কক্সবাজারের পথে মিয়ানমারের সামরিক জাহাজ
মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা দেশটির বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে নৌবাহিনীর একটি জাহাজ পাঠাচ্ছে দেশটির জান্তা সরকার। সবকিছু ঠিক থাকলে বর্তমানে সমুদ্রপথে অবস্থানকারী জাহাজটি শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) কক্সবাজার উপকূলে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘ইতোমধ্যে কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে শনিবার জাহাজ এসে পৌঁছাবে বলে মিয়ানমার আমাদের জানিয়েছে।’
বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তত্ত্বাবধানে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা দেশটির বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যসহ মোট ৩৩০ নাগরিককে টেকনাফের দুটি স্কুলে রাখা হয়েছে। মিয়ানমারের এই নাগরিকরা কবে নাগাদ দেশে ফিরে যাবেন, জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রথমে সব মিয়ানমার নাগরিককে কক্সবাজারে আনতে হবে। এছাড়া জাহাজটি বড় হওয়ায় একদম উপকূলের কাছে আসতে পারবে না। ফলে ছোট ছোট নৌকা বা ট্রলারে তাদের জাহাজে তুলতে যতটুকু সময় লাগে। এতে কয়েক ঘণ্টা লাগতে পারে।’
বর্তমান অবস্থা
রাখাইন সীমান্তে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী আর বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সঙ্গে যুদ্ধে বেকায়দায় পড়লে প্রায় দুই ব্যাটালিয়ানের অফিসার, সৈনিক, মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ এবং কয়েকটি পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। প্রথমে বাংলাদেশ তাদের বিমানে পাঠাতে চাইলেও মিয়ানমার রাজি হয়নি। এরপর সিদ্ধান্ত হয় সমুদ্রপথে তাদের ফেরত পাঠানো হবে।
এ বিষয়ে একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘মিয়ানমার বাহিনীর সদস্যরা কয়েক দিন ধরে সীমান্ত অতিক্রম করছে। তাদের অস্ত্রগুলো বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের কাছে গচ্ছিত আছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তারা যখন ফেরত যাবে, ওই অস্ত্রগুলো ফেরত দিতে হবে।’আহত ১৫ জনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাদেরও একই জাহাজে ফেরত পাঠানো হবে।’
মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজ
অন্য দেশের সমুদ্র সীমানায় নৌবাহিনীর জাহাজ ঢোকার সময় ‘নোট ভার্বাল’ পাঠিয়ে অনুমতি নিতে হয়। ইতোমধ্যে মিয়ানমার ওই ‘নোট ভার্বাল’ পাঠিয়েছে। ওই কূটনৈতিকপত্রে জাহাজের নাম কী, ধরন, কতজন ক্রু আছেন ইত্যাদি থাকতে হয়।
এ বিষয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি একটি ট্রুপ ক্যারিয়ার। এই জাহাজে করে বিভিন্ন জায়গায় সৈন্য পাঠানো হয়। সাধারণভাবে এই জাহাজের সক্ষমতা হচ্ছে প্রায় ৫০০ জন। ফলে বাংলাদেশে যারা অবস্থান করছেন, তাদের সবাইকে এই জাহাজে পাঠানো সম্ভব।’
এরপর কী
মিয়ানমার এবং বিশেষ করে রাখাইনে চলমান ঘটনার আলোকে বলা যায়, অভ্যন্তরীণ ওই যুদ্ধ আরও বেশ কিছু দিন চলবে। সেক্ষেত্রে দেশটির বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য আবারও বাংলাদেশ সীমান্তে এসে আশ্রয় নিতে পারে। এ বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা প্রয়োজন বলে হতে পারে বলে মনে করেন সাবেক কূটনীতিকরা।
এ বিষয়ে এক কূটনীতিক বলেন, ‘রোহিঙ্গা এবং সরকারি বাহিনীর সদস্য এক বিষয় নয়। আমাদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করার দরকার আছে। যদি সীমান্তে সংঘাত চলতেই থাকে তবে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে। ফলে আমাদের আগে থেকে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা থাকলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সহজ হবে।’