নির্বাচনের আশানুরূপ অনুকূল পরিবেশ এখনও হয়নি ইসি আনিছুর রহমান

আগামী জাতীয় নির্বাচনের যাবতীয় প্রস্তুতিমূলক কাজ চললেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর নির্বাচনের প্রত্যাশিত অনুকূল পরিবেশ এখনও হয়ে উঠেনি বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ফলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। গণমাধ্যমের সম্পাদকদের বরাবর পাঠানো এক ধারণাপত্রে এই কথা উল্লেখ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এর আগে বুধবার (১৮ অক্টোবর) নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার আহ্বান জানিয়ে বলেন, শুধু আমরা কেন, পুরো দেশবাসী সমঝোতা চায়। দেশের মানুষ আশঙ্কার মধ্যে থাকতে চায় না। আমরাও আশা করি একটা রাজনৈতিক সমঝোতা হবে, যা দেশ ও জাতির জন্য ভালো হবে। আর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হলে নির্বাচন কমিশনও ভোট অনুষ্ঠানে নিঃশঙ্কচিত্তে এগিয়ে যেতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, ভোটের ভালো পরিবেশ সৃষ্টির জন্য নির্বাচন কমিশনের যেমন দায়িত্ব আছে, রাজনৈতিক দলগুলোরও আছে। কারণ, ভোটের মাঠে রাজনৈতিক দলগুলোই থাকবে। সেজন্য আমরা চাই দেশ ও জাতির কথা চিন্তা করে দলগুলো একটা সমঝোতার প্রক্রিয়ায় যাক। আমরা পেছনের দিকে যেতে চাই না। আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।
ইসি জানায়, আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ধারাবাহিকভাবে মতবিনিময় ও কর্মশালার আয়োজন করে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। তার অংশ হিসেবে এবার গণমাধ্যমের ৩৮ জন সম্পাদকের সঙ্গে বসছে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। আগামী ২৬ অক্টোবর বেলা ১১টায় নির্বাচন ভবনে ‘আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: গণমাধ্যমের ভূমিকা, জাতির প্রত্যাশা’ শীর্ষক এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার ছাড়াও ইসি সচিব ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত থাকবেন। ইতোমধ্যে সম্পাদকদের সেই কর্মশালার আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, এবারের আমন্ত্রণপত্রের সঙ্গে একটি ধারণাপত্রও সংযোজন করে নির্বাচন কমিশন। সেখানে আলোচনার বিশাল এক প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়। সেই ধারণাপত্রে বলা হয়েছে, ‘কমিশন আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ, ও শান্তিপূর্ণ করার বিষয়ে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এরপরও বিভিন্ন মহল থেকে নির্বাচন কমিশনের ওপর অনাস্থা প্রকাশ করা হচ্ছে। নির্বাচন প্রশ্নে সরকার ও কমিশনের বিষয়ে কতিপয় রাজনৈতিক দলের গণমাধ্যমে প্রচারিত অনাস্থা কাটিয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে জনগণের আস্থা অর্জনের প্রয়াস আমরা অব্যাহত রেখেছি। তবে অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য যে অনুকূল পরিবেশ প্রত্যাশা করা হয়েছিল সেটি এখনও হয়ে ওঠেনি। প্রত্যাশিত সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে মতভেদ নিরসন হয়নি। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধানতম দলগুলো স্ব-স্ব সিদ্ধান্ত ও অবস্থানে অনড়। রাজপথে মিছিল, জনসমাবেশ ও শক্তি প্রদর্শন করে স্ব-স্ব পক্ষে সমর্থন প্রদর্শনের চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু তাতে প্রত্যাশিত মীমাংসা বা সংকট নিরসন হচ্ছে বলে কমিশন মনে করে না।’
নির্বাচনকে গণতন্ত্রের প্রাণ ও বাহন উল্লেখ করে ধারণাপত্রে আরও বলা হয়, ‘নির্বাচন আয়োজনে যদি সংকট নিরবচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত থাকে তাহলে গণতন্ত্র বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।’