দেশ থেকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার উধাও হয়ে গেছে : রিজভী

0
418515785_289467740801563_3695849120048460977_n
Array

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে নিপীড়ক আখ্যা দিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশ থেকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার উধাও হয়ে গেছে। সরকারের অকথ্য নির্বাচন ও পৈশাচিক অত্যাচারে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও হাজার হাজার নেতাকর্মীরা কারাবন্দী হয়ে এখনও এক দম বন্ধ করা জীবন যাপন করছে।

শনিবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, সমস্ত মানবিক মৌলিক অধিকার হরণ করে নিপীড়ণের সর্বোচ্চ মাত্রা প্রয়োগ করা হয়েছে। বিএনপির কারাবন্দী মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও হাজার হাজার নেতাকর্মীরা অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসা না পেয়ে অমানবিক জীবন যাপন করছে।

রিজভী বলেন, রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে ডামি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ঘুমিয়ে থেকে নির্বাচনের নামে যেই সংসদের জন্ম দিয়েছেন, আগামীতে দেশে জনগণের ভোটে জবাবদিহিতামূলক সরকার গঠিত হলে জনগণের কাছে প্রতিটি টাকার হিসাব দিতে হবে। এই ‘ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত ‘ডামি সরকারের এক ডামি মন্ত্রী বলেছেন, ‘দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করা হবে’। এই কথার জবাবে বলতে চাই, যে দেশে ‘ডামি নির্বাচন’র মাধ্যমে ‘ডামি সরকার’ আর ‘ডামি মন্ত্রী’ থাকে সেই দেশের অনিষ্ট করতে কোনো ষড়যন্ত্রের প্রয়োজন হয়না। জনম্যান্ডেটহীন ‘ডামি সরকার’ই যথেষ্ট দেশকে প্রভুদের পদানত ও ধ্বংস করতে।

তিনি বলেন, একজন মাত্র ব্যক্তির ক্ষমতালিপ্সার কারণে দেশ থেকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার উধাও হয়ে গেছে। মানুষের ভোটের অধিক লুন্ঠন করা হয়েছে। বাস্তবতা হলো, দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণই নয় বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এখন বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে।

রিজভী বলেন, গতকাল শুক্রবার ছয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন যৌথ বিবৃতি দিয়ে গত ৭ জানুয়ারির ‘ডামি নির্বাচন’ নিয়ে গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্ন তুলেছে। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, দেশের গণতন্ত্রপ্রেমী জনগণের কাছে ২০১৪ কিংবা ২০১৮ সালের মতোই অবৈধ এবং অগণতান্ত্রিক। সংবিধান অনুযায়ী জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হতে হবে। কিন্তু বর্তমান সরকার জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়নি।

তিনি বলেন, বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের ৬৩টি রাজনৈতিক দল এবং দেশের প্রায় প্রতিটি গণতন্ত্রকামী মানুষ ৭ জানুয়ারির ভুয়া নির্বাচন সম্পূর্ণভাবে বর্জন করেছে। এরপরও নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি, ভোট ডাকাতি, ২০১৮ সালের মতো রাতের বেলায়ও ব্যালটে সিল মারার মতো অপকর্মের আশ্রয় নিতে হয়েছে। আওয়ামী লীগের ‘ডামি প্রার্থীরা’ই এই অভিযোগ করেছেন। অপ্রিয় হলেও সত্য, ৭ জানুয়ারির ভাগবাটোয়ারার নির্বাচন নতুন প্রজন্মের সামনে ৭৩ সালের নির্বাচনের জাল জালিয়াতি আর সন্ত্রাসের চিত্র তুলে ধরেছে। অপ্রিয় হলেও সত্য, ভোট ডাকাতি মনে হয় আওয়ামী লীগের বংশানুক্রমিক ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী বিরোধী দলসহ আন্তর্জাতিক অধিকার গ্রুপ এবং গণতান্ত্রিক বিশ্ব বাংলাদেশে বিরোধীদের ওপর সরকারী নিপীড়ণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেও ফ্যাসিস্ট সরকার সেগুলোকে ভ্রুক্ষেপ করছে না। কয়েক সপ্তাহে কারাহেফাজতে মৃত্যুর সংখ্যা সর্বোচ্চ। হিটলালের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের দুর্বিষহ উৎপীড়ণের সাথেই কেবল সরকারের কারাগারের মিল পাওয়া যায়। আমি অবিলম্বে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ গ্রেপ্তারকৃত সকল নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করছি।

নতুন কর্মসূচির প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, অবশ্যই একদফা দাবিতে সরকারের পতনের পরবর্তী আন্দোলনের ধারা ঠিক করা হচ্ছে। আমাদের নেতৃবৃন্দ প্রতিদিন প্রায় বসছেন। কর্মসূচি ঠিক করে তারা জানাবেন। আর আমরা কর্মসূচি ও আন্দোলনের মধ্যে আছি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা কি আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি? আন্দোলনে আমাদের নতুন কর্মসূচি প্রণয়ন, আবার নতুন কি কর্মসূচি আসবে, ৭ই জানুয়ারি পর্যন্ত এক ধারায় হয়েছে, এখন আমরা কোন ধারায় আন্দোলনে যাবো, আমাদের সঙ্গে আরও দল রয়েছে- তাদের সঙ্গে কথা বলার বিষয় আছে। কথা বলার পরে একটা কর্মসূচি ঠিক হয়। সেভাবেই আমাদের কর্মসূচি যাচ্ছে।

অপর আরেক প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, আন্দোলনের পরিপূর্ণতায় স্রোত আমরা যত বয়ে দিবো, স্রোতের ধারা যত আসবে ততই আন্দোলন পরিপূর্ণ হবে এবং তারা (সরকার) পরাজিত হবে। আর কখন পরিস্থিতি হবে, সেটা বলা যায় না। শুধু একটা বলা যায়, জনগণের আন্দোলন যদি আর্দশ, ন্যায় ও গণতন্ত্রের পক্ষের হয়, সেই আন্দোলন কখনো বৃথা যাবে না। এটাই হচ্ছে ইতিহাসের রেকর্ড। এখানে জনগণ পরাজিত না। অপশক্তি কিছুদিন বাধা দিয়ে রাখতে পারে। কিন্তু তার স্রোতকে আটকে রাখা যাবে না। কোনো না কোনো দিক থেকে এটা প্রতিহত করে এগোবে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা তামাশার নির্বাচন। এটা কোনো সরকার না। কিসের মহাযাত্রা, কি হবে। ওটা সরকারের মরণযাত্রা তারা (আওয়ামী লীগ) করছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা জয়নুল আবদীন ফারুক, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

About Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat