যে কারণে মার্কিন চাপ পাত্তা দিচ্ছে না সরকার

0
main_1697626869
Array

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের চাপ অব্যাহত রেখেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এবং মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তার বাংলাদেশের দুই দিনের সফর শেষে গত মঙ্গলবার ঢাকা ছেড়ে গেছেন। যাওয়ার আগে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রত্যাশার কথা অব্যাহত ভাবে বলে যাবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দুই দেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের শান্তিপূর্ণ উত্তরণের ওপর যুক্তরাষ্ট্র জোড় দিচ্ছে এমন কথাও বলেছেন আফরিন। ধারণা করা হচ্ছে নির্বাচনের আগে এটাই শেষ মার্কিন প্রতিনিধির সফর। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে আগামী নির্বাচন নিয়ে যতই ভয় দেখাচ্ছে বাংলাদেশ ততই সাহসী হয়ে উঠছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভয়কে এখন আর গুরুত্ব দিচ্ছে না। প্রথম প্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছোট খাটো পদক্ষেপ বা একজন ব্যক্তি ঢাকা এলেই হইচই পড়ে যেত, সরকারের মধ্যে নানা রকম প্রতিক্রিয়া উত্তেজনা এবং উদ্বেগ লক্ষ্য করা যেত। কিন্তু এখন সেই রকম পরিস্থিতি আর দেখা যাচ্ছে না। বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপকে সরকার একেবারেই উপেক্ষা করছে। সরকারের পক্ষ থেকে সরাসরি ভাবে বলে দেওয়া হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। তারা আমাদের নির্বাচন নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না এবং বাংলাদেশ তার মতো করে নির্বাচন করবে।

এখন পর্যন্ত মার্কিন প্রভাবে সরকার বা আওয়ামী লীগ তার এতটুকু অবস্থান পরিবর্তন করেছে বলে মনে করা হচ্ছে না। বরং দেখা যাচ্ছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব সরকারকে আরও সতর্ক করেছে এবং সজাগ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপকে সরকার কেন পাত্তা দিচ্ছে না। এর পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে;

১.মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগের প্রভাব অতিপত্তি নেই: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বিশ্ব রাজনীতিতে একক আধিপত্য ধরে রাখতে পারেনি। বরং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্ব এখন বিভক্ত হয়ে গেছে। কাজেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্ব খর্ব হয়ে গেছে। তাছাড়া ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখন মুসলিম বিশ্বে পুরোপুরি কোণঠাসা। এই যুদ্ধের প্রভাব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একক কর্তৃত্বকে বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ করেছে। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আগের মতো গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন নেই বলে মনে করছেন বর্তমান সরকার।

২. বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আগের মতো নির্ভরশীল নয়: অতীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সহায়তা না পেলে বাংলাদেশ চলতো না। এখন পরিস্থিতিটা তেমন নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবশ্যই বড় বিনিয়োগ বাজার, তবে সেটি তাদের স্বার্থে। কারণ বাংলাদেশ থেকে যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাজার গুটিয়ে ফেলে বা বাংলাদেশের পোশাক খাত থেকে যদি পণ্য গ্রহণ বন্ধ করে সেটিতে বাংলাদেশের চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এমনটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো কোনো অবস্থাতেই করতে দেবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কাজেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেবে বা সবকিছু বন্ধ করে দেবে এমন বিশ্ব পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এরকম পরিস্থিতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র করতে পারবে না বলেই সরকার মনে করছে।

৩. ভিসা নিষেধাজ্ঞা কোনো কার্যকর অস্ত্র নয়: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সেই ভিসা নিষেধাজ্ঞা তেমন কোনো কার্যকর অস্ত্র নয় বলেই সরকার মনে করছে। কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে, যার ফলে এটি বড় ধরনের কোনো প্রভাব সরকারের ওপর পড়বে না। এখান থেকে সরকার কোন চাপ অনুভব করছে না।

৪. অন্যান্য দেশগুলোর অভিজ্ঞতা: বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, নির্বাচন নিয়ে নানারকম হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেছে। কিন্তু সেগুলো মোটেও কার্যকর হয়নি। বরং দেখা গেছে যে কম্বোডিয়া, নাইজেরিয়া ইত্যাদি দেশগুলো নির্বাচনের পর ভালোমতোই ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

আর এই কারণেই বাংলাদেশ সরকার এখন মনে করছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপকে এত গুরুত্বের সঙ্গে দেখার কোনো কারণ নেই। নির্বাচন করে ফেললে স্বীকৃতি পাওয়া যাবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যতই চাপ দিক না কেন সরকার যদি শেষ পর্যন্ত একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারে এবং সেই নির্বাচনে যদি ৫০ শতাংশের কাছাকাছি ভোটার ভোট দান করে তাহলেই একটি অর্থবহ নির্বাচন হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাবে। এরকম অবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি বাংলাদেশের নির্বাচনকে নিয়ে প্রশ্ন তোলে তাহলে তারাই আন্তর্জাতিক বিশ্ব থেকে বাংলাদেশ ইস্যুতে একঘরে হয়ে যাবে। কাজেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে চাপ তা নিয়ে আতঙ্ক আস্তে আস্তে সরকারের মধ্যে থেকে কেটে যাচ্ছে।

About Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat