জাহাজ আটকে আছে পথে,মিয়ানমারের সেনা-বিজিপি সদস্যরা ফেরত যাবে কবে?

0
Array

সংঘাত থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, সীমান্তরক্ষী বাহিনীসহ (বিজিপি) বিভিন্ন সংস্থা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ফেরত পাঠানো নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তারা ঠিক কবে ফেরত যাবেন সেটি নিশ্চিত করতে পারেনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

নিজেদের সেনা ও বিজিপি সদস্যদের নিয়ে যেতে গতকাল শনিবার মিয়ানমার নৌবাহিনীর একটি জাহাজ বাংলাদেশে আসার কথা ছিল। জাহাজটি কক্সবাজারে আসার উদ্দেশ্যে রওনা হলেও এখনো আটকে আছে সমুদ্রের মিয়ানমার অংশে। ফলে আশ্রয় নেওয়া সৈন্য ও সীমান্তরক্ষীদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া পিছিয়ে গেছে।

তবে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে।
ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র বলছে, গতকাল শনিবারই মিয়ানমারের নৌবাহিনীর জাহাজটি কক্সবাজার আসবে বলে কূটনৈতিক পত্র দিয়েছিল মিয়ানমার। জাহাজটি ইয়াঙ্গুন থেকে রাখাইনের রাজধানী সিত্তে বন্দর পর্যন্ত এসেছিল। সেখান থেকে জাহাজটি বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা হতে চাইলেও আন্তর্জাতিক মেরিটাইমের নিয়ম অনুসারে স্বাগতিক দেশকে জাহাজ ভেড়াতে যেসব তথ্য-উপাত্ত দিতে হয় তা দিতে পারেনি মিয়ানমার। ওইসব তথ্য-উপাত্ত দেওয়ার তাগিদ দিয়েছে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ।
বর্তমানে জাহাজটি রাখাইনের কাছাকাছি কোথাও রয়েছে বলে ধারণা করছেন ইয়াঙ্গুন দূতাবাসের এক কর্মকর্তা।

মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. মনোয়ার হোসেন রোববার মোবাইল ফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, জাহাজ রওনা হয়েছিল। কী ঝামেলা হয়েছে সেটি আমি বলতে পারব না। আমার কাজ ছিল যত দ্রুত সম্ভব মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জাহাজ পাঠিয়ে দেওয়া। সেটি আমি করেছি।

রাষ্ট্রদূত মনোয়ার বলেন, এখন যদি আবার আরেকটা জাহাজ পাঠাতে বলা হয় আমি এখানে (মিয়ানমারে) যোগাযোগ করে আরেকটি পাঠাতে পারব।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, মেরিটাইমের কিছু কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়ায় জাহাজটি বাংলাদেশে আসেনি। আমরা আশা করছি, মেরিটাইমের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে জাহাজটি বাংলাদেশে ভিড়বে।

কবে নাগাদ সেনাদের ফেরত পাঠানো যাবে? জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, আমরা তাদের ফেরত পাঠাতে চাই, মিয়ানমারও নিতে চায়। আশা করছি, এ সপ্তাহের মধ্যে হয়ে যাবে। যারা যাবে তাদের প্রস্তুত করা হচ্ছে। দুই-তিনজন সেনা অসুস্থ আছে। তাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে একটু ঝামেলা আছে। তবে মিয়ানমার আশ্বস্ত করেছে, জাহাজে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে।

এদিকে এ বিষয়ে করণীয় নিয়ে আজ রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব মোহাম্মাদ খোরশেদ আলমের নেতৃত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে যত দ্রুত সম্ভব মিয়ানমারের সেনা ও সীমান্তরক্ষীসহ অন্যান্য সংস্থার সব সদস্যকে দেশে ফেরত পাঠানো নিয়ে আলোচনা হয়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের করণীয় ঠিক করা এবং ফেরত পাঠানোর জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, গত সপ্তাহের রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, বিজিপিসহ বিভিন্ন সংস্থা ও তাদের পরিবারের সদস্য মিলিয়ে দেশটির অন্তত ৩৩০ জন নাগরিক বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। নেইপিদো তাদের নাফ নদী দিয়ে রাখাইনে ফেরাতে ঢাকাকে প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু রাখাইনের পরিস্থিতি বিবেচনায় ঢাকার পক্ষ থেকে তাদের উড়োজাহাজে করে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। পরে মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের সমুদ্র পথে জাহাজে করে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দেয়, বাংলাদেশও তাতে রাজি হয়।

রাখাইনের বাংলাদেশ মিশন নিরাপদ আছে

ঢাকার একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, মিয়ানমারে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখাইনের রাজধানী সিত্তেতে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ওই মিশনের কূটনীতিকরা বর্তমানে ইয়াঙ্গুনের নিরাপদ স্থান থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

About Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat