যুক্তরাষ্ট্র দৃঢ়ভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে সমর্থন করে এবং মানবাধিকারের প্রতি সম্মান নিশ্চিত করার ব্যাপারে দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ভিওএ সাক্ষাৎকারে ডনাল্ড লু

0
Array

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি, ডনাল্ড লু গত মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ সফর করেন। এ সফরে তিনি বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, তথ্য প্রতিমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্যবিষয়ক উপদেষ্টাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন। এ সফরে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ সম্পর্কের মাঝে আস্থার জায়গা ফিরিয়ে আনা ও অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে দু’দেশের সম্পর্ক জোরদার করার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “আমরা পেছনে নয়, সামনের দিকে তাকাতে চাই।”

সেই সঙ্গে তিনি দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কমিটমেন্টের ব্যাপারটিও গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেন।

ডনাল্ড লু’র সফরের পরপরই ২০ মে, ২০২৪ যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে ৭০৩১ (সি) ধারার অধীনে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে জড়িত থাকার কারণে তার বিরুদ্ধে “পাবলিক ডেজিগনেশন” (একধরনের নিষেধাজ্ঞা) ঘোষণা করে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৩ মে একটি সভায় কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে বলেন, তিনি যদি বাংলাদেশে একটি বিমানঘাঁটি স্থাপনের জন্য একটি বিদেশি দেশকে অনুমতি দিতেন, তবে গত জানুয়ারিতে তাকে ঝামেলামুক্ত পুনর্নির্বাচনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমি যদি একটি নির্দিষ্ট দেশকে বাংলাদেশে একটি বিমানঘাঁটি নির্মাণের অনুমতি দিতাম, তাহলে আমার কোনো সমস্যা হতো না।”

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করলেও, বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশীয় মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয় যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করেই এ বক্তব্য দিয়েছেন।

ডনাল্ড লু তার এবারের সফরে বাংলাদেশের সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো, যারা ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বয়কট করেছিল তাদের প্রতিনিধিদের সাথে দেখা না করায় বিরোধী দল ও সুশীল সমাজের একাংশের ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। এসব বিষয়সহ যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক নীতিতে বাংলাদেশের ভূমিকা ও গুরুত্ব নিয়ে ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা গত ১০ জুন ২০২৪ অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডনাল্ড লু’র একটি লিখিত সাক্ষাৎকার নেয়।

এ সাক্ষাৎকারে ডনাল্ড লু তার সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরের অর্জন, দুর্নীতিবিরোধী লড়াই, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, জলবায়ু সংকট মোকাবেলা, নারী অধিকার ও উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যুতে বাংলাদেশের জনগণের সাথে একযোগে কাজ করে যাবার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের কমিটমেন্টসহ অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে নানা প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি তার এবারের সফরে বিরোধী দলের প্রতিনিধিদের সাথে দেখা না করা ও বাংলাদেশে নির্বাচন ইস্যুতে ও গণতন্ত্র ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর বিষয়ে বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের “নমনীয়” নীতির সমালোচনার ব্যাপারেও তাঁর সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করেন।

ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলার হয়ে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন শতরূপা বড়ুয়া

প্রশ্ন: আপনার সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরে, আপনি বলেছেন যে বাংলাদেশে গত ৭ জানুয়ারিতে হয়ে যাওয়া সংসদ নির্বাচন যেন অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ হয় ও এ দেশে গণতান্ত্রিক ধারা উৎসাহিত হয়– এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের কিছু উদ্যোগের কারণে দু’দেশের সম্পর্কে একধরনের টানাপোড়েন তৈরি হয়েছিল। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের বিষয়ে এখন আর পেছনের দিকে না তাকিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবার মাধ্যমে দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্কের মাঝে আস্থার জায়গাটি ফিরিয়ে আনার ব্যাপারেও কাজ করার কথা বলেছেন।

এটি কি বাংলাদেশের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি পরিবর্তনের একটি ইঙ্গিত, যেখানে আপনারা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনসহ গণতন্ত্র সুরক্ষা ও প্রসারের বদলে ভূরাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং কৌশলগত দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলিতে বেশি মনোযোগ দিতে চান?

ডনাল্ড লু: এই সাক্ষাৎকারের জন্য আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ। বাংলাদেশে ভয়েস অফ আমেরিকার কাজের প্রতি আমার অগাধ শ্রদ্ধা আছে।

আমার সাম্প্রতিক ঢাকা সফরের সময় আমি যেমনটি বলেছিলাম, আমরা সামনের দিকে তাকিয়ে আছি, পেছনে নয়।

আমরা বিস্তৃত পরিসরে বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের সাথে আমাদের অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিতে প্রস্তুত এবং আগ্রহী। আমরা আশা করি, বাংলাদেশের সাথে আমাদের বাণিজ্য সম্পর্ক আরও গভীর হবে। নারীর অর্থনৈতিক নিরাপত্তায় আমরা আমাদের অভিন্ন স্বার্থকে এগিয়ে নিতে চাই। আমরা ইতোমধ্যে জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় একসঙ্গে কাজ করছি। আমরা অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে দু’দেশের মধ্যে নিজেদের অভিন্ন অগ্রাধিকারগুলো নিয়ে একসাথে কাজ করে যাবার ব্যাপারে আশাবাদী।

(সেইসাথে) বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন আমাদের জন্য একটি অগ্রাধিকার। আমরা সুশীল সমাজ ও সাংবাদিকদের গুরুত্বপূর্ণ কাজকে সমর্থন করে যাব এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে সমর্থন অব্যাহত রাখব।

নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্তকারী সহিংসতার নিন্দায় আমরা সোচ্চার ছিলাম এবং আমরা বাংলাদেশ সরকারকে সহিংসতার ঘটনাগুলোর বিশ্বাসযোগ্যভাবে তদন্ত করতে এবং যারা এসবের সঙ্গে জড়িত, তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্যও অনুরোধ করেছি। এই বিষয়গুলি নিয়ে (সংশ্লিষ্টদের সাথে) আমাদের যোগাযোগ চালু থাকবে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি এবং সুশীল সমাজের একটি অংশ ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের ইস্যুতে, যার মধ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টিও রয়েছে, সে বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের প্রতি “নমনীয়” ভূমিকা নেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সমালোচনা করেছে। আপনি এ সমালোচনার ব্যাপারে কী বলবেন?

ডনাল্ড লু: যুক্তরাষ্ট্র দৃঢ়ভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে সমর্থন করে এবং মানবাধিকারের প্রতি সম্মান নিশ্চিত করার ব্যাপারে দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পুরো নির্বাচনকালীন চক্রজুড়ে আমরা নিয়মিত বাংলাদেশের সরকার, বিরোধী দল, সুশীল সমাজ এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সাথে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করার কাজে যোগাযোগ অব্যাহত রেখে তাদেরকে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছি। নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্তকারী সহিংসতার নিন্দায় আমরা সোচ্চার ছিলাম এবং আমরা বাংলাদেশ সরকারকে সহিংসতার ঘটনাগুলোর বিশ্বাসযোগ্যভাবে তদন্ত করতে এবং যারা এসবের সঙ্গে জড়িত, তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্যও অনুরোধ করেছি। এই বিষয়গুলি নিয়ে (সংশ্লিষ্টদের সাথে) আমাদের যোগাযোগ চালু থাকবে।

প্রশ্ন: আপনার সাম্প্রতিক সফরে আপনি সুশীল সমাজের সদস্যদের সাথে দেখা করলেও নির্বাচন বয়কটকারী বিরোধী দলগুলোর প্রতিনিধিদের সাথে দেখা করেননি। আপনার সাম্প্রতিক সফরে কেন বিরোধী দলের সদস্যদের সঙ্গে দেখা না করার সিদ্ধান্ত নিলেন?এটা প্রাক-নির্বাচনের সময় নয়, তাই এবারের সফরে আমি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দেখা করিনি।
ডনাল্ড লু: এটা সত্য যে গত বছর নির্বাচনের আগে আমি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকের সুযোগ পেয়েছিলাম। এটা প্রাক-নির্বাচনের সময় নয়, তাই এবারের সফরে আমি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দেখা করিনি।

এবার ঢাকায় থাকাকালীন আমার সৌভাগ্য হয়েছে বাংলাদেশিদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সাথে দেখা করার। (এর মধ্যে ছিলেন) সুশীল সমাজের প্রতিনিধি থেকে শুরু করে সরকারি কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের সাথেও আমি দেখা করেছি, যারা আমাকে বোলিং এবং ব্যাটিং সম্পর্কে দু’একটি ব্যাপার শিখিয়েছে।

প্রশ্ন: আপনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই এবং আর্থিক সুশাসন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের সাথে একসাথে কাজ করার জন্য আপনার সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা কি দুর্নীতির বিরুদ্ধে এ লড়াইয়েরই একটি অংশ?আপনি কি (দুর্নীতিসংক্রান্ত) এই ইস্যুগুলো সমাধানের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা করার সদিচ্ছা নিয়ে সন্তুষ্ট?

ডনাল্ড লু: আমি যখন আলবেনিয়া এবং কিরগিজ প্রজাতন্ত্রে রাষ্ট্রদূত ছিলাম, আমরা দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা (স্যাংশান) দিয়েছিলাম। এটি তখনকার (আলবেনীয়) সরকারের কাছে জনপ্রিয় ছিল না, কিন্তু এখন সেই নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত সাবেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা সবাই কারাগারে। সারা বিশ্বের সমাজ দুর্নীতির বিচার দেখতে আগ্রহী।

আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বাংলাদেশের সাথে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ২০ মে, আমরা ৭০৩১ (সি) ধারার অধীনে সাবেক জেনারেল আজিজ আহমেদের উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে জড়িত থাকার কারণে তার বিরুদ্ধে “পাবলিক ডেজিগনেশন” ( একধরনের নিষেধাজ্ঞা) ঘোষণা করি। দুর্নীতির এ অভিযোগগুলোর ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা হবে বলে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীরা বিবৃতি দিয়েছেন, আমরা এ ব্যাপারটি স্বাগত জানাই।

আমি আশা করি, আমরা বাংলাদেশের জনগণের সাথে মিলে সব ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে একসঙ্গে কাজ করে যাব।
প্রশ্ন: আমরা কি অদূর ভবিষ্যতে অন্যান্য উচ্চ-প্রোফাইলের বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপরও দুর্নীতির সাথে সম্পর্কিত এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি দেখতে পাব?

ডনাল্ড লু: যখন আমাদের কাছে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য তথ্য থাকে, তখন আমরা সারা বিশ্বেই নিষেধাজ্ঞা এবং ভিসা বিধিনিষেধের আকারে প্রকাশ্যে পদক্ষেপ নিই। আমাদের আইনগুলি আমাদেরকে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ বা তাদের দুর্নীতির অর্থের গন্তব্য হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখতে সচেষ্ট। আমি আশা করি, আমরা বাংলাদেশের জনগণের সাথে মিলে সব ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে একসঙ্গে কাজ করে যাব।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৩ মে অভিযোগ করেছেন যে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের কিছু অংশ আলাদা করে পূর্ব তিমুরের মতো একটি ‘খ্রিষ্টান’ জাতি-রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে।

তিনি আরও দাবি করেছেন যে, তিনি যদি বাংলাদেশে একটি বিমানঘাঁটি স্থাপনের জন্য একটি দেশকে অনুমতি দিতেন তবে গত জানুয়ারিতে তাকে ঝামেলামুক্ত পুনর্নির্বাচনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করলেও, বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশীয় মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয় যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করেই এ বক্তব্য দিয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেন, “অফারটি এসেছে একজন সাদা মানুষের কাছ থেকে।… আমি যদি একটি নির্দিষ্ট দেশকে বাংলাদেশে একটি বিমানঘাঁটি নির্মাণের অনুমতি দিতাম, তাহলে আমার কোনো সমস্যা হতো না,” তিনি যোগ করেন।

যুক্তরাষ্ট্র কি কখনও বাংলাদেশে একটি বিমানঘাঁটি নির্মাণের আগ্রহ প্রকাশ করেছে?

ডনাল্ড লু: এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমরা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করি। নির্বাচনের সময় আমাদের অগ্রাধিকার ছিল শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালিত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে সমর্থন করার জন্য বাংলাদেশের সাথে কাজ করা।

মে মাসে ঢাকা সফরের সময় প্রচণ্ড গরমে বাংলাদেশিদের পাশাপাশি আমি নিজেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অনুভব করেছি।

প্রশ্ন: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিরীক্ষণের জন্য আপনি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে বিনামূল্যে স্যাটেলাইট ডেটা ব্যবহার করার প্রস্তাব দিয়েছেন। বাংলাদেশ এ ব্যাপারে কী প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে? আপনার মতে, দুই দেশের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত সহযোগিতার ক্ষেত্রে কোন ক্ষেত্রগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত?

ডনাল্ড লু: মে মাসে ঢাকা সফরের সময় প্রচণ্ড গরমে বাংলাদেশিদের পাশাপাশি আমি নিজেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অনুভব করেছি। জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা ক্লিন এনার্জি ক্যাপাসিটি গড়ে তোলা, কৃষি ও বিদ্যুতের মতো খাতে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানো, জীববৈচিত্র্য বজায় রাখা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি কমাতে পরিবেশ সংরক্ষণের দিকে মনোনিবেশ করছি। (এ বিষয়ে) বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা অত্যন্ত ইতিবাচক ছিল।

একটি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল, যা স্বাধীন এবং উন্মুক্ত, সংযুক্ত, সমৃদ্ধ, নিরাপদ এবং স্থিতিশীল। যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশ, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের ব্যাপারে এমন একটা অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি লালন করে।
প্রশ্ন: যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ইন্দো-প্যাসিফিক নীতিতে বাংলাদেশ কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে? এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা চাওয়ার ক্ষেত্রে আপনাদের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রগুলো কী?

ডনাল্ড লু: একটি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল, যা স্বাধীন এবং উন্মুক্ত, সংযুক্ত, সমৃদ্ধ, নিরাপদ এবং স্থিতিশীল। যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশ, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের ব্যাপারে এমন একটা অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি লালন করে। একটি গতিশীল এবং দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান তাকে এ অঞ্চলের বাণিজ্য প্রসারের একটা সেতু এবং এই অঞ্চলে সমৃদ্ধির নোঙ্গর হিসেবে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে।

আমরা এই অঞ্চলে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর পাশাপাশি নিরাপত্তা সহযোগিতা বৃদ্ধি, জলবায়ু সংকট মোকাবেলা এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের উন্নয়নে আমাদের বাংলাদেশি অংশীদারদের সাথে কাজ করার দিকে মনোনিবেশ করছি। এ ইস্যুগুলোসহ অন্য ইস্যুগুলোর সমন্বয়, আমাদের উভয় দেশের জনগণের জন্য সুফল বয়ে আনবে।

About Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat