সরকারকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের আহ্বান, কিশোরগঞ্জে রোডমার্চের সভায় মঈন খান

0
Array

জনগণের ইচ্ছার প্রতি নতি স্বীকার করে সরকারকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। তিনি বলেছেন, জনগণের ইচ্ছার প্রতি নতি স্বীকার করে আপনারা চলে যান। ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পরে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পল্টন ময়দানে রাজপথে মিটিং করে ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন নাই, আমি নির্বাচিত হয়েছি, আমি পাঁচ বছর থাকবো। আজকে আওয়ামী লীগ সরকার সেই উদাহরণ থেকে শিখুক, জনগণের ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করুক। তারা স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দিক। একটা সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ উন্মুক্ত হয়ে যাক। বাংলাদেশের মানুষ তাদের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করুক। সরকার পতনের একদফা দাবিতে ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ অভিমুখে রোডমার্চ শেষে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। রোববার সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার লতিবাবাদ বালুর মাঠে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আমাদের এই আন্দোলন চালিয়ে যাবো। এই সরকারকে হটিয়ে দিয়ে এদেশের জনগণের সরকার আমরা সুপ্রতিষ্ঠিত করবো। তিনি বলেন, আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে সরকারের বক্তব্য শুনেছি, তারা বলেছে বেগম খালেদা জিয়াকে নাকি মুক্তি দেয়া যাবে না কারণ পৃথিবীর কোন দেশে নাকি এভাবে মুক্তি দেয়া হয় না। আজকে বাংলাদেশে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এক লক্ষ ১০ হাজার মামলা দেয়া হয়েছে। বিরোধীদলের নেতাকর্মী ৫০ লক্ষ আসামি করা হয়েছে। পৃথিবীর কোন দেশে এই উদাহরণ আছে? যদি আওয়ামী লীগ পৃথিবীর কোন দেশে নাই এরকম অপকর্ম করে থাকে, তাহলে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে কেন এই অপব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে? সরকার যে কথা বলে, সেটা কোন যুক্তির কথা নয়, ধাপ্পাবাজির কথা, সেটা মিথ্যাচার। ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, সরকার বলে, সংবিধানে নাকি নাই- এ জন্য তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে পারবে না। সংবিধানে তো মানুষের পাঁচটি মৌলিক অধিকার আছে। তাহলে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য রক্ষা করা আজকের সরকারের সংবিধানিক দায়িত্ব। সরকার যদি এত সংবিধান সংবিধান মানার জন্য পাগল হয়ে থাকে, তাহলে তারা কেন এই সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করছে না। কেন তারা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে? এটা সংবিধানের লংঘন।

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, সরকার বলে তারা সংবিধানের বাইরে কিছু করবে না। ১৯৯১ সালে বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের অধীনে একটি নির্বাচন হয়েছিল। সেই নির্বাচন হয়েছিল একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। সেই সংবিধানে কি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা লিখা ছিলো? তাহলে সেদিন কেন আজকের আওয়ামী লীগ সরকার সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। সেদিন যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা হালাল হয়ে থাকে আজকে কেন হারাম হয়ে গেলো? এই সরকারকে জনগণের শক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিতে হবে, তারা যে কাজটি করছে, এটি অন্যায়। এটা চলতে দেওয়া যেতে পারে না।

তিনি বলেন, পাকিস্তান আমলের ২২টি পরিবারের জায়গায় আজকের সরকার ২২০টি পরিবার সৃষ্টি করেছে। যারা বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ সম্পদ দখল করেছে। তারা বিদেশে লক্ষ-হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। তারা কানাডাতে বেগম পল্লী সৃষ্টি করেছে। তারা মালয়েশিয়া-দুবাইতে দ্বিতীয় হোম সৃষ্টি করেছে। আজকে বাংলাদেশের মানুষ এর প্রতিকার চায়।

ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, আজকে সরকার উন্নয়নের বড়াই করে। কোথায় উন্নয়ন। ১০০ কোটি টাকার প্রজেক্টকে তারা এক হাজার কোটি টাকার মেঘা প্রজেক্ট বানিয়ে লুটপাট করা হয়েছে। এক হাজার কোটি টাকার প্রজেক্টকে ১০ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট বানিয়ে সমস্ত দরিদ্র মানুষের রক্তচোষা অর্থ তারা লুটপাট করেছে, বিদেশে পাচার করেছে। তারা মেঘা উন্নয়নের নামে মেঘা দুর্নীতি করেছে।

বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলমের সভাপতিত্বে সমাপনী সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট ফজলুর রহমান, কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এবং বিএনপির কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত।

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ২০১৪ সালে ১৫৩ জন এমপি ভোট ছাড়াই এমপি হয়েছে। ২০১৮ সালে রাতেই ভোট হয়ে গেছে। এই সংসদ সঠিক সংসদ নয়। এই সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে। অবৈধ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। আমরা বলেছি, জনগণকে ক্ষমতা দেওয়া হোক। তাদের ভোট দেওয়ার অধিকার দেওয়া হোক। তারা ভোট দিয়ে যাকেই নির্বাচিত করবে, তারাই ক্ষমতায় বসবে।

এই সরকার বেগম খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তাকে ভয় পায় উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, কোন কারণে বেগম খালেদা জিয়ার কোন ক্ষতি হলে, কোটি মানুষের হৃদয়ে যে আগুন জ্বলবে, সে আগুনে এই সরকার পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট ফজলুর রহমান বলেন, শেখ হাসিনা আগামী জানুয়ারি মাসে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনা বুঝে নাই, জানুয়ারি আসার আগেই বিজয় দিবস এসে যাবে। রাজাকারের মতো তারা পালিয়ে যাবে।

কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলামের সঞ্চালনায় সভায় অতিথি ছিলেন সাবেক স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী সিরাজুল হক, ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট শাহ ওয়ারেছ আলী মামুন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য শেখ মুজিবুর রহমান ইকবাল ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি লায়লা বেগম।

এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আবদুল বারী ড্যানি, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্মসাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মো. ইসরাইল মিয়া, নাজমুল আলম ও আমিনুল ইসলাম আশফাক, জেলা যুবদলের সভাপতি খসরুজ্জামান শরীফ, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ সুমন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক আবু নাসের সুমন প্রমুখ।

ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ অভিমুখে রোডমার্চ ঘিরে জনসমুদ্রে পরিণত হয় কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার লতিবাবাদ বালুর মাঠ এলাকা। রোববার বিকাল ৩টা থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের পদভারে মুখর হতে থাকে কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশের মাঠটি। বেলা ৪টার মধ্যেই কানায় কানায় মাঠটি পূর্ণ হয়ে যায়। এরপরও বিভিন্ন যানবাহনে করে কিশোরগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী জেলাসমূহের বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা সভাস্থল অভিমুখে ভিড় জমান। এসময় নেতাকর্মীরা পার্শ্ববর্তী সড়ক ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন। এতে কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়কের কয়েক কিলোমিটার এলাকা নেতাকর্মীদের দখলে চলে যায়। ফলে সড়কটি বন্ধ হয়ে গেলে বিকল্প সড়কে যানবাহন চলাচল করে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রোডমার্চের গাড়ির বহর সভাস্থলে এসে পৌঁছায়। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় ময়মনসিংহের ত্রিশাল বগারবাজার থেকে উদ্বোধনী সমাবেশের পর রোডমার্চ শুরু হয়। ১১৪ কিলোমিটারের এই রোডমার্চে ময়মনসিংহের চুরখাই বাজার, সম্ভুগঞ্জ চায়না মোড়, ময়মনসিংহ উত্তর জেলা, ঈশ্বরগঞ্জ ও নান্দাইলে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেসব সমাবেশে নেতাকর্মীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়।

About Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat