নয়াপল্টনেই মহাসমাবেশের প্রস্তুতি, ঢাকামুখী সর্বস্তরের মানুষসহ দলের নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ী
মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী দূরের জেলা থেকে আগেভাগেই রাজধানীতে প্রবেশ করছেন তারা। বুধবার থেকেই মূলত নেতাকর্মীরা আসা শুরু করেছেন। আত্মীয়স্বজন কিংবা বন্ধুর বাসায় অবস্থান করতে, পাশাপাশি অহেতুক ঘোরাঘুরি না করতে কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে। কোনো ধরনের উসকানিতে পা না দিয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থেকে শনিবারের মহাসমাবেশ সফল করতে নেতাকর্মীদের নানা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় পর্যায়েও নানা প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সার্বিক নিরাপত্তায় ওইদিন নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক টিম থাকবে দলটির। এজন্য স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের পাঁচ শতাধিক নেতাকে শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সমাবেশস্থল নজরদারি করতে তারা নিজস্ব ড্রোনসহ নানা ব্যবস্থা রেখেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
এদিকে মহাসমাবেশে ঢাকাসহ দেশব্যাপী সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে সব সাংগঠনিক জেলায় চিঠি দিয়েছে বিএনপি। সর্বস্তরের মানুষসহ দলের নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের মহাসমাবেশে যোগদান করে একদফা দাবি আদায়ে দলের পক্ষ থেকে সোচ্চার আওয়াজ তোলার উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠিতে আরও বলা হয়, মহাসমাবেশ থেকে ঘোষিত পরবর্তী কর্মসূচি সফল করার জন্য দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ২৮ অক্টোবরের (শনিবার) পরে নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করবেন।
এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, শনিবার ঢাকার নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির উদ্যোগে মহাসমাবেশের সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। এ মহাসমাবেশ হবে নজিরবিহীন, ঐতিহাসিক। সারা দেশের গণতন্ত্রহারা বঞ্চিত মানুষ ঢাকার দিকে ছুটে আসার দৃঢ়প্রত্যয় নিয়েছে। যদিও সরকারি জুলুম-নির্যাতন-দমনপীড়নের কোনো কমতি নেই। অব্যাহত গণগ্রেফতারের মধ্যেও দীপ্ত অঙ্গীকারে তারা ঢাকার দিকে ছুটে আসছে। মহাসমাবেশ থেকে ঘোষিত পরবর্তী কর্মসূচি সফল করতে দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ২৮ অক্টোবরের পর নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করবেন।
তিনি আরও বলেন, দিগন্তরেখায় গণতন্ত্রের মুক্তি-সূর্য উঠতে শুরু করেছে। গ্রাম-গঞ্জ-শহর-বাজার-বন্দর সবখানেই এখন সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় বইছে। জনগণ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে। চলমান গণতান্ত্রিক সংগ্রামে জনগণের বিজয় হবেই। মানুষ তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করবেই।
জানা যায়, এ মুহূর্তে বিএনপির পুরোপুরি মনোযোগ মহাসমাবেশের দিকে। যে কোনো মূল্যে ঢাকায় বড় জমায়েত করতে চায় দলটি। এ লক্ষ্যে দলের শীর্ষ নেতৃত্বসহ সিনিয়র নেতারা জেলা ও মহানগরের বিভিন্ন পর্যায়ে সাংগঠনিক প্রস্তুতি সভা করছেন। এক্ষেত্রে ভয়ভীতি, গ্রেফতার, মামলা, হামলাকে তারা আমলে নিতে চাইছেন না।
নেতারা জানান, এবারের মহাসমাবেশের লক্ষ্য স্মরণকালে বিশাল জনসমাবেশ করা। এর লক্ষ্য রাজধানীতে একটি অহিংস গণ-অভ্যুত্থান পরিস্থিতির ক্ষেত্র তৈরি করা। একই সঙ্গে দলটির লক্ষ্য রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে ভূমিকা রাখা গণতান্ত্রিক বিশ্বে আস্থা অর্জন করা। এ মহাসমাবেশ থেকে লাগাতার কর্মসূচি দেওয়া হবে, যা হবে সরকার পতনের একদফা দাবিতে চূড়ান্ত কর্মসূচি।
বরিশাল, চট্টগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহসহ বিএনপির ১০ সাংগঠনিক বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে কেন্দ্রীয় নেতারা প্রতিটি সাংগঠনিক জেলা সফর করেছেন। প্রস্তুতি সভাসহ মতবিনিময় করেছেন। সেখানে কেন্দ্রীয় নেতারা তৃণমূলকে দু-তিন দিন আগেই ঢাকায় যেতে নির্দেশ দেন। এক্ষেত্রে নেতাকর্মীরা ঢাকায় কোথায় থাকবেন, তা নিশ্চিত করার জন্য জেলার নেতাদের সমন্বয় করতে বলা হয়েছে। বুধবার থেকেই ঢাকায় আসা শুরু করেছেন বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মহাসমাবেশের আগে নয়াপল্টন কিংবা গুলশান কার্যালয়সহ আশপাশের এলাকায় অহেতুক ঘোরাফেরা না করার জন্যও তাদের বলা হয়েছে।
বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, এক-দেড় মাস ধরে এমনিতেই নেতাকর্মীরা এলাকায় থাকতে পারেন না। মহাসমাবেশের কারণে আগে থেকে তারা ঢাকায় চলে গেছেন। অনেকে যাওয়ার পথে, প্রতিদিনই যাচ্ছেন। আমাদের কারও সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় নেতাকর্মীরা বসে নেই। তিনি আরও বলেন, মহাসমাবেশ উপলক্ষ্যে বিভাগীয় সব জেলার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আমরা বিভাগীয় সভা করেছি। বিভাগীয় কেন্দ্রীয় নেতা এবং জেলা-মহানগরের বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাদের নিয়ে ওই সভা হয়েছে। এছাড়া গত চার দিনে সব জেলায় প্রতিনিধি সভা হয়ে গেছে। আশা করছি, ময়মনসিংহ বিভাগের প্রতিটি জেলা থেকেই বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী মহাসমাবেশে অংশ নেবেন।
রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু বলেন, মহানগর ও জেলা থেকে ১০ হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। মহাসমাবেশের আগে বাস চলাচল বন্ধ করে দিতে পারে সরকার। তাই অনেকে আগেই ঢাকায় চলে গেছেন।
রাজবাড়ী জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল করিম পিন্টু বলেন, ইতোমধ্যে রাজবাড়ী থেকে অনেক নেতাকর্মী ঢাকায় চলে গেছেন। আগামী দিনে বিএনপি যে কমসূচি দেবে, তা আমরা সাহসিকতার সঙ্গে পালন করব।
কুমিল্লা উত্তর-দক্ষিণ, কুমিল্লা মহানগর, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা নিয়ে গঠিত বিএনপির কুমিল্লা সাংগঠনিক বিভাগ। মহাসমাবেশ উপলক্ষ্যে এ বিভাগের প্রতিটি সাংগঠনিক জেলায় কয়েক দফা বৈঠক করে হোমওয়ার্ক সম্পন্ন করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তারা জানান, এ বিভাগ থেকেও অন্তত ৪০ হাজার নেতাকর্মী মহাসমাবেশে উপস্থিত থাকবেন। তিন-চার দিন আগে থেকেই অনেক নেতাকর্মী ঢাকায় আত্মীয়স্বজনের বাসাবাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন। ওইদিন নেতাকর্মীদের খাবার এবং পানীয় সরবরাহ থেকে শুরু করে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য দায়িত্বশীলরা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করছেন।
কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এএফএম তারেক মুন্সি বলেন, তারুণ্যের অহংকার তারেক রহমান ডাক দিয়েছেন। মহাসমাবেশে লক্ষ্য লক্ষ্য নেতাকর্মী, সর্বস্তরের মানুষ ও শুভানুধ্যায়ী অংশগ্রহণ করবেন। এরই মাঝে দায়িত্বশীলরা ঢাকায় পৌঁছেছেন। বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোস্তাক মিয়া বলেন, এরই মধ্যে আমাদের হোমওয়ার্ক সম্পন্ন হয়েছে। কুমিল্লা বিভাগ থেকে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীদের শৃঙ্খলা রক্ষায় সাংগঠনিক টিম প্রস্তুত করা হয়েছে। বিশ্বাস করি, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন হবে।