দিল্লিতে ৯০ দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বসবেন পররাষ্ট্রসচিব

0
image-743096-1700670337 (1)
Array

নয়াদিল্লি সফরে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে ৯০টি দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনা করবেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে দূতাবাস নেই, কিন্তু কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে, এমন দেশগুলোর কূটনীতিকদের সঙ্গে এই বৈঠক হবে।

২৪ নভেম্বর নয়াদিল্লিতে ভারত ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা ছাড়বেন মাসুদ বিন মোমেন। এই সফরের বিষয়ে আজ বুধবার মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন তিনি।

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, বাংলাদেশের ‘অ্যাক্রিডেটেড’ (সমদূরবর্তী দায়িত্ব পালনরত মিশন) ৯০ দেশের দূতাবাস দিল্লিতে রয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এসব দূতাবাসের সঙ্গে একটি আলোচনা করা হবে। দূতাবাসগুলোকে বাংলাদেশের উন্নয়ন–অগ্রগতি সম্পর্কে জানানো হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও জাতীয় নির্বাচন, বিশেষ করে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে সরকারের প্রতিশ্রুতি এবং নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি নিয়ে জানানো হবে।

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নিয়ে এ দূতাবাসগুলোর প্রশ্ন থাকতে পারে। যেমন বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আবেদনের সময় বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়গুলো জানানো হবে। সেই সঙ্গে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক সমুদ্রবিষয়ক সংগঠন আইএমওতে বাংলাদেশের প্রার্থিতার প্রচারণা চালানোর একটি সুযোগ হবে।

৯০ দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফিং নিয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে ভারতের তো সব জানাই রয়েছে। ৯০ দূতাবাসের যাদের দূতাবাস বাংলাদেশে নেই, তাদের কাছে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়টি তুলে ধরব।’

পররাষ্ট্রসচিবের দিল্লি সফর এমন সময়ে হচ্ছে, যখন বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের মতো ভারতেও আলোচনা চলছে। ১০ নভেম্বর দিল্লিতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের (২+২) বৈঠকেও বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি আলোচিত হয়। বৈঠক শেষে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রা সাংবাদিকদের বলেছিলেন, নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের দায়িত্ব সে দেশের জনগণের। নিকট প্রতিবেশী এবং অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি ভারত শ্রদ্ধাশীল।

সফরে প্রধানমন্ত্রীর কোনো রাজনৈতিক বার্তা ভারতে নিয়ে যাচ্ছেন কি না এ প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, স্বাভাবিকভাবেই সামনে যেহেতু নির্বাচন রয়েছে, সুতরাং ভারতের পক্ষ থেকে কিছু জানার থাকলে তা অবহিত করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আলাদা করে কোনো বার্তা নিয়ে যাওয়ার বিষয় নেই।

নির্বাচনের আগমুহূর্তে প্রতিবার ঢাকা–দিল্লির পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচন তো দেরি আছে। অনেক কিছু ধারণা করা যায়। তবে বৈঠকের আলোচনার বিষয়বস্তু নির্ধারিত। এটা জরুরি না যে এখানে কোনো গোপন বিষয় রয়েছে।

ঢাকা–দিল্লি আলোচনার রাজনৈতিক ইস্যু সম্পর্কে জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, সামনে ভারতেরও নির্বাচন, বাংলাদেশেরও নির্বাচন। নির্বাচন–পূর্ববর্তী ও পরবর্তী দুই দেশের সম্পর্ক যাতে স্বাভাবিকভাবে চলতে পারে, নির্বাচন যাতে এখানে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে, তা আলোচনায় আসবে।

পররাষ্ট্রসচিবের এই সফরে রাজনৈতিক বলা যায় কি না, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এর ব্যাখ্যা কীভাবে দেবেন জানি না। তবে আমাদের রেগুলার যে মিটিং হয়, এটাও সেভাবে হবে।’

শ্রম অধিকার নিয়ে বিশ্বব্যাপী কাজ করার যে ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছে, তা নিয়ে দিল্লিতে আলোচনা হবে কি না, জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, সাধারণত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে তৃতীয় দেশের বিষয়ে আলোচনার সুযোগ কমই রয়েছে। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি ভারত আলোচনায় নিয়ে এলে তাঁরা প্রস্তুত থাকবেন। নির্বাচনের আগে ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের ঢাকা সফরের সম্ভাবনা রয়েছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা বলতে পারছি না।’

নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন হলে, নীতিরও পরিবর্তন হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সফরটি আগাম ও সাহসী হয়ে যাচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক একটি ধারাবাহিক পর্যায়ে রয়েছে। এর সঙ্গে সরকার পরিবর্তনের কোনো সম্পর্ক দেখছেন না।

চলতি বছর ভারত-বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে এটা দ্বিতীয় বৈঠক হতে যাচ্ছে। বছরে দ্বিতীয়বার এই বৈঠক নিয়ে প্রশ্ন করলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘যদিও বৈঠকটি বছরে একবার হয়। তবে এমন কোথাও বলা নেই একাধিকবার হতে পারে না। বছরের শুরুতে একটি বৈঠক হয়েছে, আবার বছরের শেষে বৈঠকটি হচ্ছে। এর মধ্যে প্রচুর অগ্রগতি হয়েছে।’ তিনি জানান, ২৪ নভেম্বর বৈঠকের জন্য বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল ভারত যাবে। প্রতিনিধিদলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছাড়াও স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সদস্যরা থাকবেন। এটা একটা নিয়মিত বৈঠক, সেখানে দুই দেশের সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দিতে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রা গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা সফর করেন। ওই সময় তিনি মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন।

এবার বৈঠকে বাংলাদেশের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো সম্পর্কে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, রাজনৈতিক, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, যোগাযোগ, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, অভিন্ন নদী, উন্নয়ন সহায়তা, প্রকল্প, কনস্যুলার, সংস্কৃতি সহযোগিতাসহ আঞ্চলিক ও উপ–আঞ্চলিক এবং বহুপক্ষীয় বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে। এ ছাড়া গ্লোবাল সাউথের স্বার্থে কীভাবে একসঙ্গে কাজ করা যায় এবং জাতিসংঘসহ বহুপক্ষীয় ফোরামে সহযোগিতা বাড়ানো নিয়ে আলোচনা হবে। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে হালনাগাদ তথ্য দিল্লির কাছে তুলে ধরা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে ভারতের সহযোগিতা বাংলাদেশ সব সময় চেয়ে এসেছে।

About Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat