সংসদে ৬৪৮ এমপি বিতর্ক : যে ব্যাখ্যা দিলেন আইনমন্ত্রী
দেশে একসাথে ৬৪৮ জন সংসদ সদস্য রয়েছে বলে যে বিতর্ক উঠেছে, তা সঠিক নয় দাবি করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি এর একটি ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘রাজনৈতিক কারণে সারাদেশে একটি বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য এ বক্তব্য দেয়া হচ্ছে।’বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) সচিবালয়ে এক জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে কথা বলেন আইনমন্ত্রী।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘যারা বলছেন যে, এখন ৬৪৮ জন সংসদ সদস্য আছেন, তারা সংবিধানকে ঠিকভাবে ব্যাখ্যা করছেন না এবং আমার মনে হয়, রাজনৈতিক কারণে সারা দেশে একটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য তারা এই বক্তব্য দিচ্ছেন অথবা সংবিধানের অনুচ্ছেদগুলো সম্বন্ধে তাদের সম্যক জ্ঞান নেই।’
‘আমি মনে করি, কারো জ্ঞান আছে কি না জ্ঞান নেই সেটা বলার আগে তারা যে কথাটা বলছেন; উদ্দেশ্যমূলকভাবে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছেন,’ বলেন তিনি।
সংবিধানের ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদের উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “অত্যন্ত স্পষ্ট করে বলা আছে, ‘সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে। (ক) মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে।’ অর্থাৎ সংসদের পাঁচ বছর পূর্তি হওয়ার আগে ৯০ দিনের মধ্যে। গতবারের যে সংসদ ছিল সেটা ৩০ জানুয়ারি বসেছিল এবং ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি তার পাঁচ বছর পূর্ণ হয়। তার মানে ৩০ জানুয়ারির ৯০ দিন আগে যে কোনো সময় এই নির্বাচন করা প্রয়োজন ছিল। ৭ জানুয়ারি নির্বাচন হয়েছে, সংবিধান অনুযায়ী হয়েছে।”
“আরেকটা কথা আছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার (ক) উপ-দফা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিগণ, উক্ত উপদফায় উল্লিখিত মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত, সংসদ সদস্য রূপে কার্যভার গ্রহণ করিবেন না।’ মানে যে সংসদ ছিল যতক্ষণ পর্যন্ত সেটার সমাপ্তি না হবে তারা কার্যভার গ্রহণ করবে না। সংসদ সদস্যের কার্যভার সংসদে বসা, সংসদে আইন প্রণয়ন করা, সংসদে বক্তব্য দেয়া,” বলেন তিনি।
১৪৮(২)(ক) অনুচ্ছেদের উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “এতে বলা হয়, ‘১২৩ অনুচ্ছেদের (৩) দফার অধীন অনুষ্ঠিত সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপিত হইবার তারিখ হইতে পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে এই সংবিধানের অধীন এতদুদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা তদুদ্দেশ্যে অনুরূপ ব্যক্তি কর্তৃক নির্ধারিত অন্য কোন ব্যক্তি যে কোন কারণে নির্বাচিত সদস্যদের শপথ পাঠ পরিচালনা করিতে ব্যর্থ হইলে বা না করিলে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার উহার পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে উক্ত শপথ পাঠ পরিচালনা করিবেন, যেন এই সংবিধানের অধীন তিনিই ইহার জন্য নির্দিষ্ট ব্যক্তি।’ অর্থাৎ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার তিন দিনের মধ্যে তারা শপথ নেবেন। শপথ ও কার্যভার গ্রহণ করা দুটি আলাদা জিনিস। শপথ নেয়া মানেই কার্যভার গ্রহণ করা নয়।”
তিনি আরো বলেন, “শেষ কথা বলবো ৫৬(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘যে সংসদ সদস্য সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন বলিয়া রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতীয়মান হইবেন, রাষ্ট্রপতি তাঁহাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করিবেন।’ নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সংসদীয় কমিটির মিটিং করে আমরা আমাদের নেতা নির্বাচিত করেছিলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।”
উল্লেখ্য, বুধবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘এ মুহূর্তে একাদশ সংসদের ৩৫০ জন আর ডামি দ্বাদশ সংসদের ২৯৮ জন মোট ৬৪৮ জন শপথবদ্ধ এমপি রয়েছেন। এখন রাষ্ট্রপতি সংসদ অধিবেশন ডাকলে দুই সংসদের সদস্যরাই তাতে যোগ দিতে পারেন। অথচ এটি সাংবিধানিকভাবে অবৈধ।’
এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিতরা এমপি হিসেবে শপথ নিলেও সংসদে তারা কার্যভার গ্রহণ করার পর থেকে এমপি হিসেবে বিবেচিত হবেন।’