নির্বাচনী প্রচার শুরু করে নৌকায় ভোট চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

0
Array

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আগামীর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয়ে আজ সিলেটে সমাবেশে দেশবাসীর কাছে তাঁর দলের নির্বাচনী প্রতীক ‘নৌকায়’ ভোট চেয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য তাঁর দলের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন তিনি।

সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ মানে স্মার্ট সরকার, স্মার্ট জনগণ, স্মার্ট ইকোনমি এবং স্মার্ট সোসাইটি। এর মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে একটি আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব, যা টেকসই অর্থনীতি, মেধাভিত্তিক শিক্ষা, উন্নত সমাজ, ন্যায়পরায়ণ বাংলাদেশ, স্বচ্ছ বাংলাদেশ হবে।’

প্রধানমন্ত্রী আজ বুধবার বিকেলে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে আমরা যাদের নৌকা মার্কার প্রার্থী দিয়েছি, তাদের নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন। আপনাদের কাছে সেটাই আমার আহ্বান।’

‘আপনারা কি নৌকার প্রার্থীদের ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন?’ প্রধানমন্ত্রী সমবেত জনতার উদ্দেশে এ প্রশ্ন রাখলে উপস্থিত জনতা সমস্বরে দুই হাত তুলে তাতে সম্মতি জানান।

ঐতিহ্য মেনে হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহ পরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত শেষে সিলেট-১ আসন থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন শেখ হাসিনা।

জিয়ারতকালে বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন এবং সমাবেশের মঞ্চেও উপস্থিত ছিলেন তিনি।

সমাবেশে বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লুটেরা-খুনি-দুর্নীতিবাজ ও এতিমের টাকা আত্মসাৎকারীরা নির্বাচন বানচাল করার জন্য মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করছে। যারা লুটেরা, খুনি, হত্যাকারী, দুর্নীতিবাজ, এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী; তারাই এ দেশের মানুষকে আগুন দিয়ে পোড়ায়। নির্বাচন বানচাল করতে চায়। তিনি অগ্নিসংযোগ এবং মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানান।

অগ্নিসন্ত্রাস করে বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, মানুষের জীবন কেড়ে নেবে, মানুষকে ভোট দিতে দেবে না, নির্বাচন বন্ধ করবে, এত সাহস কোথা থেকে পায়?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগুন নিয়ে খেলতে গেলে আগুনেই হাত পোড়ে, এটা তাদের মনে রাখা উচিত। তারা মনে করেছে, অগ্নিসংযোগের কয়েকটি ঘটনা ঘটালেই সরকার পড়ে যাবে। অত সহজ নয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার ফলে জনগণ সুফল পাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সোনার বাংলা গড়ে তোলা এবং সেই লক্ষ্যেই আমি নিরলস কাজ করছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর হারানোর কিছু নেই। কারণ, তিনি বাবা, মা, ভাইসহ পরিবারের আপনজন সবাইকে হারিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আর আমার একমাত্র ছোট বোন। সবকিছু হারিয়ে এবং আমার ছোট বাচ্চাদের তাদের মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত করে আমি ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে ফিরে এসেছি শুধু আমার বাবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণ করতে।’

গত ১৫ বছরে তাঁর সরকারের বাস্তবায়িত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় এলে সিলেটে মেট্রোরেল চালুর সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে, বন্যা রোধে নদীর তীর উন্নয়ন, ঢাকা-সিলেট রুটে ডাবল ট্র্যাক রেললাইন বসানো, সিলেটের প্রবেশদ্বারখ্যাত কিনব্রিজের পাশে আরেকটি ব্রিজ নির্মাণ, কুশিয়ারা, মনু ও অন্যান্য নদীতে ড্রেজিং পরিচালনার পাশাপাশি এখন ৫০ বছর পর সুরমা নদীর ড্রেজিং করা হচ্ছে এবং সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ নৌকায় ভোট দিলে এবং আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে পারলে সমগ্র বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী করে তুলব। আর কোনো মানুষ গৃহহীন, ঠিকানাবিহীন এবং ভূমিহীন হবে না। এটাই আমাদের উদ্দেশ্য। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি বাংলাদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাবে।’

বাংলাদেশ ইতিমধ্যে একটি উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি বাস্তবায়নের জন্য তার সরকারের প্রয়োজন। সিলেটে এখন ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষ নেই উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি প্রতিটি গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষকে বাড়ি দিতে পেরেছি। তাদের চিকিৎসার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক দিয়েছি। অর্থাৎ আমরা মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করছি। যা বাকি আছে তা–ও করব ইনশা আল্লাহ।’

ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে জনসভার মঞ্চে আসেন আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনা। সভামঞ্চে এসে নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে জাতীয় পতাকা নেড়ে শুভেচ্ছা জানান শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। জনগণও স্লোগানে স্লোগানে চারদিক মুখর করে ব্যানার, ফেস্টুন ও পতাকা নেড়ে প্রতি–উত্তর দেয়। এরপর আঞ্চলিক ভাষায় গান গেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহনাকে স্বাগত জানায় সিলেটবাসী।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, প্রখ্যাত অভিনেত্রী তারিন জাহান সমাবেশে বক্তব্য দেন।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিনের সভাপতিত্বে সমাবেশ পরিচালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন। সমাবেশ ঘিরে সমগ্র সিলেট অঞ্চলে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে এবং স্থানীয় জনগণের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা জাতীয় নির্বাচনের আগে তাঁদের দলীয় প্রধানের আগমনে উল্লাসে মেতে ওঠেন। নির্বাচনী প্রচারণার আনুষ্ঠানিক সূচনা হওয়া জনসভাকে কেন্দ্র করে পুরো সিলেট যেন উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়।

বেলা তিনটায় প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশে যোগদানের কথা থাকলেও সকাল থেকে লাখ লাখ মানুষ সমাবেশ ময়দানে ভিড় করেন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। অনেকে আগের রাতে সমাবেশস্থলে চলে আসেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনস্রোত জনসভাস্থলের চারপাশ পূর্ণ করে বহুদূর পর্যন্ত দীর্ঘ হয়। যেন মানবসমুদ্রে পরিণত হয় সমগ্র এলাকা। সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও আশপাশের জেলা থেকে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের কয়েক হাজার নেতা–কর্মী রিজার্ভ বাস, পিকআপ, মোটরসাইকেল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন এবং হাজার হাজার জনতাকে নেচেগেয়ে আনন্দ করতে করতে সমাবেশে যোগ দিতে দেখা যায়।

About Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat