সরকারের প্রশ্রয়ে পুলিশ মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করছে : রিজভী
সরকারের প্রশ্রয়ে পুলিশ মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করছে বলে মন্ত্রব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, ‘সরকারের যে আস্কারা পুলিশ পাচ্ছে, তাতে তারা আরো উৎসাহী হয়ে উঠছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও কর্মকর্তা যারা আছেন তারা কখনোই চিন্তা করেছেন না যে তারা মাত্রাতিরিক্ত শক্তিই প্রয়োগ করে যাচ্ছেন গুলি, টিয়ারশেল দিয়ে। তারা ভাবছেনই না সেগুলো জনগণের পয়সায় কেনা।’বুধবার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ভার্চুয়ালি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘অবরোধ কর্মসূচিতে আগের মতো সারাদেশে চালানো হয়েছে প্রবল বায়ু বয়ে যাওয়ার পুলিশি আক্রমণ। পুলিশ যেন একেবারে ধাবমান হয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে নেতাদেরকে ধরা, কর্মীদেরকে ধরা। না পেলে মা-বাবা, ভাই বা পরিবারের অন্য লোকগুলোকে নানাভাবে নাজেহাল হয়রানি করা হচ্ছে, ভাঙচুর করা হচ্ছে ঘরবাড়ি আসবাবপত্র। এটার কোনো ব্যতিক্রম নেই।’
রিজভী বলেন, ‘খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের যে আন্দোলন সেখানে সরকার বিদ্বেষ চালাচ্ছে। গাজীপুরে পুলিশের গুলিতে কয়েক দিন আগে এক শ্রমিককে হত্যা করা হয়েছে, আজ এক নারী শ্রমিকে হত্যা করা হয়েছে। শ্রমিককে হত্যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কেন এত উৎসাহী? কারণ এই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে গণতান্ত্রিক শক্তির ওপরে যেভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে, রক্ত ঝরানো হচ্ছে। তাতে সরকারের যে আস্কারা তারা পাচ্ছে তাতে তারা আরো উৎসাহী হয়ে উঠছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে এই আন্দোলন দমন নিপীড়ন নিষ্ঠুরতার এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে, এটি বলার অপেক্ষা রাখে না। এমন অমানবিকতার পরিচয় পাচ্ছি সরকারের পুলিশসহ নানা বাহিনীর কাছে সেটি ভয়ঙ্কর, সেটি মরণঘাতী। এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক করে বলে, এত টাকা দিলে তোকে ছেড়ে দেয়া হবে, না হলে তোর ওপরে আরো ভয়াবহ মামলা দেয়া হবে, মাদক মামলা দেয়া হবে। প্রায় ক্ষেত্রে প্রায় প্রত্যেকটি থানায় এই কাজ চলছে। বিরোধী দলের যুব, ছাত্রনেতাদের ধরে নিয়ে থানায় বড়কর্তারা অমানবিকভাবে নির্যাতন করে যাচ্ছে।’
ফেনীতে চিনির ট্রাকে আগুন দিয়ে আটক যুবলীগ নেতার প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘সত্য কখনো ঢাকা থাকে না, সেটি প্রকাশ পাবেই। আমি আগেই বলেছি, দায় চাপানোর খেলা খেলতে পারে আওয়ামী লীগ। সমস্ত কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করে বন্ধুকের নলের মুখে এহন কোনো কাজ নেই তারা করেনি।’
আওয়ামী লীগের চট্টগ্রামের নেতা মার্কিন এক কূটনীতিকের গায়ে হাত তুলতে চায় জানিয়ে জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘কোন দিকে গেছে রাজনীতি? এদেশের একটা ঐতিহ্য আছে, আমি তাকে পছন্দ করি আর না করি সে আমার বাসায় এলে তাকে উচু পিরিটা দিতে হয়। এটাই আমাদের রীতি, এটাই আমাদের ঐতিহ্য, এটা আবহমান বাংলা থেকে চলে আসছে। মার্কিনের এক নাগরিকের গায়ে হাত দেবেন? কোথায় নিয়ে যাচ্ছে এই দেশটাকে? আওয়ামী লীগের কতিপয় সন্ত্রাসী যেভাবে পিটার ডি হাসকে হুমকি দিচ্ছে এটি আমাদের দেশের জন্য হুমকি স্বরূপ।’
বিএনপির ঠিকানা হয়, কারাগার না হয় রাজপথ এমন মন্তব্য করে বিএনপির এই শীর্ষনেতা আরো বলেন, ‘সকল প্রতিকূলতা সকল ধরনের প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে নেতাকর্মীরা বুকে বুলেট বরণ করে রাজপথে দাঁড়াচ্ছে। যতক্ষণ না পর্যন্ত তাদের লক্ষ্য দেশের হারানো গণতন্ত্র ফিরে না আসা এবং অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন না আসা পর্যন্ত তারা রাজপথে থাকবে। আমাদের এই সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। আমাদের ঠিকানা হয় কারাগার, না হয় রাজপথ, এর মাঝখানে আমাদের কিছু নেই। আমাদেরকে কারাগারে নানাভাবে আঘাত করতে পারে, অত্যাচার করতে পারে, সমস্ত কিছু বরণ করেই আমাদের অভিযাত্রা অব্যাহত থাকবে।’
এ সময় রিজভী সারাদেশে গ্রেফতার ও মামলা, হামলার ঘটনায় বিবরণ তুলে ধরে অভিযোগ করে বলেন, ‘মাগুরায় এক বিএনপি নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।’