শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার রক্ষার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার গত বুধবার রাতে দেয়া এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে শ্রমিক এবং ট্রেড ইউনিয়নের চলমান বিক্ষোভ কর্মসূচি সম্পর্কে আমরা অবগত রয়েছি। আমরা বাংলাদেশ সরকারকে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার রক্ষা এবং শ্রমিক ও শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সঠিক তদন্তের আহ্বান জানাই।
মিলার বলেন, যে সব মালিকপক্ষ সঙ্গত কারণে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির অনুমতি দিয়েছে আমরা তাদের সাধুবাদ জানাই। শ্রমিক ও তাদের পরিবার যাতে অর্থনৈতিক চাপের এ সময় মোকাবেলা করতে পারে সেজন্য যুক্তরাষ্ট্র ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি ফয়সালা করার আহ্বান জানাচ্ছে।
তিনি বলেন, শ্রমিকরা যাতে স্বাধীনভাবে ইউনিয়ন করতে পারে এবং ভয়ভীতি ছাড়া তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কথা বলতে পারে সরকারকে সেই পরিবেশের নিশ্চয়তা দিতে হবে। বাংলাদেশ এবং বিশ্বজুড়ে শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র অঙ্গিকারবদ্ধ।
মুখপাত্র বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে নূন্যতম মজুরির দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর সহিংসতা এবং শ্রমিক ও বৈধ ট্রেড ইউনিয়ন কর্মকান্ডকে অপরাধীর কাটগড়ায় দাঁড় করানোর ঘটনার নিন্দা জানায় যুক্তরাষ্ট্র। গত সপ্তাহে ২৬ বছর বয়সী পোশাক শ্রমিক ও সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সদস্য রাসেল হাওলাদার পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এ ঘটনায় আমরা দুঃখ প্রকাশ করেছি। সেই সাথে ঢাকায় একটি কারখানায় বিক্ষোভকারীদের আগুনের ঘটনায় ইমরান হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় আমরা শোক প্রকাশ করেছি। আমরা নিহত শ্রমিকদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।
সহিংস বক্তব্য গভীরভাবে অসহযোগিতামূলক : ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মুজিবুল হক চৌধুরী প্রকাশ্যে পিটানোর হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের উপ-মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেছেন, আমি মনে করি এরকম সহিংস বক্তব্য গভীরভাবে অসহযোগিতামূলক। ভিয়েনা কনভেনশনের অধীনে কূটনীতিকদের নিরাপত্তা দিতে যেকোনো দেশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
আমাদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক ও স্থাপনার নিরাপত্তার গুরুত্ব সর্বাধিক।
উল্লেখ্য, গত সোমবার চাম্বল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত হরতাল-অবরোধ বিরোধী সমাবেশে মুজিবুল হক চৌধুরী বলেন, পিটার হাস বলেছে এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। তুই (পিটার হাস) হোলি বিএনপির ভগবান। তোরে এমন পিটুনি দেবো। বাঙালি কি ফাজিল তা তো জানোস না।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মুজিবুল হক চৌধুরীর এ মন্তব্য সম্পর্কে বক্তব্য জানতে চাইলে বেদান্ত প্যাটেল তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
প্যাটেলকে আরো প্রশ্ন করা হয়, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আরেকটি একপক্ষীয় নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ পরিস্থিতির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কি মনে করছে?
জবাবে উপ-মুখপাত্র বলেন, আমরা কোনো প্রার্থী বা কোনো দলকে সমর্থন করি না। আমরা চাই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সবাই একসাথে কাজ করবে। এ জন্য বাংলাদেশের সব মহলের সাথে যুক্তরাষ্ট্র অব্যাহতভাবে যোগাযোগ রাখছে।
অন্য একজন সাংবাদিক জানতে চান, বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে এ বিষয়ে আপনি কিভাবে আস্থাশীল?
উত্তরে প্যাটেল বলেন, বাংলাদেশের জনগণ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। আমরাও সেটা চাই। এ জন্য আমরা সরকার, বিরোধী দল, নাগরিক সমাজ ও অন্যান্য অংশীদারদের সাথে যোগাযোগ রাখছি। বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে অংশীদারদের একসাথে কাজ করতে হবে।
নির্বাচনের প্রায় দুই মাস আগে যারা ভাংচুর করছে, নির্বাচনী ব্যবস্থায় বাধা সৃষ্টি করছে, তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেবে কিনা জানতে চাইলে উপ-মুখপাত্র বলেন, সম্ভাব্য ভিসা নিষেধাজ্ঞা বা কোনো সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমরা আগে থেকে অনুমাননির্ভর কথা বলি না।