স্কুল-কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে বাড়ছে আতঙ্ক,হরতাল-অবরোধের প্রভাব

0
Array

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে চলছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি। নিয়মমাফিক সপ্তাহের পাঁচ দিন স্কুল-কলেজের ক্লাস-পরীক্ষা কার্যক্রম চললেও কিছুদিন ধরে চারদিনই চলছে হরতাল-অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচি।

রোববার হরতালের মধ্য দিয়ে শুরু হলো আরও একটি সপ্তাহ। এভাবে চলতে থাকলে আগামী সপ্তাহ থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে ধারণা করা হচ্ছে। হরতাল-অবরোধ চলাকালীন সড়কে ব্যক্তিগত যানবাহনসহ গণপরিবহণের সংখ্যা অনেক কম থাকে। এর মধ্যেও ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই তাদের যানবাহন বের করেন। কিন্তু প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এমন বাস্তবতায় স্কুল-কলেজের পরীক্ষা ও ক্লাস থাকায় ঝুঁকি নিয়ে তাদের ঘর থেকে বের হতে হয়।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে জানানো হয়েছে, যেসব শিক্ষার্থী হরতাল কিংবা অবরোধে স্কুলে আসতে পারছে না, তাদের স্কুলে অনুপস্থিত দেখানো যাবে না। বরং ক্লাসে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস করাতে হবে। দেখা গেছে, হরতালে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের স্কুল-কলেজে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে উপস্থিত হতে হচ্ছে। আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ না থাকলেও রুটিনমাফিক স্কুল-কলেজে আসা-যাওয়ায় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

স্কুলগুলোয় বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। কলেজে এইচএসচি প্রথম বর্ষে পুরোদমে শুরু হয়েছে ক্লাস। তবে বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে পরীক্ষায় মোটামোটি উপস্থিতি থাকলেও ক্লাসের উপস্থিতি বেশ কম। যাদের বাড়ি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি, তারা যেতে পারছে। কিন্তু যাদের গণপরিবহণ বা ব্যক্তিগত যানবাহনে যেতে হয়, তাদের অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে যেতে চায় না। কিন্তু তাদের বাধ্যতামূলক যেতে হচ্ছে।

এদিকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করার সময়সূচি নির্ধারণ করে দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বাধ্য হয়ে নির্ধারিত সময়ে ক্লাস ও পরীক্ষা শেষ করতে হচ্ছে। হরতাল-অবরোধের কারণে নির্ধারিত পরীক্ষাসূচি পরিবর্তন করে ছুটির দিনেও (শুক্রবার ও শনিবার) ক্লাস-পরীক্ষা নিচ্ছে রাজধানীর অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আবার অনেকেই নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী হরতালের মধ্যে ক্লাস-পরীক্ষা নিচ্ছে।

শিক্ষা বিভাগ বলছে, ‘আগের নির্দেশনার আলোকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু রাখতে হবে। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে চলতি শিক্ষাবর্ষের সব কার্যক্রম শেষ করতে হবে।’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা ও মূল্যায়ন ৩০ নভেম্বরের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের।

অভিভাবকরা বলছেন, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা ক্রমেই বাড়ছে। হরতাল অবরোধে বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে সন্তানদের ক্লাসে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এ নিয়ে শিক্ষা বিভাগকে নতুন করে ভাবতে অনুরোধ করেছেন তারা।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকাসহ দেশের সরকারি স্কুলগুলোয় হরতালেও পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ রাজধানীর বড় আরও কয়েকটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও রুটিন মেনে রবি-সোমবার পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। নটর ডেম কলেজসহ উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয়ও পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে যেতে হচ্ছে। অনেকের ব্যাবহারিক ক্লাস থাকে। এতে তাদের নম্বর যুক্ত হয়। ফলে শিক্ষার্থীদের বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যেও ক্লাসে যেতে হচ্ছে।

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক শেখ রোকনুজ্জামান বলেন, আমরা সরকারে নির্দেশনা অনুযায়ী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করা করার প্রস্তুতি নিয়েছি। চলমান হরতালেও স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। এতে শিক্ষার্থী উপস্থিতি রয়েছে। তবে কলেজ শাখায় উপস্থিতি কম রয়েছে বলে জানান তিনি।

রাজধানীর উদয়ন স্কুলে নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী হরতালেও চলছে বার্ষিক পরীক্ষা। জানতে চাইলে রাজধানীর উদয়ন স্কুলের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ আরিফুর রহমান বলেন, আমরা নির্ধারিত সময়সূচিতে ক্লাস-পরীক্ষা নিচ্ছি। সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে এ বছরের শিক্ষা কার্যক্রম শেষ করতে হবে।

জানতে চাইলে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। এ অস্থিতিশীল রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে বাচ্চারা মানসিক চাপে থাকে। ফলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে বাড়ছে আতঙ্ক।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আমরা আমরা শুক্র ও শনিবার বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। হরতাল-অবরোধের কারণে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের বার্ষিক পরীক্ষা ও ক্লাস শুক্র-শনিবার বন্ধের দিনই অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এএনএম শামসুল আলম খান বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পান। পরীক্ষা গ্রহণে সমস্যার কারণে পরীক্ষাসূচি পরিবর্তন করে শুক্র ও শনিবার নেওয়া হচ্ছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের পরিচালক (প্রশাসন) প্রফেসর মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছি। সে অনুযায়ী পরীক্ষা শেষ করতে হবে। তিনি জানান, অভিভাবকদের পক্ষ থেকে আতঙ্কের বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি।

About Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat