামনা করেন। হাজনাহ হাশিম বলেন, কুয়ালালামপুর আসিয়ানের পরবর্তী চেয়ার হতে যাচ্ছে এবং তিনি আসিয়ান সদস্যপদ সংক্রান্ত বিষয়ে মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষের কাছে অধ্যাপক ইউনূসের বার্তা পৌঁছে দেবেন।

তিনি বলেন, মালয়েশিয়া অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করবে। আমরা আপনার ওপর বিশ্বাস করি। আমরা আপনাকে শুভ কামনা জানাই।

এসময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম এবং মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদসহ মালয়েশিয়ার নেতাদের সঙ্গে তার বন্ধুত্বের কথা স্মরণ করেন।

মালয়েশিয়ার হাইকমিশনারকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সম্পর্ক বাড়াতে আমরা আমাদের সেরাটা দিই।
প্রফেসর ইউনূস বলেছেন, মালয়েশিয়ার অন্তত সাতটি ইউনিভার্সিটিতে ইউনূস সেন্টার রয়েছে। সামাজিক, ব্যবসায়িক ধারণাকে প্রচার করে তিনি চ্যাম্পিয়ন এবং তার তিনটি শূন্য ধারণা রয়েছে।

হাইকমিশনার বলেন, মালয়েশিয়ার বিভিন্ন কোম্পানির মালিকানাধীন সার্বভৌম তহবিল বাংলাদেশে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে এবং এখন শিক্ষাসহ আরও বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক।
তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার দ্বিতীয় গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামভিত্তিক একটি কোম্পানির সঙ্গে গাড়ি বিতরণ ও সংযোজন করার জন্য চুক্তি করেছে।

মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার কুয়ালালামপুর মেডিকেল ট্যুরিজমের জন্য একটি কাঙ্খিত গন্তব্য হতে পারে উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশিরা সাশ্রয়ী মূল্যে মালয়েশিয়ায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করতে পারবেন।

About Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat